পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকায় যারা বসবাস করে এবং যারা ঢাকাগামী হয়, তারা ঢাকার কঠিন জীবন এবং দুরবস্থার কথা মেনে নিয়েই থাকে এবং আসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যারা আসে তারা মনে করে, ঢাকা আসতে পারলেই তাদের জীবনধারা বদলে যাবে। স্বপ্ন পূরণ হবে। মানুষের ঢাকামুখী হওয়ার মূল কারণই হচ্ছে, ঢাকার মধ্যে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। এর ফলে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ কেউ স্থায়ী হতে, কেউ সেবা নিতে ঢাকা আসছে। যারা কর্মসংস্থানের আশায় ঢাকাগামী হয়, তারা মনে করে, কোনো রকমে ঢাকায় ঢুকতে পারলেই জীবন বদলে যাবে। তাদের এই আসা এবং স্থায়ী হওয়া ঢাকাকে জনভারে ভারাক্রান্ত করে ফেলছে। এর বাসযোগ্যতা বিনষ্ট করছে। একটি পরিত্যাগযোগ্য নগরীতে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ঢাকায় ১৭০০ জন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছে। অবশ্য এ সংখ্যাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। কোনো কোনো হিসাবে সংখ্যাটি আড়াই হাজারের বেশি। এ হিসাবে ঢাকায় মাসে যুক্ত হচ্ছে গড়ে ৫০ থেকে ৭৫ হাজার মানুষ। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৩৯ শতাংশ, ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ৩.৫ এবং ২০২২ সালে ৩.৫৬ শতাংশ। পৃথিবীর আর কোনো শহরে এত অধিক সংখ্যক মানুষ যুক্ত হওয়ার নজির নেই। জাতিসংঘের ইউএনএফপি’র হিসাবে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা ১১তম। তবে আয়তনের তুলনায় এবং জনসংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ্বের এক নম্বর জনঘনত্বের শহর। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ বসবাস করে। গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘স্ট্যাটিস্টা’ বিশ্বব্যাপী শহরের জনঘনত্বের ওপর করা এক প্রতিবেদনে বলেছে, জনঘনত্বের দিক থেকে ঢাকা শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এর প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে ৩০ হাজার ৯৩ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় প্রায় সোয়া দুই কোটি মানুষ বসবাস করে। এসব প্রতিবেদন ও পরিসংখ্যান উল্লেখ না করেও যে কেউ বলে দিতে পারে, ঢাকা লোকসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ হয়ে আছে। কোটি কোটি মানুষ ধারণ করার সামর্থ্য এই নগরীর নেই। যে হারে ঢাকায় মানুষের আগমণ ঘটছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে এর অবস্থা কী হবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। মানুষের ভারে, পদচারণায়, ধারণ ক্ষমতার অভাবে কি ঢাকা দেবে যাবে বা ভেঙ্গে পড়বে? হ্যাঁ, ভেঙ্গেও পড়তে পারে, দেবেও যেতে পারে। নগরবিদরা মনে করছেন, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। এর বেশিরভাগ সুউচ্চ ভবন ভেঙ্গে পড়বে, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। এমনকি ভূমি পরিবর্তন হয়ে কোনো কোনো এলাকা দেবে যেতে পারে। এহেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকা সত্তে¡ও ঢাকায় মানুষের আগমন বন্ধ করা যাচ্ছে না। মানুষের ঢাকামুখী হওয়া রোধ করা যাচ্ছে না। নগর কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারের উদ্যোগও নেই। এ পরিস্থিতি নিরসনে তেমন কোনো নীতি ও পরিকল্পনা নেই। যেমন আছে তেমন চলতে থাকুকÑএমন একটা প্রবণতা বিদ্যমান। প্রশ্ন হচ্ছে, এর জন্য কি কেবল ঢাকাগামী মানুষই দায়ী? তারা কি সাধে ঢাকামুখী হয়? এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্টের জীবনে জড়াতে চায় না। এর জন্য দায়ী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। রাষ্ট্র ঢাকার মধ্যেই সকল সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে রেখেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-আদালত, প্রশাসন, কলকারখানা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক কর্মকাÐের প্রায় সকল সুযোগ-সুবিধা কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে।
দুই.
সাধারণত যে শহরের লোকসংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যায়, সেই শহরকে মেগাসিটি বলা হয়। এ হিসেবে ঢাকা অনেক আগেই মেগাসিটিতে পরিণত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক রাজধানীবাসীর জন্য যে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তা এখানে নেই। জনসংখ্যা অনুপাতে যে সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা আগের মতোই রয়ে গেছে। বাড়তি লোকের জন্য তা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। ফলে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেই নতুন যুক্ত হওয়া মানুষ ভাগ বসাচ্ছে। এতে যারা দীর্ঘকাল ধরে রাজধানীতে বসবাস করছে, তাদের সুবিধাও কমে যাচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ঢাকায় যারা আসে, তারা নিজেরাই বসবাসের জায়গা করে নেয়। এতে পরিকল্পনার প্রয়োজন পড়ছে না। অথচ উন্নত বিশ্ব কিংবা তৃতীয় বিশ্বের অনেক রাজধানীতেও এভাবে পরিকল্পনাহীনভাবে থাকার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে নগর কর্তৃপক্ষের তীক্ষè নজর থাকে। যে কেউ চাইলেই ইচ্ছামতো ঘর-বাড়ি বা ছাপড়া তুলে বসবাস করতে পারে না। এমনভাবে নগর পরিকল্পনা করা হয় যে, ইচ্ছা করলেই এসে স্থায়ীভাবে থাকা যায় না। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় রাতের চেয়ে দিনের জনসংখ্যা বেশি হয়। এর কারণ হচ্ছে, যারা কর্মজীবী এবং বিভিন্ন কাজে কলকাতা আসে, তারা আশপাশের জেলাগুলোতে বসবাস করে। এসব জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা এমন করে গড়ে তোলা হয়েছে যে, ওখান থেকে এসে কলকাতায় অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা জরুরি কাজ সেরে দিনে দিনে ফিরে যাওয়া যায়। এতে তাদের জীবনযাপন ব্যয়ও সাশ্রয় হয়। ঢাকাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা দৃশ্যমান নয়। যদিও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ চূড়ান্ত করা হয়েছে, তবে তা কবে বাস্তবায়ন হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে ঢাকার অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে। যতক্ষণ না এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা থামানো যাবে না। অপরিকল্পিত এই সম্প্রসারণের ফলে রাজধানীর গঠন প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিণত হচ্ছে ইট, কাঠ, পাথরের নগরীতে। বলা হয়, ঢাকার মতো প্রাকৃতিক সুষমামন্ডিত রাজধানী বিশ্বে খুব কম আছে। এটি এমন এক শহর, যার ভেতর দিয়ে এক সময় স্বচ্ছ প্র¯্রবণ প্রবাহমান ছিল। জালের মতো খাল আর চতুর্দিকে নদী। এসব এখন স্মৃতি হয়ে গিয়েছে। এই ঢাকায় একসময় ছোট-বড় প্রায় ৪৬টি বা তার বেশি খাল ছিল? অসংখ্য পুকুর, মাঠ ও লেক ছিল। এখন এসবের উপর বাড়ি-ঘর ও সড়ক হয়েছে। যেসব লেক দেখা যায়, এগুলো মূলত খাল বা নদীর সাথে সংযুক্ত ছিল। শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষা ও বালু নদীতে গিয়ে মিশেছিল। এসব খাল, পুকুর রক্ষা করা গেলে ঢাকা শহরের চেয়ে সুন্দর শহর বিশ্বে খুব কমই থাকত। তা না হয়ে ঢাকা আজ বিশ্বের অসভ্য ও বসবাস অনুপযোগী শহরে পরিণত হয়েছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণে বিষাক্ত ও আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে যেধরনের কর্তৃপক্ষ এবং পরিকল্পনা থাকা দরকার, তা নেই। যারা আছে, তারা তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারেনি। যেসব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা যদি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করত, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। দুই সিটি করপোরেশন তৎপর হয়ে এবং পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে দুরবস্থা কিছুটা হলেও কামানো যেত। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরটির মতো যদি কিছুটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যেত, তবে ঢাকা শহরের চেহারা অনেকটাই বদলে যেত। সমস্যা হচ্ছে, ঢাকাবাসীর সামনে আশাব্যঞ্জক কোনো কিছু নেই। একটি রাজধানীতে কি সুযোগ-সুবিধা থাকে, তা তারা যেমন জানে না, তেমনি সমস্যাকে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়ে বসবাস করছে।
তিন.
ঢাকার অসংখ্য সমস্যার মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে যানজট। প্রতিমুহূর্তে এ সমস্যায় পড়ে না, এমন মানুষ নেই। প্রতিদিন যানজটে পড়ে মানুষের কী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও ক্ষতি হয়, তার সঠিক হিসাব পাওয়া মুশকিল। তারপরও বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন সময়ে ক্ষতির হিসাব দিয়েছে। বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। জাতিসংঘের ইউএনডিপি গবেষণা অনুযায়ী, যানজটে বছরে ক্ষতি হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ইউএনডিপি এ গবেষণায় বলা হয়েছে, যানজটের কারণে দৈনিক ৪০ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয় ৩০০ কোটি টাকা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে যানবাহনের পুড়ে যাওয়া বাড়তি জ্বালানির মূল্য এবং নগরবাসীর স্বাস্থ্যহানির আর্থিক মূল্য। এভাবে বছরের পর বছর ধরে যে ক্ষতি হচ্ছে, এ ক্ষতি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে প্রতি দুই বছরে একটি করে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা সম্ভব। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, যানজটের ক্ষতি থেকে মুক্ত হতে পারলে আমাদের অর্থনীতি আরও অধিক গতিশীল হতো। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দ্রæত বৃদ্ধি পেত। সরকারকেও জনগণের পকেট থেকে নানা উপায়ে পয়সা বের করে নেয়ার ফন্দি-ফিকির করার প্রয়োজন হতো না। এমনকি যে ঘাটতি নিয়ে লাখ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়, সে ঘাটতিও থাকত না। তারা বলেছেন, যানজটের ক্ষতি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে, চার বছরের মধ্যে ঘাটতিবিহীন একটি বাজেট ঘোষণা করা সম্ভব হতো। যানজট কমানোর জন্য সরকার মেট্রোরেলসহ যেসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে, এগুলো যানজট কমাতে খুব একটা কাজ করবে না। যানজট কমাতে যে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে বাস্তবে তা কমাতে পারেনি। যানজট এখন ফ্লাইওভারের উপরে উঠে গেছে। যানজটের কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সবাই জানে। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৯টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ট্র্যাফিক আইন না মানা, যত্রতত্র কার পার্কিং এবং কার পার্কিংয়ের জায়গায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করা, রাস্তা ও ফুটপাথ দখল, ট্র্যাফিক পুলিশের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি। এসব কারণ চিহ্নিত করলেও সমাধানের উদ্যোগ নেই। এর বাইরে প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে, সড়কের তুলনায় অধিক সংখ্যক গাড়ি চলাচল। একটি আদর্শ শহরে যেখানে ২৫ ভাগ সড়ক থাকে, সেখানে ঢাকা শহরে রয়েছে মাত্র ৭ ভাগ। এই ৭ ভাগের মধ্যে কার্যকর রাস্তা হচ্ছে আড়াই ভাগ। এই কার্যকর রাস্তা দিয়ে গড়ে সোয়া দুই লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারলেও চলছে ৯ লাখ। তার উপর প্রতিদিন তিন শতাধিক গাড়ি রাস্তায় নামছে। এ পরিস্থিতিতে যানজট কমার কোন কারণ নেই। এছাড়া নগরীতে লোকসংখ্যার অনুপাতে যে পরিমাণ গণপরিবহণ থাকার কথা তা নেই। অথচ বিশ্বজুড়েই স্বীকৃত যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য গণপরিবহণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশই কেবল ব্যতিক্রম। এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, নগরীতে ৬০ ভাগ মানুষ হেঁটে চলে। রিকশায় চলে ১৯ ভাগ। বাস ও অটোরিকশায় চলে ১৬ ভাগ। প্রাইভেট কারে চড়ে ৫ ভাগ। অর্থাৎ ৫ ভাগ মানুষের প্রাইভেট কার যানজটকে তীব্র করে তুলেছে এবং প্রাইভেট কারেরই অনুমোদন দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। একটি প্রাইভেট কারে ড্রাইভারসহ দুইজন থেকে পাঁচজন বসতে পারে। বেশিরভাগ সময় শুধু দুইজনই চড়ে। বাকি তিনজনের জায়গা খালিই পড়ে থাকে এবং রাস্তার বিরাট একটা অংশ দখলে চলে যায়। এসব গাড়ি রাস্তার উপর পার্কিং করায় যানজট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নগরবিদরা বলেছেন, রাজধানীর যানজট কমাতে হলে প্রাইভেট কারের অনুমোদনের সংখ্যা কমাতে হবে। যাদের একাধিক প্রাইভেট কার রয়েছে, তাদেরকে একটির মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে হবে। আধুনিক, আরামদায়ক ও শৃঙ্খলাবদ্ধ গণপরিবহণ সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। কয়েক বছর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এক পরিবারের এক প্রাইভেট কার নীতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। নীতিটি খুবই ভালো ছিল। বাস্তবায়ন করা গেলে যানজট কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে আসত।
চার.
রাজধানী সকলের জন্য নয়, এটা যেমন বাস্তবতার আলোকে সত্য, তেমনি রাজধানীতে আসা এবং থাকার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, রাজধানী দুইটি হয় না এবং সকল সুযোগ-সুবিধা এখানেই সীমাবদ্ধ। এর ফলে সবাই রাজধানীমুখী হচ্ছে। যদি রাজধানীর মতো সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আরও বেশ কয়েকটি শহর থাকত, তবে মানুষের রাজধানীমুখী হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যেত। ভারতে রাজধানী দিল্লীর মতো বেশ কয়েকটি বড় শহর রয়েছে। সেসব শহরে রাজধানীর মতোই সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। দিল্লীতে যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তদ্রæপ বোম্বে, ব্যাঙ্গালুরু, চেন্নাই, পুনে, কলকাতায়ও রয়েছে। ফলে ভারতের নাগরিকরা ঢাকার মতো রাজধানীমুখী হয় না। এটা সম্ভব হয়েছে সকল সুযোগ-সুবিধার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে। আমাদের দেশেও রাজধানীর মতো সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য শহরে গড়ে তুলতে পারলে ঢাকার উপর থেকে অনেক চাপ কমে যেত। রাজধানীর আশপাশের জেলা শহরগুলোর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বিকেন্দ্রীকরণের সুযোগ রয়েছে। ঢাকা থেকে এসব জেলার দূরত্বও কম। যেমন নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, বিক্রমপুর, সাভার, গাজীপুর এমনকি কুমিল্লা, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহে রাজধানীর সুবিধা স্থানান্তর করলে মানুষের ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতা কমবে। এসব জেলার দূরত্ব গড়ে দেড় থেকে দুই ঘন্টা। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে এই দূরত্বে চলাচল করা মানুষের পক্ষে খুবই সহজ হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারের কার্যকর সিদ্ধান্ত। ঢাকাকে মানুষের চাপমুক্ত রাখতে এবং ঢাকাগামী মানুষের ¯্রােত ঠেকাতে বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং সেবাসহ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে সরকারকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিভাগীয় শহর ও প্রধান প্রধান জেলা শহরগুলোতে ঢাকার মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য আশপাশের জেলা ও অন্য জেলাগুলোতে সম্প্রসারণ করতে হবে, যাতে ঢাকার বাইরে কর্মসংস্থান সৃর্ষ্টি হয় এবং জীবিকার সন্ধানে মানুষকে ঢাকামুখী হতে না হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।