পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ডের সফল মহাসমাবেশের পর উজ্জীবিত বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ওই মহাসমাবেশকে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাইলফলক হিসাবে দেখছেন দলের নেতারা। তারা মনে করেন চট্টগ্রামে শুরু হওয়া আন্দোলনের এই স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে-আর তাতে সরকারের পতন হবে। গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ফিরে আসবে।
টানা দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির জনপ্রিয়তা যে এখনও কমেনি তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বুধবারের ওই সমাবেশে। জেল, জুলুম, দমন-পীড়িনের পরও মাটি কামড়ে পড়ে আছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। পথে পথে সন্ত্রাসী হামলা, পুলিশী ধরপাকড়সহ সব বাধা ডিঙ্গিয়ে এই অঞ্চলের আট জেলা থেকে সমাবেশে যোগ দিয়ে নেতাকর্মীরা প্রমাণ করেছেন, তারা দুরন্ত দুর্জয়-তাদের মনোবল এখনও অটুট।
জ¦ালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে মূল্যবৃদ্ধি ও চলমান আন্দোলনে পাঁচ নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়েছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই সমাবেশ নিয়ে এখন চলছে নানামুখি আলোচনা। বিএনপির নেতাদের মূল্যায়ণ এই সমাবেশ সর্বাত্মক সফল হয়েছে। সর্বস্তুরের জনগণের অংশগ্রহণে পলোগ্রাউন্ডের ওই সমাবেশ এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় জমায়েত। সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে সমাবেশ সফল করে চট্টগ্রামের বীর জনতা প্রমাণ করেছে তারা বিএনপির পক্ষে।
১০ বছরের বেশি সময় ধরে বড় কোন সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি বিএনপি। তবে এবার সমাবেশের অনুমতি পাওয়া গেলেও ছিল নানা হুমকি-ধমকি, নানামুখি শঙ্কা। সবকিছু মোকাবেলা করে পলোগ্রাউন্ডমুখী জন¯্রােত এক অবিশ^াস্য ঘটনা। এ যেন নিস্তরঙ্গ নদীতে উথাল পাথাল ঢেউ। সমাবেশ শুরুর আগেই বিশাল মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশে জনতার ¯্রােত আশপাশের প্রায় পাঁচ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষও এতে যোগ দেয়। নানা শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে বিএনপির এই সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এই অঞ্চলের বিএনপি নেতারা ব্যাপক শোডাউন করেন। এই ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন দলের তরুন নেতারা। মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্র হুমাম কাদের চৌধুরী বিশাল মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। পিতার মতো ‘নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবর’ ¯েøাগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করে সবার দৃষ্টি কাড়েন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সেটি ভাইরাল হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংসদীয় আসনের নেতাদের পাশপাশি তিন পার্বত্য জেলার নেতারাও বর্ণিল শোডাউন করেন।
বিএনপির এ সমাবেশের প্রচারকালে কোন বাধা না আসলেও সমাবেশের আগের রাতে নগরীর কয়েকটি এলাকায় পুলিশ নেতাদের বাড়ি ঘরে হানা দিয়েছে। সমাবেশে যোগ দেয়ার পথে জেলার কয়েকটি এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। মীরসরাই, সীতাকুÐ, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বিএনপি কর্মীদের গাড়ি বহরে সরকারি দলের লোকজন হামলা করেছে। তাতে বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েকটি বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস।
তবে সমাবেশের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে সমাবেশ চলাকালে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ভূমিকা ছিল নিরপেক্ষ। তারা সমাবেশ শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন বলে জানান বিএনপির নেতারা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগে থেকেই বিএনপি সমাবেশের নামে নৈরাজ্য করবে বলে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করার পাশাপাশি নৈরাজ্য হলে তার দাঁতভাঙা জবাব দেয়ারও হুঁশিয়ারী দেন।
তবে তাদের সে আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হয়েছে বলে জানান বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, শুরু থেকেই বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশের যাবতীয় প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়েছে। তবে সমাবেশে যোগ দেয়ার পথে সরকারি দলের কতিপয় নেতাকর্মী বিএনপির কর্মীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। তারাই নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। বিএনপির উপর হামলা চালিয়ে তারা এর দায় উল্টো বিএনপির উপর চাপিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করেছিল। তবে জনতার প্রতিরোধের মুখে তাদের চক্রান্ত সফল হয়নি।
নেতারা বলেছেন, এই সমাবেশের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। এখন থেকে রাজপথের কোন কর্মসূচিতে কোন বাধা মানবেন না তারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই সমাবেশকে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাইলফলক হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মানুষ তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। সফল মহাসমাবেশের মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলে বিএনপির ঘাঁটি আরও সুদৃঢ় হয়েছে। বিএনপির কর্মীরা জুলুম নির্যাতনের পরও পিছু হটেনি। তারা এখন খাঁটি সোনায় পরিনত হয়েছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামিম বলেন, সব বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল হওয়ায় এই অঞ্চলের নেতাকর্মীরা এখন দারুণ উজ্জীবিত। এর সুফল পাওয়া যাবে আগামী দিনে রাজপথের কর্মসূচিতে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহŸায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, চট্টগ্রাম বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি, তবে এতদিন সরকারের বাধার কারণে মানুষ রাস্তায় নামতে পারেনি। একটু সুযোগ পেয়েই মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এখন থেকে আর কোন কর্মসূচিতে জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার কেউ ঠেকাতে পারবে না। এখন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মনোবল আরো বেশি চাঙ্গা হয়েছে।
মহাসমাবেশ ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে
গতকাল মহাসমাবেশ পরবর্তি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন এই মহাসমাবেশের সাফল্যে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে সাড়া জাগিয়েছে। ফেসবুকে কোটি কোটি মানুষ মহাসমাবেশ চলাকালীন শেয়ার করেছে।
তিনি বলেন, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনার জন্ম নিয়েছিল, সাথে সাথে প্রতিপক্ষ গণবিরোধী শক্তি যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারাও এই কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার অব্যাহতভাবে চেষ্টা করেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের পক্ষ থেকে যারা সবকিছু উপেক্ষা করে সমাবেশকে মহা মহাসমাবেশে পরিণত করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
আমাদের নেত্রীর অনুপস্থিতি আমরা সবাই অনুভব করেছি। এর আগে ২০১২ সালে নেত্রীর উপস্থিতিতে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সভা হয়েছিল। বিস্ময়ের বিষয়, অনেকের ধারণা বেগম খালেদা জিয়া যদি এই সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন, তাহলে সারা চট্টগ্রাম জনসভায় পরিণত হত। যারা তিনটা, সোয়া তিনটার দিকে মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে এসেছেন তারা কদমতলী অতিক্রম করতে পারেনি। ওদিকে টাইগারপাস ক্রস করে পারেনি। সিআরবি জনসমুদ্র ছিল। রেললাইনের ওপরে জনগণের উপস্থিতি, এটা অবিশ্বাস্য। মাঠে যা লোক ছিল, মাঠের বাইরে তার চেয়ে বেশি লোক ছিল। অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয় মহাসমাবেশ চট্টগ্রামবাসী উপহার দিয়েছেন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।