Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিদানের ২ যুগ পর বেনজেমা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

‘জানিনা বয়স হলে কেন প্রেমে এতো পাক ধরে’ কথাটা কবির সুমনের। তবে আধুনিক বাংলা গানের এই দিকপালকে যে একদম ভুল প্রমাণ করে দিলেন করিম বেনজেমা। বয়স হওয়ার পরও গোল করার প্রেম যে, একটুও কমেনি এই ফরাসি তারকার। গত মৌসুমটা স্পপ্নের মত কাটিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের এই গোল মেশিন। তখনই বেশিরভাগ মানুষের অনুমান ছিল যে, এই ৩৪ বছর বয়সী স্ট্রাইকারের হাতেই উঠতে যাচ্ছে এবারের ব্যালন ডি’অর। পরশু রাতে প্যারিসে এক জমকালো আয়োজনের সেই অনুমানকে বাস্তব করে, রবার্ট লোভান্দোভস্কি, কেভিন ডি ব্রæইনা ও সাদিও মানের মতো তারকাদের পেছনে ফেলে ব্যালন ডি’অর জিতলেন বেনজেমা। ফলে দীর্ঘ ২ যুগ পরে ফরাসি কোন ফুটবলারের হাতে উঠলো দেশটির সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’- এর পুরস্কার, ব্যালন ডি’অর। দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৭টি ব্যালন ডি’অর নিয়ে আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল ও জার্মানির পাশে এখন ফ্রান্সের নামও উচ্চারিত হবে।
বেনজেমা গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সঙ্গে, দলকে শিরোপা জেতাতে মুখ্য ভ‚মিকা রাখেন। তার স্বীকৃতি স্বরূপই ব্যালন ডি’অর হাতে হাসলেন তিনি। ফ্রান্সের পঞ্চম ফুটবলার হিসেবে এই পুরষ্কার জিতেছেন বেনজেমা। জেনেদিন জিদানের ১৯৯৮ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ের দীর্ঘদিন পর, কোনো ফ্রেঞ্চ ফুটবলার এই পুরষ্কার জেতায় স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ¡সিত দেশটির জনগন। সেটিও পেলেন সেই জিজুর হাত থেকেই! বেনজেমাও পুরষ্কারটি উৎসর্গ করলেন ফ্রান্সের ফুটবলপ্রেমীদের, ‘আমি কাউকে খুশি করার জন্য ফুটবল খেলি না। আমি ফুটবল দিয়ে মানুষের মনে আবেগ জাগানোর চেষ্টা করি। আমি জানি, মানুষ আমাকে নিয়ে এখন গর্ব করছে। সে জন্যই আমি বলেছি, এটা জনতার ব্যালন ডি’অর।’
ব্যালন ডি’অরকে লম্বা সময় নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছিলেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০০৮ থেকে ২০১৭-এই সময়টায় আর কাউকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেননি দুজন। ২০১৮ সালে এই দুই মহাতারকার বাইরে প্রথমবারের মতো পুরষ্কারটি জেতেন লুকা মদ্রিচ। ২০১৯ সালে আবারও পুরষ্কারের মঞ্চে মেসির প্রত্যাবর্তন ঘটে। ২০২০ সালে কোভিডের কারণে ‘ফ্রান্স ফুটবল’ পুরষ্কার বাতিল করে। তবে পরের বছর কোপা আমেরিকা জিতে ব্যালন ডি-অরে রাজত্ব ধরে রাখেন মেসি। ২০২২ সালে এসে মেসি মনোনায়নই পেলেন না। আর ক্লাবের ব্যর্থতার কারণে রোনালদো হলেন শিরোপা জেতার দৌড়ে ২০তম।
অন্যদিকে এবছর দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স- কোনো নিরিখেই বেনজেমাকে বাদ দেওয়ার উপায় ছিল না। রিয়ালের লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে দারুণ অবদান ছিল এই স্ট্রাইকারের। সব মিলিয়ে ৪৬ ম্যাচে গোল করেছিলেন ৪৪টি, আর এসিস্ট ছিল ১৫টি। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মহাগুরুত্বপূর্ণ আসরে গোল পাওয়ার আনন্দে ভেসেছিলেন ১৫ বার। মৌসুমে অনেকগুলো ম্যাচের ভাগ্য একাই বদলে দিয়েছিলেন বেনজেমা। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে একাধিক ম্যাচে একক প্রভাবে রিয়ালকে জিতিয়েছিলেন এই ফরাসি ফুটবলার। পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়ে জিতেছিলেন উয়েফা নেশনস লিগের ট্রফিও।
এমন পারফরম্যান্সের পর বেনজেমার ব্যালন ডি’অর না জিতলে যে এই পুরষ্কারের উপরই ফুটবলপ্রেমীদের মন উঠে যেত। ১৯৫৬ সালে স্ট্যানলি ম্যাথিউসের পর বেশি বয়সী (৩৪) খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতার গৌরব অর্জন করলেন এই স্ট্রাইকার। এই ফরাসি স্ট্রাইকার এমন বয়সে এসে এই পুরষ্কার জিতলেন, যখন ফুটবলাররা বুটজোড়া উঠিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এই ব্যাপারে বেনজেমা জানান, ‘বয়স আমার কাছে ¯্রফে একটা সংখ্যা। এখন অনেকে পড়ন্ত বয়সেও খেলে যাচ্ছে আর আমার মধ্যে এখনো নিজের সেরাটা দেওয়ার মনোভাব আছে। এই ইচ্ছাশক্তিই আমাকে এগিয়ে নিয়েছে এবং কখনো হাল ছাড়তে দেয়নি।‘ এবারের ব্যালন ডি’অর বেনজেমার হাতে তুলে দেন তারই স্বদেশি কিংবদন্তি ও এক সময়ের গুরু জিদান। নিজের আদর্শের হাত থেকে পুরষ্কার জিতেয় দারুণ উচ্ছ¡সিত বেনজেমার, ‘আমার জীবনে দুজন আদর্শ জিদান এবং রোনালদো।’
মাঝে দীর্ঘদিন জাতীয় দল থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল সেক্সটেপ কেলেঙ্কারিতে। সেই সময় ফ্রান্স ২০১৮ সালের বিশ্বকাপও জেতে। ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের বর্ষসেরার এই ট্রফি জেতার প্রতিক্রিয়ায় বেনজেমা মনে করিয়ে দিয়েছেন সেই চড়াই-উতরাই পেরোনো দিনগুলোর কথা। সাথে এটাও জানালেন কাতারে বিশ্বকাপ জিততে সবটুকুই ঢেলে দেবেন, ‘যখন আমি ফ্রান্স দলে ছিলাম না, সে সময়টা কঠিন ছিল। কিন্তু আমি কখনো হাল ছাড়িনি। বিশ্বকাপ জেতার ইচ্ছা আছে। আশা করছি, কাতার বিশ্বকাপে দলে থাকব। বিশ্বকাপ জেতার জন্য সবকিছুই করতে চাই।’
অন্যদিকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন বার্সেলোনার স্প্যানিশ তারকা অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস। তাছাড়া রবার্ট লোভান্দোভস্কি জেতেন জার্ড মুলার ট্রফি (সেরা স্ট্রাইকার)। আর দাতব্য কাজে গোটা দুনিয়ার কাছে উদাহরণ হওয়া সেনেগালের সাদিও মানের হাতে ওঠে এবারই প্রথম দেওয়া সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড।
হাল না ছাড়া বুড়ো হাতেই ব্যালন ডি’অর

কার ঝুলিতে কোন পুরস্কার
বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়
করিম বেনজেমা (ফ্রান্স/রিয়াল মাদ্রিদ)
বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়
অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস (স্পেন/বার্সেলোনা)
বর্ষসেরা ক্লাব
ম্যানচেস্টার সিটি (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ)
সেরা গোলরক্ষক
থিবো কোর্তোয়া (বেলজিয়াম/রিয়াল মাদ্রিদ)
জার্ড মুলার ট্রফি
রবার্ট লেভান্দোভস্কি (পোল্যান্ড/বার্সেলোনা)
সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড
সাদিও মানে (সেনেগাল/লিভারপুল)
কোপা ট্রফি
গাভি (স্পেন/বার্সেলোনা)

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যালন ডি’অর
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ