নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
মাত্র ১৯ বছর বয়সে রিভার প্লেট থেকে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমায় আর্জেনটিনার এক কিশোর। সময়টা ২০০৭। বলকে জালের ঠিকানায় পাঠানোটা তার জন্য পানি খাওয়ার মতই সহজ। রিয়ালে ৭ মৌসুমের যাত্রা পার করার সময় বনে গেলেন সেই সময়ের জগৎখ্যাত স্ট্রাইকারদের একজন। এরপর নিজের সেরাটা দিলেন ইতালিতে পাড়ি জমানোর পর। জাতীয় দলের হয়ে তার অর্জনটাই বা কম কিসের? আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জার্সিতে পঞ্চম সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। কিন্তু এতো অর্জনের পরও, তাকে খোদ জাতীয় দলের সমর্থকরা সম্বোধন করে ‘মিস মাস্টার’ বলে। কিন্তু তিনি এসবকে থোরায় কেয়ার করে তার সেরাটাই দিয়ে গিয়েছিলেন মাঠে। সেটা ক্লাব জার্সিতেই হোক বা জাতীয় দলের অধীনে। জীবনের আনন্দ-বেদোনার মারপ্যাঁচে চুকানোর মাঝেই, মেঘে মেঘে হয়ে গেল অনেক বেলা। বয়স ৩৪ ছাড়াবে এই ডিসেম্বরেই। শেষ আড়াই মৌসুম খেলছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে। পরশু মধ্যরাতে ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার জানিয়ে দিলেন এবার বুট জোড়া তুলে রাখবেন। ওই যে, খেলোয়াডদের জন্য একটা প্রবাদ আছে না- ‘অবসরটা এমন সময়ে নিবে, যখন বাকিরা বলবে আরও কিছুদিন খেলতে পারতে’। ঠিক সেটাই মাথায় ছিল এবারের মেজর লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার। ও আচ্ছা, যাকে নিয়ে এতো কথা, নাম তার গঞ্জালো জেরার্দো হিগুয়েইন।
এমএলএসের এই মৌসুমে ২৮ ম্যাচে ১৪ গোল করে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিগুয়েইন ফর্মে থাকতে থাকতে পরশু রাতে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন অবসরের। সেটা এই মৌসুম শেষেই। ইন্টার মায়ামি যদি প্লে অফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তাহলে হিগুয়েইন নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে থাকবেন। আর দল প্লে অফে যেতে ব্যর্থ হলে এই মাসেই শেষ হতে যাচ্ছে ‘এল পিপিতা’র খেলোয়াড়ি জীবন। পরশু রাতে বর্তমান ক্লাবের সকল সদস্যদের নিয়ে আবেগঘণ সংবাদ সম্মেলনে হিগুয়েইন বলেন, ‘ফুটবলকে বিদায় জানানোর দিনটা চলেই এল। ফুটবল আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, এই কারণে নিজেকে সুবিধাপ্রাপ্তই মনে হয়।’
বিদায় বেলা এই ৩৪ বছর বয়সী স্ট্রাইকার জুভেন্টাস ছাড়া তার ক্যারিয়ারের বাকি সব দলের নাম উল্লেখ করে জানান, ‘যে কোচিং স্টাফ আমাকে পালের্মো, রিভার প্লেট, রিয়াল মাদ্রিদ, আর্জেন্টিনা, নাপোলি, মিলান, চেলসি ও ইন্টার মায়ামিতে কোচিং করিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মাথায় এবং মনের মধ্যে সব সময় ভালো স্মৃতিগুলোই থাকবে। যতটা ভেবেছি ক্যারিয়ারে তার চেয়েও বেশি অর্জন করেছি। অবসরের সিদ্ধান্তটা আমি তিন-চার মাস আগেই নিয়েছি।’
হিগুয়েইন অবসর ঘোষণা করার পর তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের টুইটার অ্যাকাউন্ট তেকে জানানো হয়, ‘আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের প্রতীক গঞ্জালো হিগুয়েইন ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। অনেক কিছু দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, পিপা!’ অবসরের ঘোষণার পর তার সাবেক কোচ জোসে মরিনিও ইনস্টাগ্রামে হিগুয়েইনের কাছে মজার ছলেই জানতে চান, ‘তুমি কি গোল করতে করতে ক্লান্ত?’ হতেও পারেন। কারণ ক্যারিয়ারে গোল ও শিরোপার দিক থেকে কম অর্জন নেই এই স্ট্রাইকারের। রিয়ালের হয়ে ২৬৪ ম্যাচে করেছেন ১২১ গোল ও ৫৬ এসিস্ট। বার্সার স্বর্ণযুগকে ভেঙ্গে জেতেন তিনটি লা লিগা, একটি কোপা দেল রে ও দুটি স্প্যানিশ সুপার কাপ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে গিয়ে ৩ বারই দল ব্যর্থ হওয়ায় অবশ্য অধরা রয়ে গিয়েছে ইউরোপ সেরার শিরোপা।
নিজের গোল করার দক্ষতা তিনি ধরে রাখেন ইতালিয়ান লিগেও। রিয়াল ছেড়ে ২০১৩ সালে নাপোলিতে যোগ দেওয়ার পর ১৪৬ ম্যাচে করেন ৯১ গোল ও ২৬ এসিস্ট। নেপলসের ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন কোপা ইতালিয়া ও সুপার কোপা ইতালিয়া। তাছাড়া সিরি ‘আ’তে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩৬ গোল স্পর্শ করেন এই ক্লাবের হয়েই। রেকর্ড ৯০ মিলিয়ন ইউরোতে ২০১৬ সালে জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার পর ১৪৯টি ম্যাচ খেলে জালের ঠিকানা পেয়েছিলেন ৬৬ বার। তিনবার সিরি ‘আ’ জেতেন। এমনকি ২০১৬-১৭ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়ালের বিপক্ষে না হারলে অর্জন হয়ে যেত এই স্বপ্নের শিরোপাও।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৭৫ ম্যাচে ৩১ গোল করা হিগুয়েইন দেশের হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন। সেই ম্যাচে বাস্তিয়ান শোয়েন্সটাইগারের ভুল হেড থেকে বল পেয়েও সহজ গোল মিস করায়, আলবিসেলেস্তাদের অর্জন হয়নি ১৯৮৬ সালের পর পুনঃরায় বিশ্বসেরা হওয়া। এরপর ২০১৫ সালের চিলিতে ও ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে কোপা আমেরিকা ফাইনালে দুইবারই চিলির বিপক্ষে গোলের সুযোগ হারায় হেগুয়েইন। এই তিন ম্যাচে হিগুয়েইন মিস না করলে আর্জেনটিনর ইতিহাস অন্যরকম হতেও পারতো। আলবিসেলেস্তা সমর্থকরা বা আরও সুক্ষভাবে বললে লিওনেল মেসির একনিষ্ঠ ভক্তরা, ঠিক এই কারণে ‘এল পিপিতা’কে ক্ষমার অযোগ্য ভাবেন। তবে এতো সমর্থকদের স্বাধীনতা। তারা যেমন মাথায় তুলে রাখেন, তেমনি একটা ভুলের কারণে ছুড়েও ফেলেন মাঝে মাঝে।
২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা শেষ ১৬ থেকে বাদ পড়ার পর জাতীয় দল থেকে অবসর নেন হিগুয়েইন। দেশের হয়ে কোনো শিরোপা না জেতার আক্ষেপটা তাকে পোড়াবে সব সময়ই। তবে তার ক্যারিয়ারে আছে অনেক চোখ ধাঁধানো গোল ও দারুণ মুহূর্ত। বিদায়ের পর সেই সুসময়গুলোই আকড়ে ধরে রাখতে চাইবেন হিগুয়েইন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।