বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লক্ষ্মীপুরের পৃথক দুই হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে ১ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৯ অক্টোবর) জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কমলনগরে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের টি বয় মাকছুদুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় মোবারক হোসেন, মানিক হোসেন, মাহমুদুল হাসান হিরু, আরাফাত আরেফিন ও বাবুল হোসেনসহ ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলার আসামি মাহমুদুল হাসান হিরু পলাতক রয়েছে। বাকি ৪ জন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক হিরু হাজিরহাট ইউনিয়নের চর জাঙ্গালিয়া গ্রামে মৃত মহসিন মাষ্টারের ছেলে।
অপর মামলায় স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যার দায়ে দেলোয়ার হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। রায়ের সময় দেলোয়ারও আদালতে উপস্থিত ছিল।দেলোয়ার সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের পুকুরদিয়া গুচ্ছগ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে।
এজাহার সূত্র জানায়, কমলনগরের হিরুর মা রেবেকা বেগমের সঙ্গে প্রায় ৯ মাস ভিকটিম মাকছুদের পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে হিরু অন্যান্য আসামিদের নিয়ে মাকছুদকে হত্যা পরিকল্পনা করে। মাকছুদ চরলরেঞ্চ বাজারের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের টি বয় ও চরলরেঞ্চ গ্রামের এনায়েত উল্যার ছেলে।
মাকছুদ বাজারের নৈশ প্রহরীর কাজও করতেন। ২০১৬ সালের ২৮ মে রাত স্থানীয় সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে একত্রিত হয়ে মাকছুদকে মারার পরিকল্পনা করে আসামিরা। এতে ৩০ মে রাতে মাকছুদ বাজারের সরকারি দিঘীর দক্ষিণ পাড়ে বাথরুমে আসে। সেখান আগ থেকে হিরুসহ আসামিরা ওঁৎ পেতে ছিল। মাকছুদ আসা মাত্রই লাঠি দিয়ে পেছন থেকে তার মাথায় হিরু আঘাত করে। এতে তিনি মাটিতে লুটে পড়ে। পরে অন্যান্য আসামিরা তার হাত পা চেপে ধরে। এসময় হিরুসহ আসামিরা রশি দিয়ে তার গলায় প্যাঁচ দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে আসামিরা তার (মাকছুদ) গোপন অঙ্গ কেটে ফেলার জন্য তাকে উলঙ্গ করে। পরে গোপন অঙ্গ না কেটেই স্থানীয় একটি বাথরুমের ট্যাংকির ভেতর তার মরদেহ ফেলে দেয় আসামিরা। পরে মাকছুদকে খুঁজে না পেয়ে তার ভাই বেলাল হোসেন কমলনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ৫ জুন সকালে খবর পেয়ে স্থানীয় তহশিলদার বাড়ির বাথরুমের টাংকির কাছে মাকছুদের কাপড়ছোপড় উদ্ধার করে তার ভাই। পরদিন সকালে পুলিশ ওই টাংকি থেকে মাকছুদের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় বেলাল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪-৫ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কমলনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সায়েদুর রহমান ভূঁইয়া আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলার প্রথম আসামি শরীফ মারা গেছেন। এজন্য অপর ৫ আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেয়।
অপরদিকে মা রওশন আক্তারকে দেলোয়ারের ভরণপোশন দেওয়া পছন্দ করতো না স্ত্রী শামছুন নাহার। এনিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হতো। ২০১৫ সালের ১২ জুন স্থানীয় পুকুর দিয়া বাজারে দেলোয়ার তার মাকে দেখতে পায়। এতে মাকে তিনি দুই কেজি আম কিনে দেয়। খবর পেয়ে নাহার বাজারে এসে জনসম্মুখে দেলোয়ারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। পরে বাড়িতে এসেও নাহার তাকে গালমন্দ করে। ওই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়েও তাকে গলমন্দ করা হয়। এতে দেলোয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমের মধ্যেই নাহারকে গলাটিপি শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁছিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা সাজায় দেলোয়ার।
এ ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই কাউছার উদ্দিন চৌধুরী বাদী হয়ে মামলার দায়ের করেন। পরে তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুষ্প বরণ চাকমা একই বছর ১৫ ডিসেম্বর দেলোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।