পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে ৩১০০ একর খাস জমি, পাহাড় টিলাসহ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি এখনও পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের কব্জায় রয়ে গেছে। দফায় দফায় অভিযানে এ পর্যন্ত ৭০০ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। পেশাদারী দাগি অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ওই জঙ্গল সমিলমপুর আশপাশের অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাছাড়া দখলবাজ ভূমিদস্যুরা পাহাড় কেটে মাটি ও বালু লুট করার জন্য গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম গ্যাস সঞ্চালন লাইনের উপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণভাবে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা তৈরী করেছে। এই গ্যাস পাইপ লাইনের উপর দিয়েই পাহাড় টাকায় ব্যবহৃত স্কেভেটর, ড্রাম ট্রাকসহ মাটি ও বালুবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করছে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে ভয়াবহ বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে প্রশাসনের তরফে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে জঙ্গল সলিমপুর ও আলী নগরসহ পুরো এলাকা অবৈধ দখলমুক্ত করতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ২০ দফা সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তয়ানে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে ওই এলাকাকে ঘিরে সরকারের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে। পাহাড়, টিলা, বন-বনানী আর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা এই বিশাল এলাকা দখলমুক্ত করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে এটি একটি উপ-শহর হিসাবে গড়ে উঠবে বলে জানান প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করতে গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জঙ্গল সলিমপুরের ১২ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি দখলমুক্ত করে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০ দফা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান আরও জোরদার করা। উচ্ছেদ অভিযান ও তৎপরবর্তী সময়ে এলাকায় এবং পাশর্^বর্তী হাইওয়েতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন। গ্যাস সঞ্চালন লাইনের ওপর তৈরি করা সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করা। পাইপ লাইনের ওপর গড়েওঠা সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা।
ওই এলাকার পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন মামলার আসামি তথা অপরাধীদের গ্রেফতারে দ্রুত সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা। উচ্ছেদ পরবর্তীতে খাস জমি যাতে পুনর্দখল না হয় সেজন্য সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর ক্যাম্প ও জেলা প্রশাসনের মনিটরিং অফিস স্থাপন। সন্ত্রাসী এবং ভূমিদস্যুরা যে সকল বসতি স্থাপনকারীদের স্বেচ্ছায় জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর ত্যাগ করতে বাধা দিচ্ছে তাদের নিরাপদে এলাকা ত্যাগ করতে সহায়তা করা। পাহাড়-টিলা কেটে যারা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মামলা। এলাকার খাসজমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি চিহ্নিতকরণ।
পাহাড়-টিলা-বনভূমি কেটে গড়ে ওঠা ওই এলাকায় কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধাদি নির্মাণ করা থেকে বিরত থাকা। সেখানে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ইন্টারনেট, ডিস লাইন, টেলিফোন, মোবাইল টাওয়ার, ব্যাংক, এটিএম বুথ স্থাপন বা সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখা। অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত সকল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা। উচ্ছেদ কার্যক্রম, সার্ভে, উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য সেখানে অস্থায়ী ব্যারাক, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির অফিস জঙ্গল সলিমপুরে স্থানান্তর করারও সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আর্থিক, কারিগরিসহ সর্বাত্মক সহযোগিতার নির্দেশনা দেয়া হয় সভায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সহসা র্যাব-পুলিশের সহায়তায় সেখানে উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করা হবে। প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা নিজে থেকে সেখান থেকে সরে গেছেন তাদের মধ্যে যারা ভূমিহীন তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে সিডিএর পক্ষ থেকে সেখানে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে একটি কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগ করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গল সলিমপুরে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে, জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় অপরাধীরা অবস্থান করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ করে তারা সেখানে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। আবার চট্টগ্রাম মহানগরীসহ আশপাশের জেলায় অপরাধ করে পেশাদার অপরাধীরা ওই এলাকায় গিয়ে আত্মগোপন করছে। তাদের এসব আস্তানা এখনও উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
এ অবস্থায় আশপাশের অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনাসহ জঙ্গল সলিমপুর এখন সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৯ হাজার কোটি টাকার সরকারি ভূমির পাশাপাশি সেখানকার পাহাড়-টিলায় প্রাকৃতিক ও বনজ সম্পদে ভরপুর এলাকার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এ বিশাল সরকারি সম্পত্তি সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যুদের কবজা থেকে দ্রুত উদ্ধার করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে। চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা শেষে ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের গ্রেফতার এবং অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।