নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
হোবার্টের আকাশ কালো মেঘে ঢাকা ছিল সকাল থেকেই। বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডের স্বল্প রানের পুঁজিটা মাঠের পরিবেশকেও যেন গুমোট করে রেখেছিল। তবে প্রথম দুই বলেই তাসকিন আহমেদ ফিরিয়ে দিলেন নেদারল্যান্ডসের ওপেনার বিক্রমজিৎ সিং ও তিন নাম্বারে নামা বাস ডি লিডিকে। কি আশ্চর্য! তাতে মুহূর্তেই যেন বদলে গেল গোটা বেলেরিভ ওভালের হালচাল। ক্রিকেটার ও গ্যালারির দর্শক, দুই জায়গারই শরীরী ভাষা গেল বদলে। তাসকিন শুরুটা যেভাবে করেছিলেন, শেষটাতেও ঠিক সেভাবে আঁকলেন তুলির ছোঁয়ায়। একই সঙ্গে বাকি পেসার ও ফিল্ডারদের দারুণ পারফরম্যান্সে, বাংলাদেশ দল ১৪৪ রানের ছোট সংগ্রহটাকেও রক্ষা করে ফেলল।
ডাচদের বিপক্ষে এমন জয় মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়। তবে নিঃসন্দেহে বহুকাক্সিক্ষত। সাম্প্রতিক সময়ে কুড়ি ওভারের সংস্করণে টাইগারদের মাঠের ফলাফলের ভিত্তিতে বলা যায়, এই জয় চরম রুদ্রতাপের পর, এক পসলা স্বস্তির বৃষ্টির মতো। পরিসংখ্যানের হিসেবে তা আরও গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। বিশ্বকাপের মূল পর্বে পরের ১৫ বছর আর কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি টাইগাররা। অবশেষে ডাচদের ৯ রানে হারিয়ে কাটল সেই জয়ক্ষরা। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও তাই আবেগ না আটকে ওকেপটে বললেন, ‘হ্যাঁ, একটি জয় পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০০৭ থেকে আমি সব বিশ্বকাপ খেলেছি। কিন্তু জয় পাইনি। এটি আমাদের মাথায় ছিল।’
তাসকিনের সেই ধাক্কার পর ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ১ বলের ব্যবধানে, নিজেদের ভুলে রান আউটে কাটা পড়লেন দুই ব্যাটসম্যান ম্যাক্স ওদডাউড এবং টম কুপার। ১৫ রানে ৪ উইকেট হারানো ডাচদের জন্য তখন ১৪৫ রানের লক্ষ্যটা মনে হচ্ছিল তাসমান সাগরের মতো বিশাল। কলিন অ্যাকারমান ও অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস মিলে সেখান থেকে প্রাথমিক বিপর্যয় সামলান। তবে এই জুটির ৪৮ বলে ৪৪ রান ডাচদের মোটেই জয়ের কক্ষপথে রাখতে পারেনি। তবে লড়াই করে যান আকারম্যান। এই ডানহাতি ব্যাটার ১৬ রানের সময় ইয়াসির আলি হাতে জীবন পাওয়ার পরই দেখিয়ে যান সাবলীল ব্যাটিংশৈলি।
আকারম্যান বড় কোনো বিপদ ঘটানোর আগেই তাসকিনের আবির্ভাব। দেশসেরা এ পেসার দ্বিতীয় স্পেলের সেই এক ওভারে আরও দুটি উইকেট নিয়ে ডাচদের সর্বশেষ আশাটুকু গুঁড়িয়ে দেন। সেই ওভারেই বিদায় ঘণ্টা বাজে ৪৮ বলে ৬২ রান করা আকারম্যানের। তাতে তাসকিনের পূর্ণ হয় চার উইকেট এবং এই সংস্করণের সেরা বলিং ফিগার (৪-২৫-৪)। ১০৫ রানে ৯ উইকেট হারানো নেদারল্যান্ডসের হারের ব্যবধান বড় হতে দেননি পল মেকেরেন। এই ডাচ সৌমের করা ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে হাকান বিশাল ছক্কা। তাতে ডাচদের জেতার জন্য সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ ২ বলে ১২ রান। তবে ইনিংসের শেষ বলে লিটনের হাতে মিড উইকেটে ক্যাচ দিলে ১৩৫ রানে থামে ডাচদের ইনিংস। হাসান মাহমুদ মাত্র ১৫ রান খরচায় নেন ২টি উইকেট। সাকিবের শিকার ১ উইকেট। মস্তাফিজুর রহমান কোনো উইকেট না পেলেও মাত্র ২০ রান দিয়ে জানান দিচ্ছেন ফর্মে ফেরার বার্তা।
টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকারের দুই চার। আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন চতুর্থ ওভারে পর পর দুই বলে চার হাঁকিয়ে ইতিবাচক শুরুই দিয়েছিলেন। এরপর দুই ওপেনারই ফিরে যান পর পর দুই ওভারে দুই নতুন বোলারের প্রথম বলে। সৌম্য খেলেন সমান সংখ্যক বলে ১৪ রানের ইনিংস। আর নাজমুলের ব্যাট থেকে আসে ২০ বলে ২৫ রান। এদিকে সর্বশেষ ৪ বছর ধরে দেশের সফলতম ওপেনার লিটকে ইম্পেক্ট ও ইন্টেন্টের দোহায় দিয়ে খেলান হচ্ছে ৩ নাম্বারে। টিম বা ব্যাটসম্যান, কারো জন্যই তা সুফল আনতে পারছে না। তেমনটাই হলো গতকাল। লিটন ইনিংস বর করতে পারলেন না, তাকে অনুসরণ করলেন কাপ্তানও।
ইয়াসির আলী যখন বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেছেন তখন দলীয় রান ৭৬। এক অজানা তাড়াহুড়ায় ১১তম ওভার পর্যন্ত কেবল স্নায়ুচাপে ভুগে গেল টাইগার ব্যাটাররা। ডাচদের নির্বিষ বলিংকে তখন মনে হচ্ছিল দারুণ এক ধাঁধা। এরপর আফিফ হোসেন করেন ২৭ বলে ২টি করে চার ও ছক্কার মারে ৩৮ রান। অন্যদিকে ৮ নাম্বারে নামা মোসাদ্দেক হোসেন ১২ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় হাঁকিয়ে করেন হার না মানা ২০ রান। এই দুটি ইনিংস না আসলে, বাংলাদেশের পুঁজির চেহারা কী রকম দাঁড়াত, তা কল্পনা করলে গা শিউড়ে ওঠে। অনেক চড়াই-উৎরাই শেষে, সাকিব বাহিনীর সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৪৪। মেকেরেন ও ডি লেডে ২টি করে উইকেট পান ডাচদের হয়ে। আর প্রিঙ্গল, শারিজ, ফন বিক ও ক্লাসেনের শিকার ১টি করে উইকেট।
মাঝে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি জয় বাদ দিলে টি-টোয়েন্টিতে জয় পাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য আকাশের চাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ক্রাইস্টচার্চের ত্রিদেশীয় সিরিজের পর প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও বাজে ভাবে হার, টাইগারদের আত্মবিশ্বাস ঠেকিয়েছিল তলানিতে। সর্বশেষ ১৬ ম্যাচে ছিল মাত্র ৪টি জয়। সেখান থেকে ঘুরি দাঁড়িয়ে এই জয়। গতকাল নেদারল্যান্ডসের প্রতিটি উইকেট পতনেই বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডাররা যেরকম আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল, তাতে মনে হচ্ছিল প্রতিপক্ষ ক্রিকেটের পরাশক্তি কেউ। সাকিব অবশ্য কোনো কূটনীতির আশ্র্য না নিয়ে সরাসরি পেসারদের প্রশংসায় ভাসালেন, ‘আমরা জানতাম এই উইকেটে আমাদের বোলিং আক্রমণের জন্য ১৫০ থেকে ১৫৫ রান যথেষ্ট। সেদিক থেকে আমরা ১০ রান কম করেছি। তবে আমাদের পেসাররা যেভাবে বোলিং করেছে, দুর্দান্ত।’
গতকাল কর্মদিবসেও বেলেরিভ ওভালে হাজির হয়েছিল হাজারখানেক প্রবাসী বাংলাদেশি। মেলবোর্ন বা সিডনির তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার এই দিকটায় বাংলাদেশিদের বাস অনেক কম। গতকাল সিডনি থেকে বাংলাদেশ দলকে উৎসাহ দিতে এসেছে ২৫ জনের একটা দল। আর আজ বাংলাদেশ বিমান ধরবে সিডনির। বৃহস্পতিবার সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা পরীক্ষা! ম্যাচে বাংলাদেশ কি ফলাফল করবে, সে প্রশ্ন না হয় সময়ের কাছে ছেড়ে দেয়া যাক। তবে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের গ্যালারিকে যে, প্রবাসী দর্শকরা মিরপুর বানিয়ে ছাড়বেন, সেই ব্যাপারটা নিশ্চিত।
আজকের খেলা
অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা, বিকাল ৫টা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।