টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত হলেও পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঠিকই জ্বলে উঠে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। গতকাল পার্থে এই পর্বে গ্রুপ-১ এর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় শ্রীলঙ্কাকে।

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৭ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় লঙ্কানরা। জবাবে মার্কাস স্টয়নিসের রেকর্ড হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেট হারিয়ে ২১ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতলো অজিরা। মার্কাস স্টয়নিস মাত্র ১৭ বলে ৪ চার ও ৫ ছয়ের মারে ফিফটি (৫৩) করেন। যা কি-না টি-টোয়েন্টিতে কোনো অজি ব্যাটারের দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত ১৮ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন স্টয়নিস। তার হার না মানা এই ইনিংসে ৪ চার ও ৬টি ছয়ের মার ছিল।

জয়ের জন্য লক্ষ্যটা ১৫৮। রান তাড়ায় নেমে শুরুতে চাপে পড়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এবং অ্যারন ফিঞ্চ ৪ ওভারে তুলেন ২৬ রান। পঞ্চম ওভারে বল হাতে নিয়েই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইনআপে আঘাত হানেন মাহিশ থিকশানা। শ্রীলঙ্কার এই স্পিনারের ঝোলানো ডেলিভারি ড্রাইভ করতে গিয়ে শানাকার হাতে ধরা পড়েন ডেভিড ওয়ার্নার। ফিরে যাওয়ার আগে তিনি ১০ বলে করেন ১১ রান। ওয়ার্নার আউট হওয়ার পর ফিঞ্চকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে এসে এক ওভার পর সুযোগ দিয়েছিলেন মিচেল মার্শ। তিনি ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বল আকাশে তুলে দিলে দৌড়ে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচটি তালুতে রাখতে পারেননি শানাকা। ৪ রানে জীবন পান মার্শ। পাওয়ার প্লে-তে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৩ রান করে অস্ট্রেলিয়া। ৭ ওভারে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৮। এরপরই হাত খুলেন মার্শ। হাসারাঙ্গার করা ইনিংসের অষ্টম ওভারে একটি করে চার-ছয়ের মারে ১৫ রান তুলে নেয় টিম অস্ট্রেলিয়া। পরের ওভারে ধনঞ্জয়া ১৩ রান দিয়ে ফেরান মার্শকে। একটি করে চার ও ছয়ের মারে ১৭ বলে ১৮ রান করেন মার্শ। দশম ওভারে হাসারাঙ্গাকে দুটি ছক্কা আর একটি চার হাঁকান ম্যাক্সওয়েল। ১৯ রান খরচ করেন লঙ্কান লেগি। ঠিক তখনই ম্যাচ হেলে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। ১০ ওভারে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৮৫ রান। ১২.২ ওভারে করুনারত্নের বলে আউট হন ম্যাক্সওয়েল। ফিরে যাওয়ার আগে তিনি ১২ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ২৩ রানের ছোটখাটো এক ঝড় তোলেন। তবে ম্যাক্সওয়েলকে আউট করে যেন বিপদে পড়ে যায় লঙ্কানরা। তার বিদায়ে ক্রিসে এসে আরো ভয়ঙ্কর রূপ দেখান মার্কাস স্টয়নিস। ইনিংসের ১৫তম ওভারে দুই ছয় আর এক চারে হাসারাঙ্গাকে ১৯ পেটানোর পরের ওভারে আরেক স্পিনার মাহিশ থিকশানার ওপর চড়াও হন ডানহাতি এই ব্যাটার। থিকশানাকে মারেন তিন ছক্কা। এতেই ম্যাচ হাতের মুঠোয় চলে আসে অজিদের। স্টয়নিসের দানবীয় এবং অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ১৬.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ১৫৮ রান তুলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া। ফিঞ্চ ৪২ বল খেলে ১ ছয়ের মারে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১৮ রানে এক উইকেট পেয়ে শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৭ রান তুলে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়নরা। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো ছিল না শ্রীলঙ্কার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ৬ রানের মাথায় প্যাট কামিন্সের বলে আউট হন কুশল মেন্ডিস (৫)। পাথুম নিশাঙ্কা এবং ধনঞ্জয়া ডি সিলভা দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়লে ম্যাচে ফিরে লঙ্কানরা। কিন্তু ২৩ বলে ২৬ করে ধনঞ্জয়া অ্যাশটন অ্যাগারের শিকার হলে ফের বিপদে পড়ে শ্রীলঙ্কা। ১৪ রানের ব্যবধানে ফিরে যান পাথুম নিশাঙ্কা (৪৫ বলে ৪০), ভানুকা রাজাপাকসে (৫ বলে ৭) এবং অধিনায়ক দাসুন শানাকা (৫ বলে ৩)। ১১১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ১২০ রানে শ্রীলঙ্কা হারায় ষষ্ঠ উইকেট। সেখান থেকে চারিথ আসালাঙ্কা ও চামিকা করুনারত্নের ১৫ বলে ৩৭ রানের জুটি গড়ে দলকে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ এনে দেন। আসালাঙ্কা ২৫ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে। করুনারত্নের ৭ বলে দুই চারের মারে অপরাজিত ১৪ রান করেন। ৫ রানে ১ উইকেট পান ম্যাক্সওয়েল। ম্যাচ সেরা হন মার্কাস স্টয়নিস।

আজকের খেলা
ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড, সকাল ১০টা
আফগানিস্তান-নিউজিল্যান্ড, দুপুর ২টা