Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তীব্র যানজটে স্থবির চট্টগ্রাম

সড়ক ফুটপাত বেদখল অবৈধ পার্কিং যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি

| প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : অসহনীয় তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়িয়ে  যানজট বিস্তৃত হচ্ছে মহানগরীর অলিগলি পর্যন্ত। সকালে অফিস শুরু সময়ে আর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কোনো কোনো সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকা পড়ছে। যানজটের কবলে পড়ে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
রাস্তা-ফুটপাত বেদখল, অবৈধ পাকিং, ফ্লাইওভার নির্মাণ, ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপনসহ যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি, পর্যাপ্ত ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজের অভাব, যানবাহন চলাচলে চরম বিশৃঙ্খলার কারণে নগরীর সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে।
মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার ক্রমেই অবনতি ঘটছে। গত কয়েক বছরে নগরীতে তিনটি ফ্লাইওভার ও একটি ওভারপাস চালু হয়েছে। বেশ কয়েকটি সড়ক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। চালু হয়েছে মেরিনার্স সড়কসহ কয়েকটি নতুন সড়ক। তবে এসব উন্নয়নের সুফল মিলছে না।
মহানগরীকে যানজট মুক্ত করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেয়া হলেও এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এতে করে দিনে দিনে তীব্র যানজট গ্রাস করছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরীকে। মহানগরীতে লোকসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যাও।
চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভারী যানবাহনের সংখ্যা। তবে সে অনুপাতে সড়ক অবকাঠামো বাড়ছে না। এতে করে যানজট তীব্রতর হচ্ছে। গণপরিবহনে বড় গাড়ির তুলনায় ছোট যানবাহন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। আবার অবৈধ রিকশা আর ব্যাটারিচালিত অটো-রিকশার জোয়ার নগরজুড়ে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে যানজট পরিস্থিতি রাজধানী ঢাকাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। মহানগরীর প্রধান সড়কের লালখান বাজার ইস্পাহানী মোড় থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। এই এলাকার সড়কের মাঝখানের অংশ ঘেরাও করে চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণ। দুই পাশে সরু অংশে যানবাহন চলছে। ওই এলাকাকে ঘিরে মহানগরীর একাংশে যানজট এখন স্থায়ীরূপ নিয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই এলাকায় তীব্র যানজটে আটকা পড়ছে যানবাহন। এর প্রভাবে জাকির হোসেন সড়ক, বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক, মুরাদপুর, বহদ্দাহারহাট থেকে শুরু করে চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, এম এম আলী রোড পর্যন্ত তীব্র যানজট হচ্ছে।
মহানগরীর প্রতিটি প্রবেশ পথে চরম বিশৃঙ্খলা। কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উত্তর প্রান্তে রাস্তার উপর গড়ে উঠেছে অবৈধ বাস, টেম্পু ও অটো-রিকশার স্ট্যান্ড। সড়কে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এতে করে নগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় যানবাহনগুলোকে তীব্র যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। একই অবস্থা নগরীর সিটি গেইট, অক্সিজেন ও কালুঘাট সেতু এলাকায়ও।
মহানগরীর প্রধান সড়কের আগ্রাবাদ অংশ থেকে শুরু করে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপনের কাছ চলছে। রাস্তার মাঝ বরাবর বন্ধ করে চলে পাইপ বসানোর কাজ। এতে করে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। এর প্রভাবে সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে।
নতুন পাইপ লাইন স্থাপনের পাশাপাশি চলছে পুরাতন পাইপ লাইনে মেরামত ও সংস্কার। চট্টগ্রাম ওয়াসার এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে দিনে ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর ওয়াসার অর্ধশত বছরের পুরাতন পাইপ লাইনে শত শত লিকেজ দেখা দিয়েছে। এসব লিকেজ সারাতে সড়কে চলছে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি। এই কারণেও যানজট হচ্ছে।
মহানগরীর ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কের গুপ্তখাল ও সাইলোজেটি এলাকায় দুটি পুরাতন ব্রিজ ভেঙে নতুন ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে। ওই এলাকায় বেইলি ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এই কারণে সড়কে ওই অংশে তীব্র যানজট হচ্ছে। নগরীর স্টিল মিল থেকে শুরু করে সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় সড়কের একাংশে সংস্কার কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই কজের জন্য ওই এলাকায়ও নিত্য যানজট হচ্ছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে নেই স্থায়ী কোনো বাস ও ট্রাক টার্মিনাল। আন্ত:জেলার বাসের জন্য কয়েকটি অস্থায়ী টার্মিনাল থাকলেও নগরীতে চলাচলকারি গণপরিবহনের জন্য নেই কোন টার্মিনাল। যেখানে সেখানে এসব পরিবহন পাকিং করা হচ্ছে। আমদানি-রফতানি পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন নগরীতে হাজার হাজার ভারী যানবাহন আসছে। এসব যানবাহনের জন্যও নগরীতে নেই কোন টার্মিনাল। সড়ক দখল করে এসব যানবাহন রাখা হচ্ছে।
ব্যস্ততম সড়কের পাশে দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার। এসব কাউন্টারের সামনে থেকে ছেড়ে যাচ্ছে বাস। ফলে এসব এলাকায় যানজট হচ্ছে। মহানগরীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে নেই পার্কিং সুবিধা। সড়কের দুইপাশ দখল করে শত শত গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, শেখ মুজিব রোড, জুবিলী রোড, স্টেশন রোড, জাকির হোসেন রোড, সিডিএ এভিনিউ এলাকায় রাস্তার দুইপাশে অবৈধ পার্কিং। এ কারণে ব্যস্ততম এসব সড়কগুলোতে তীব্র যানজট হচ্ছে। দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জে ভারী যানবাহনের চাপ। তার উপর ব্যক্তিগত যানবাহন ও রিকশা ঠেলাগাড়ির কারণে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
মহানগরীতে বন্দর এলাকা ছাড়া দিনের বেলায় সড়কে ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনে যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা করছে। এতে করে প্রায় প্রতিটি মোড়ে যানজট হচ্ছে। ফুটপাত, সড়ক দখল করে হাটবাজার বসানো হয়েছে। কোথাও আবার নির্মাণ সামগ্রী রেখে রাস্তা দখল করা হয়েছে। ব্যস্ততম সড়কের দু’পাশে সারি সারি ভারী যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। এসব এলাকায় তীব্র যানজট হচ্ছে। নগরীতে পর্যাপ্ত ফুটপাত নেই, নেই পর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রিজ ও জেবরা ক্রসিং। পথচারীরা দলবেধে রাস্তা পার হচ্ছে। এ কারণে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। ডিজিটাল যুগে এসেও নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে হাতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ