গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
সায়ীদ আবদুল মালিক : থেমে গেছে রাজধানী থেকে হকার উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনের কাজ। বেশ কয়েক মাস এ নিয়ে তুমুল হৈ-চৈ, আলোচনা ও সমালোচনা হলেও বর্তমানে এ কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। ২৭ অক্টোবর রাজধানীর গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদ নিয়ে হকার ও নগর ভবনের লোকজন আর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে বড় ধরনের সংঘর্ষের পর এ কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। সিটি কর্পোরেশনে বিষয়টি আর জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে না। এমনকি হকারদের পরিচয়পত্র দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ করার পরিকল্পনাও থেমে আছে। ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ গেইট, স্টেডিয়াম গেইট, জিপিও, পুরানা পল্টন মোড়, ফুলবাড়িয়া ও গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় জরিপ চালিয়ে স¤প্রতি ২ হাজার ৫০২ জন হকারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে হকারদের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ব্যবসার ধরন ও স্থান ইত্যাদি। এ তথ্য নিয়ে ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। যদিও এ তালিকার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলিস্তান এলাকার কয়েকজন হকার ও নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ২ হাজার ৫০২ হাকারের মধ্যে মাত্র হাজার-বারশ’ প্রকৃত হকারের নাম উঠে এসেছে। বাকি নামগুলো এসেছে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনায়।
হকার পুনর্বাসনের কার্যক্রম থেমে যাওয়ার সাথে সাথে থেমে গেছে গেছে হকার উচ্ছেদের কার্যক্রমও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর ভবনের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর কোনো এলাকায় এখন আর ফুটপাতের হকার উচ্ছেদের কাজ পরিচালনা করার অনুমতি নেই। এ নিয়ে মেয়রের বিধি নিষেধ রয়েছে। মেয়রের অনুমতি ছাড়া রাজধানীর কোনো এলাকার ফুটপাতের হকার উচ্ছেদের কাজ পরিচালনা করা যাবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মতিঝিল এজিবি কলোনীর রাস্তার উপর কাঁচাবাজার, শিশু পার্কের সামনের অবৈধ দখলদার, মানিকনগর রাস্তার উপর অবৈধ কাঁচাবাজার, গুলিস্তান অবৈধ হকার উচ্ছেদ কার্যক্রম, নয়া পল্টনে সরকারি রাস্তা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের উচ্ছেদ, নিউমার্কেট থেকে অবৈধ হকার উচ্ছেদসহ প্রায় ৩০টির বেশি ফাইল রেডি হয়ে থাকলেও মেয়রের অনুমতি না থাকায় এ সমস্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বর্তমানে ফুটপাথের দখল কার্যক্রম চলছে নির্বিঘেœ। কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাথ পার হয়ে হকাররা এখন মূল রাস্তা দখল করে নিয়েছে। নগরীর ফুটপাথ হকারমুক্ত না হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি ও বিশাল বাণিজ্য। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা-কর্মী ও দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ছত্রছায়ায় লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজ, কর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণেই হকার উচ্ছেদ সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সকালে উচ্ছেদ করলে বিকালে দখল, বিকালে উচ্ছেদ হলে সকালে দখল। এভাবেই চলছে রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাথের হকারদের সাথে সিটি কর্পোরেশনের ইঁদুর-বিড়াল খেলা। সর্বশেষ স¤প্রতি গুলিস্তান এলাকায় হকারমুক্ত অভিযানে তুলকালাম কাÐ ঘটে গেছে। ওই ছাত্রলীগের দুই নেতা প্রকাশ্যে অস্ত্রও ব্যবহার করেছে। এত বড় ঘটনার পর দিনই ফের দখল হয়ে গেছে গুলিস্তানের সড়ক ও ফুটপাথ। শুরু হয়েছে চিরচেনা যানজট ও জনভোগান্তি। অন্যদিকে পুলিশও এসব হকারকে কিছু বলছে না। এ এলাকায় পুরনো সিস্টেমে লাইনম্যানদের মাধ্যমে চাঁদা তোলা হচ্ছে। তবে গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাথের চাঁদাবাজি ভাগাভাগির সিস্টেম কিছুটা বদলে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন কল্যাণ সমিতির নামে হকারদের কাছ থেকে অবৈধ চাঁদা আদায় করেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী হকারদের অভিযোগ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মিলেমিশে চাঁদাবাজি করছে। আর পত্রিকায় লিখলে চাঁদার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফুটপাথে হকার বসা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
হকার পুনর্বাসন সম্পর্কে নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে হকারদের পরিচয়পত্র দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। বলা হয়েছিল, হকারদের পরিচয়পত্র দিলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে এবং পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত হকারদের সুবিধাজনক স্থানে পুনর্বাসন করা হবে। পরে এই পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর গত ২৯ অক্টোবর ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন গুলিস্তান পার্কে হকারদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন।
জানা গেছে, পার্কে পুনর্বাসনের ঘোষণা দেয়ায় নাগরিক সমাজ থেকে আপত্তি ওঠে। এরপর হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়ে যায়। এখন ডিএসসিসির কেউ হকার পুনর্বাসন নিয়ে কথা বলতে চান না। এমনকি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি হকার উচ্ছেদ কার্যক্রমের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা) মোহাম্মদ খালিদ আহমেদও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আপাতত কিছু করছি না।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ডিএসসিসির তৎপরতা না থাকায় গুলিস্তান ও আশপাশের সড়কগুলো হকারদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রধান সড়ক ও ফুটপাত হকারদের নিয়ন্ত্রণে। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে হকার সরিয়ে। এ কারণে গুলিস্তানে সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে। দুই ডজন ট্রাফিক পুলিশ সেখানে দায়িত্ব পালন করলেও যানজট আর দূর করা যাচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতো গুলিস্তানেও হকার বসিয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে। তবে অন্য এলাকার চাইতে গুলিস্তানে চাঁদার পরিমাণ বেশি। গুলিস্তান-পল্টন এলাকার হকারদের প্রত্যেকের কাছ থেকে দৈনিক গড়ে ২০০ টাকা করে তোলা হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। চাঁদার এ টাকা প্রভাবশালীদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।
প্রসঙ্গত, অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ২৭ অক্টোবর গুলিস্তান এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ডিএসসিসি। সেদিন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় হকারদের মালামাল। ডিএসসিসির কঠোর মনোভাবের কারণে এদিন মৃদু প্রতিবাদ জানিয়ে সটকে পড়েন হকাররা। কিন্তু অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই হকাররা স্বস্থানে ফিরে আসেন। এরপর থেকে সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতা দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এমএ কাশেম বলেন, লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজদের কারণে ঢাকার হকার পুনর্বাসন হচ্ছে না। কারণ, হকাররা পুনর্বাসিত হলে লাইনম্যানদের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু গুলিস্তানেরই না, রাজধানীর অন্তত ২০টি স্পটের হকারদের তালিকা করে পুনর্বাসন করতে হবে। হকারদের কোথায় পুনর্বাসন করা হবে, তা সিটি কর্পোরেশনই ভালো জানে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।