Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শ্বেতপ্রদর বা লিউকোরিয়া

| প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০১ এএম

লিউকোরিয়া একটি ইংরেজি শব্দ যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে শ্বেতপ্রদর। আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন- সাদা স্রাব, প্রমেহ, মেহ, ধাতুভাঙা ইত্যাদি। এটি একটি উপসর্গ মাত্র, তেমন কোন মারাত্মক সমস্যা নয়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার ডিম্বনালী, জরায়ু ও যোনিপথ থেকে প্রতিনিয়তই কিছু পরিমাণ তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়ে থাকে। এই তরল পদার্থকেই বলা হয় সাদা স্রাব। এই সাদা স্রাব অধিক পরিমাণে হলেই তখন লিউকোরিয়া বলে।

শ্বেত প্রদর বা লিউকোরিয়ার কারণ : দুটি কারণে লিউকোরিয়া হয়ে থাকে। (১) ফিজিওলজিক্যাল বা সহজাত শরীর বৃত্তীয় পরিবর্তন। যেমন- জন্মগ্রহণের পর মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে দুই-তিন মাস বয়সী শিশুর লিউকোরিয়া হতে পারে। তাছাড়া যৌবনকালে হরমোনের কারণে এ স্রাব দেখা দিতে পারে। (২) প্যাথলজিক্যাল বা রোগজনিত জীবাণু দূষণে/ইনফেকশনের কারণে। যেমনÑ ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজিনালিস এবং ক্যানডিডা এলবিকাসন জীবাণুগুলো মুখ, গলা, বৃহদন্ত এবং যোনিপথে সক্রমণ ঘটায়। এরা ভেজা এবং গরমস্থানে অতি সহজেই আক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। এটি যৌনমিলনের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। শ্বেত প্রদর বা লিউকোরিয়া রোগকে অনেক ক্ষেত্রে লঘু যৌনরোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে এ স্রাব দেখা দিতে পারে। তাছাড়া মাসিক শুরুর কয়েকদিন আগে, ঋতুচক্রের মাঝামাঝি সময়ে, ডিম্বাণু বের হওয়ার সময়, গর্ভকালীন সময়ে, যৌন উত্তেজনায় এবং জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়া কালে এ স্রাব অধিক পরিমাণে দেখা দিতে পারে। অবার অনেক দিন ধরে রুগ্ন স্বাস্থ্য, অসুখী দাম্পত্যজীবন, কিডনি সমস্যা, ভিটামিনের অভাব, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রনের অভাব ছাড়াও নানাবিধ দুশ্চিন্তার কারণে শ্বেত প্রদর বা লিউকোরিয়া দেখা দিতে পারে।

লিউকোরিয়ার জটিলতা : শ্বেত প্রদর বা লিউকোরিয়া গোপনাঙ্গে এক ধরনের অস্বস্থিকর ভেজা অনুভূতির জন্ম দেয়। পরিধানের কাপড় অনেক সময় বাদামি রঙের দাগ সৃষ্টি করে। কখনো যোনির ওষ্ঠের চামড়া ছিড়ে যেতে পারে। অনেক সময় পা বেয়ে নিচে গড়াতে থাকে। যোনিপথে চুলকানি, তলপেটে ব্যাথা, ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া এবং সাথে জ্বালা-যন্ত্রণাও থাকতে পারে। সংক্রমণ হেতু বার বার শ্বেত প্রদর বা লিউকোরিয়া হলে বন্ধাত্বসহ সন্তান উৎপাদনে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।

লিউকোরিয়ার চিকিৎসা :সঠিক চিকিৎসায় এ রোগ নিরাময়ে ব্যাপক সফলতা রয়েছে। হোমিওতে লক্ষণানুসারে বিভিন্ন শক্তি ওষুধ বিভিন্ন মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমনÑ ক্যালকেরিয়া কার্ব, পালসেটিয়া, সিপিয়া, বোরাক্স, এলুমিনা, মার্কুরিয়াস, বেলেডোনা, আর্সেনিকাম, হাইড্রাসটিস, নাইট্রিক এসিড প্রভৃতি।
ওষুধ সেবনের পাশাপাশি এ রোগের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মানুবর্তিতা পালন করতে হবে। যেমনÑ অন্যান্য যৌন রোগের মতোই স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস করতে হবে, অথবা আঁটসাঁট আন্ডারওয়ার ব্যবহার না করা। পানি জাতীয় তরল পদার্থ যেমনÑ ড্যাটল বা স্যাভলন দিয়ে যোনিপথে ডুশ না দেয়া। সর্বোপরি চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করার অভ্যাস গড়ে তোলা। তাড়াতাড়ি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

মো. রেজাউল কবির
হোমিও কনসালটেন্ট
হোমিও কেয়ার, পিরোজপুর।
ফোন : ০১৭২৭৬৫০৪৭৩।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্বেতপ্রদর বা লিউকোরিয়া

আরও পড়ুন