পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের অপরাধপ্রবণতায় কোনোভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এ প্রবণতা দিন দিনই বাড়ছে। একের পর এক ঘটনার জন্ম দেয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, মামলা তদন্তে ঘুষ নেয়া, গ্রেফতার বা ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া, জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মতো গুরুতর অপরাধমূলক ঘটনার সাথে ঐ শ্রেণীটি জড়িয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক বেচাকেনা, স্বর্ণ চোরাচালান, ধর্ষণসহ বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, একই থানায় দীর্ঘদিন চাকরি করার সুবাদে কোনো কোনো পুলিশ সদস্য চাকরিবিধি ভেঙে থানা এলাকায় ব্যবসা খুলে বসেছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে হাউজিং ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আমানউল্লাহ বলেছেন, শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ পুলিশ সদস্যের কর্মকা-ের কারণে গোটা পুলিশ বিভাগের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত অন্য এক খবরে বলা হয়েছে, গুরুদ-ের অপরাধ হলেও অনেক ক্ষেত্রে শাস্তি হয় লঘু। বলা হয়, ভুক্তভোগী কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করলে তাকে অনেক সময় জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। এদিকে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ডিএমপিএস শাখায় যেসব অভিযোগ নথিভুক্ত হয় তা প্রকৃত অপরাধের চেয়ে কম। কাগজে-কলমে অভিযোগের যে সংখ্যা দেখানো হয়, প্রকৃত অভিযোগ তার চেয়ে অনেক বেশি। অনেক অভিযোগ সদর দপ্তর পর্যন্ত আসে না।
এ কথা নতুন করে বলার কোনো প্রয়োজন নেই যে, একশ্রেণীর পুলিশের দোর্দ- প্রতাপের পেছনে কাজ করছে কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের আনুকূল্য। কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তার অনৈতিক এবং নানা ধরনের অপকর্মের খবর প্রায়ই প্রকাশিত হয়। তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা খুব কমই নিতে দেখা গেছে। সাজার পরিবর্তে তাদের সুবিধাপ্রাপ্তিই ঘটেছে। এই প্রবণতার পেছনে যে রাজনৈতিক প্রশ্রয় কাজ করে আসছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। এর দ্বিমাত্রিক ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রথমত, অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্র ধরে সরকার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে পুলিশের ওপর অধিক নির্ভর হওয়ায় কোনো না কোনোভাবে একশ্রেণীর পুলিশের মধ্যে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে, তারাই ক্ষমতার মূল উৎস। দ্বিতীয়ত, পুলিশ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম। নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার পরিবর্তে ঘুষ লেনদেনের কথাও উঠে এসেছে। সরকারের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রকাশ্যেই এ অভিযোগ করেছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পেলে দুর্নীতির প্রবণতা এবং বেপরোয়া ভাব বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে পুলিশকে অধিকতর ব্যবহারের কারণে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। দেখা যাচ্ছে, যেসব অপরাধে অপরাধীদের গ্রেফতার করার কথা, অথবা যেসব অপরাধীদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষের যাওয়ার কথা, পুলিশের একটি শ্রেণী সেসব অপরাধেই জড়িয়ে পড়ছে। ফলে পেশাদার সন্ত্রাসীরা আরো আস্কারা পাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে জননিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। যাদের অর্থে রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর বেতনভাতাদি হচ্ছে, সেই জনগণই একশ্রেণীর পুলিশের শিকারে পরিণত হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা।
পুলিশকেই জনগণের বন্ধু বলে বিবেচনা করা হলেও একশ্রেণীর পুলিশের কারণে পুরো পুলিশ বিভাগই বদনামের ভাগীদার হচ্ছে। জনসাধারণের কাছে তারা আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। হয়রানির ভয়ে অনেকে থানা-পুলিশ করতে রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। এমন অভিযোগও রয়েছে, পেশাদার অপরাধীদের সাথেও কোনো কোনো পুলিশের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। সেইসাথে রয়েছে পুলিশের সোর্সের হয়রানি। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত কেউই কার্যত এ ধরনের হয়রানির বাইরে নয়। এর ফলে পুলিশের ভাবমর্যাদা অনেকটা অসম্মানজনক পর্যায়ে নেমেছে। পুলিশের মর্যাদা জনসাধারণের কাছে অবনত হওয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। পুলিশ বাহিনীর ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চেইন অব কমান্ড সুদৃঢ় করতে হবে। পুলিশের যে সদস্যই অপরাধ করুক না কেন সে যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি হয়, এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দ্রুতই পরিস্থিতি উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আন্তরিক হবে, এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।