Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝুলন্ত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার তদন্ত

দুই বছরেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় সহকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

এএসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যাকাণ্ডের ২৩ মাসেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় খোদ পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের অনেকেই প্রভাবশালী হওয়ায় তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে না বলে মনে করছেন আনিসুল করিমের অনেক সহকর্মী। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। পরে হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ২ নভেম্বর ধার্য করেন আদালত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএসপি আনিসুল করিমের এক সহকর্মী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইনকিলাবকে বলেন, মানসিক রোগের মাইন্ডএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের পর ইতিমধ্যে ২৩ মাস কেটে গেছে। কিন্তু এখনো আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হয়নি। এতে আটকে আছে মামলাটির বিচারকাজ। যেখানে হত্যাকাণ্ডের পুরো বিষয়টির ভিডিও রয়েছে সেখানে কেন দীর্ঘ দিনেও তদন্ত শেষ হচ্ছে না তা আমাদের মাথায় আসছে না।

তিনি বলেন, আনিসুল করিম ৩১ বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তা। খুনের সকল প্রমান রয়েছে তদন্তকারী সংস্থার হাতে। এর পরে বিলম্বের কারণ হলো প্রভাবশালী কাউকে রক্ষা করা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সিনিয়র এএসপি মো. আনিসুল করিম শিপন রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। ওই সময় হাসপাতালে তাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার পরদিন আদাবর থানায় মামলা দায়ের করেন আনিসের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ। এতে ১৫ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ৮ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আদাবর থানার পরিদর্শক মো. ফারুক মোল্লা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে এ মামলার আসামি ডা. নুসরাতের নাম অভিযোগপত্রে আসেনি। আনিসুলের পরিবারের ধারণা, ডা. নুসরাত ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এজন্য মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন আনিসের বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ। পরে আদালত তা মঞ্জুর করে পিবিআইকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
অভিযোগপত্রে নাম থাকা আসামিরা হলেন- মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহামুদ, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন ও ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মামুন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ্য করা হয়, চিকিৎসার জন্য ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুপুরে আনিসকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেলা পৌনে ১২টার দিকে আরিফ মাহমুদ জয় আনিসকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যান। ওই সময় আনিসের বোন কথা বলতে চাইলে আরিফ মাহমুদ জয় ও রেদোয়ান সাব্বির বাধা দেন। একপর্যায়ে হাসপাতালের কলাপসিবল গেট আটকে দেয়া হয়। এরপর আসামিরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজন আনিসকে চিকিৎসার কথা বলে দোতলার একটি অবজারভেশন রুমে নিয়ে যান।

পরে ওই রুমের মেঝেতে জোরপূর্বক উপুড় করে শুইয়ে তিন-চারজন হাঁটু গেড়ে আনিসের পিঠের ওপর বসেন। কয়েকজন তার দুই হাত পিঠমোড়া করে ওড়না দিয়ে বাঁধেন। কয়েকজন আসামি কনুই দিয়ে আনিসের ঘাড়ের পেছনে ও মাথায় আঘাত করেন। আসামিদের মধ্যে একজন আনিসের মাথার ওপরে চেপে বসেন ও অন্য সবাই মিলে তার পিঠ, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি মারেন। ওইদিন বেলা ১২টার দিকে আনিস নিস্তেজ হয়ে পড়েন, যা হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যমান।

নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পর আসামি আরিফ মাহমুদ জয় নিচে এসে আনিসের পরিবারের সদস্যদের ইশারায় উপরে যেতে বলেন। বাবা, ভাই ও বোন অবজারভেশন রুমে গিয়ে আনিসকে নিস্তেজ অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে জরুরিভিত্তিতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পর্যবেক্ষণের পর আনিসকে মৃত ঘোষণা করেন।

আনিসুল করিমের ভাই রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন, বাবা মো. ফাইজুদ্দীন আহম্মেদও পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। পারিবারিক ঝামেলার কারণে তার ভাই (আনিসুল) মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। কিন্তু আমার ভাইকে হত্যার পুরো বিষয়টির ভিডিও রয়েছে, এর পরেও কেন জড়িতদের বিরুদ্ধ তদন্ত শেষ হচ্ছে না তা আমরা জানতে পারছি না।

তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বার বার একই কথা বলেন যে দ্রুত তদন্ত শেষ হবে। কিন্তু আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
মামলার তদারকি কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মহানগর (উত্তর) পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এএসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা মামলাটি পুন:তদন্ত করছি। জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ

৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ