পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক ধীরগতির কারণে গত ৫ বছরে ৩২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, জাইকাসহ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা ও উন্নয়ন সহায়ক সংস্থাগুলো। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতিশীলতা ফিরছেনা। উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে তা কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারত। মূলতঃ গার্মেন্টস রফতানী এবং বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের রেমিটেন্স প্রবাহের উপর ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভে রেকর্ড তৈরী হচ্ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগে কাক্সিক্ষত গতি না ফেরার জন্য দীর্ঘদিন ধরে যে সব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তার মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কথা বাদ দিলেও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, বন্দর ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের অনগ্রসরতার কথাই দেশী-বিদেশী স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে। যেখানে এফডিআই এবং আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতা বিরাজ করছে, সেখানে প্রতিবছর প্রতিশ্রুত উন্নয়ন সহায়তার হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে প্রত্যাহৃত হওয়ার ঘটনা হতাশা ও লজ্জাজনক। দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিশ্রুত বরাদ্দসহ এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতা না থাকলে এতদিনে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক গতিধারাই হয়তো পাল্টে যেতো।
উন্নয়ন প্রকল্পে অস্বাভাবিক ধীরগতির কারণে একদিকে দেশে বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দীর্ঘয়িত হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্নীতি ও সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি প্রকল্পে প্রাক্কলনের অতিরিক্ত হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেন প্রকল্প, ঢাকা ও চট্টগ্রামে একাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প থেকে শুরু করে পদ্মাসেতু প্রকল্প পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত আছে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও আমদানী রফতানী কর্মকা-ের নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প যথাসাধ্য স্বল্পতম সময়ে সমাপ্ত করাই ছিল সঙ্গত। গতকাল প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, আড়াই বছরে সমাপ্য এই প্রকল্পটি ইতিমধ্যে চার দফা সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে নির্মাণ ব্যয় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (মূল প্রাক্কলনের ৮০ শতাংশ) বাড়িয়েও শেষ করা যায়নি। সময়মত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পে একদিকে যেমন হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়তি যোগান দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দীর্ঘদিন অচল থাকায় বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং কোটি মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যথাসময়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় গত ৫ বছরে সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকার সহায়তা বরাদ্দ প্রত্যাহার করেছে দাতারা। অপরপক্ষে শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে প্রকল্পে কালক্ষেপণের কারণে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবী করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র নেতারা। সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে ডিসিসিআই সভাপতি এই তথ্য জানান।
সরকার যতই কথিত উন্নয়ন নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে, উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের প্রত্যাশিত গতি যেন ততই মন্থর ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বৈদেশিক সহায়তা প্রত্যাহার, পাইপলাইনে থাকা উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড় না হওয়া, ছাড় হওয়া অর্থ ব্যবহারে অসঙ্গতি, অসামর্থ্য এবং এডিপি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার ক্রমবর্ধমান চিত্র থেকেই তা’ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেখানে অর্থাভাবে দেশের হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও হচ্ছেনা। লাখ লাখ বেসরকারী শিক্ষক চাকুরীর নিশ্চয়তা ও কাক্সিক্ষত বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেখানে সরকারী সংস্থাগুলোর দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অক্ষমতার কারণে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তা ফেরত যাচ্ছে। এমনকি পাইপলাইনে থাকা লক্ষকোটি টাকার বিনিয়োগ ও উন্নয়ন প্রতিশ্রুতিও আমরা কাজে লাগাতে পারছিনা। দেশী-বিদেশী অর্থায়নে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পগুলো দেশকে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। বিশেষতঃ বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নানা মহল থেকে অনেক পরামর্শ ও তাগিদ দেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যতই দিন যাচ্ছে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার হার বাড়ছে। উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করার শুরু থেকে ফিজিবিলিটি রিপোর্ট, সম্ভাব্য অর্থায়ন ও বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ, অর্থের বরাদ্দ প্রাপ্তিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই যথেষ্ট সময় ক্ষেপণের পরই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়। এসব খাতে পরামর্শক নিয়োগেও কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। অথচ প্রকল্পের কাজ শুরু এবং শেষ করতে অস্বাভাবিক সময় ক্ষেপণের সাথে সাথে ব্যয় বৃদ্ধির জন্য কাউকেই জবাবদিহি করতে হয়না। এভাবেই রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুন্ঠন হচ্ছে, জনগণের ভোগান্তি এবং ঋণের বোঝা বাড়লেও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছেনা। এ ধরনের ব্যর্থতার জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক রেটরিক দিয়ে উন্নয়ন হয়না, স্বচ্ছ ও গতিশীল প্রক্রিয়ায় বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।