Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হামলা, বাধা উপেক্ষা করে আহত অবস্থায়ও নেতাকর্মীরা সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১:০২ পিএম | আপডেট : ১:৩২ পিএম, ২২ অক্টোবর, ২০২২

যশোরের কেশবপুর উপজেলা থেকে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে খুলনার সোনাডাঙ্গায় পৌঁছান শহিদুল ইসলাম। একটি পিকআপে শহিদুলরা অন্তত ৬০ জন ছিলেন। শহিদুল বলেন, সোনাডাঙ্গা থানার সামনে পৌঁছানো মাত্র এলোপাতাড়ি হামলার শিকার হন সবাই। শহিদুলের হাতে ও পায়ে গুরুতর আঘাত রয়েছে। মাথা ফেটে গেছে সঙ্গে থাকা জিয়াউল হাসানেরও।

রাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জিয়াউল হোসেন বলেন, ‘রাত অনুমান ১টা হবে। গাড়ি সোনাডাঙ্গা থানার সামনে আসতেই দেখলাম কিছু লোক দৌড়ে এল। বলল, এই গাড়ি দাঁড়ান। এরপর কোনো কথাবার্তা নেই, লাঠিসোঁটা নিয়ে মাইর।’

সোনাডাঙ্গা যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শহরে ঢোকার অন্যতম প্রবেশপথ। গতকাল শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত সোনাডাঙ্গাসহ খুলনায় ঢোকার বিভিন্ন পয়েন্টে এভাবেই বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার কয়েকজন বলেছেন এসব কথা। তবে পুলিশ বলছে তাঁরা এ রকম কোনোকিছু জানেন না।

আজ ভোরে আহতদের অনেককে দেখা গেছে খুলনা সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির সমাবেশস্থলের আশপাশে। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের ফেরিঘাট মোড়ে খুলনা বাস মোটর বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ের পাশে দেখা হয় শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। রাস্তায় ফুটপাত ঘেঁষে একটি প্লাস্টিকের বিছানার ওপর বসে আছেন। রাতে ফুটপাতেই ঘুমিয়েছেন। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। তখনো ডান হাতের কনুই থেকে রক্ত ঝরছে। ডান পায়ের ঊরু থেঁতলে গেছে লাঠির আঘাতে। পাশে বসে আছেন জিয়াউল হোসেন। মাথায় রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ নিয়ে তিনি রাত কাটিয়েছেন ফুটপাতে। তাঁর সামনে দেখা গেল পলিথিনে মোড়ানো কিছু ওষুধ।

জিয়াউল হোসেন ও শহিদুল ইসলাম দুজনের বয়স ষাটোর্ধ্ব। বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি। দুজনেই কৃষিকাজ করেন। বিএনপি করেন। সমাবেশে যোগ দিতে অনেকের সঙ্গে খুলনায় এসে রাতে এই বিপদে পড়েছেন।

শহিদুল ইসলাম বলেন, মারপিট করতে করতে হামলাকারীরা তাঁর পকেট থেকে ১০০ টাকা ও মোবাইল ফোনটি নিয়ে গেছে। জিয়াউল হোসেন বলেন, তাঁর পকেট থেকে ৭০০ টাকা কেড়ে নিয়েছে। পাশেই বসে আছেন একই এলাকার বাসিন্দা মাজিদ সরদার। তিনি মার খাননি। তবে তাঁর পকেট থেকে ৫০০ টাকা ও মোবাইল ফোনটি হামলাকারীরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

ফেরিঘাট মোড়ের অদূরেই আপার যশোর রোডের ফুটপাতে লাল জামা গায়ে বসে আছেন একজন। মাথায় রক্তভেজা ব্যান্ডেজ। কাছে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর পরনের লাল জামার কলার, কাঁধে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ। কথা বলে জানা গেল, তাঁর নাম আক্তারুজ্জামান সুমন। তিনি যশোর জেলা ছাত্রদলের সদস্য। রাত আড়াইটার দিকে সোনাডাঙ্গা এলাকায় তাদের বহনকারী ট্রাকের ওপর হামলা চালায় অন্তত ৩০-৪০ যুবক। সবার হাতে হকিস্টিক, লোহার রড, কাঠ ও বাঁশের লাঠি ছিল। হামলায় সুমনসহ অন্তত ৮ থেকে ১০ জন আহত হয়।

হামলার ব্যাপারে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ‘আমার কাছে এমন কেউ আসেওনি, আমি জানিও না। আমি তো রাত দেড়টা - দুইটা পর্যন্ত বাইরে ছিলাম, কেউতো বলেওনি।’

আজ সকালে সোনালী ব্যাক চত্বরে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাঠপর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। অনেকে রাস্তায়-ফুটপাতে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছেন, আবার অনেকে দাঁড়িয়ে, কেউ বা বসে বসে বক্তৃতা শুনছেন। সূর্যের আলো ছড়াতেই কেউবা আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠছেন।

যশোর রোডের ফুটপাতে ঘুমান কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসা একটি দল। গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় তাঁরা সমাবেশস্থলে পৌঁছান। প্রত্যেকে সঙ্গে শুকনো খাবার নিয়ে এসেছিলেন বলে জানান। কুমারখালীর যুদবয়রা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আল আমিন। তিনি বলেন, শহরে ঢোকার সময় তাঁরা হামলার শিকার না হলেও মেইল ট্রেনে আসার সময় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে হামলার শিকার হন।

বাগেরহাটের রামপাল থানার তালতলিয়া গ্রাম থেকে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী গোলাম আজম। বললেন, তাঁরা ছয়টি বড় পিকআপে একসঙ্গে ৪৫০ জন এসেছেন। রাস্তায় রূপসা সেতুর টোলে এবং কাটাখালী এবং খুলনার জিরো পয়েন্টে বাধা পান। এর মধ্যে কাটাখালীতে লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন। তাঁদের নগরের রাইনা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান গোলাম আজম।

আশপাশের জেলা ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অনেকে হোটেল, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের বাসা-বাড়িতে উঠলেও বড় একটি অংশ রাত কাটায় সমাবেশস্থলে। নগরের ফেরিঘাট মোড়ে রাত কাটায় জেলা ছাত্রদলের একটি অংশ।

খুলনা মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাজী আসিফুর রহমান ও সিটি কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রকিব হাসান বলেন, তাদের একটি দল সমাবেশ মঞ্চের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন। আবার শহরের কোথাও আগন্তুকদের ওপর হামলার খবর পেলে তাদের উদ্ধারেও তৎপর ছিলেন ছাত্রদল, যুবদলের একটি অংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ