২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
চলতে ফিরতে অনেক কর্মজীবী বন্ধু ও স্বজনদের দেখি কোনো ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছেমতো ডায়েট করেন। দৈনন্দিন স্বাভাবিক পারিবারিক খাবার বাদ দিয়ে প্যাকেটজাত ও কৌটাজাত খাবার গ্রহণ করেন। যেমন সারাদিনে ভাত বা রুটি না খেয়ে বরং বাজার থেকে ক্রয়কৃত মোয়া, নিমকি, মুড়ালি, বিস্কুট, অধিক লবণযুক্ত কৌটাজাত বাদাম, অধিক চিনি ও শর্করার প্রলেপযুক্ত মচমচে স্ন্যাকস, ওটস, চিপস এসব খাদ্য গ্রহণ করে। জেনে না জেনে তাই অনেকেই জাঙ্ক ফুড খাচ্ছি। খাদ্য তালিকায় প্রধান শর্করাসহ সুষম খাবার পরিমিত পরিমাণে না থাকায় ক্ষুধা নিবৃত্ত হয় না এবং সারাক্ষণই এটা ওটা চিবুতে থাকেন। ফলে ভালোর চেয়ে মন্দ হয় বৈকি! অধিক খরচ, অধিক মানসিক চাপ ও অতিমাত্রায় পেট ফাঁপা, আলসার, মুটিয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি বিকল হওয়ার একটা সহজ পথ তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে কি ধরনের খাবারগুলো জাঙ্ক ফুড এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়েই আলোচনা করব :
জাঙ্ক ফুড কি : যেসব খাবারে পুষ্টিমূল্য কম থাকে ফ্যাট, চিনি ও লবনের অধিক উপস্থিতি থাকে এবং যেসব খাবারে ক্যালরিমূল্য অধিক কিন্তুু ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার কম থাকে, তাদেরকে জাঙ্ক ফুড বলে। এসব খাবারে চর্বি, কার্বনেট, রাসায়নিক পদার্থ, কৃত্রিম রং, লবণ ও চিনির মতো ক্ষতিকর দ্রব্যের আধিক্য থাকে। এসব খাবার দেখতে আকর্ষণীয় ও খেতে সুস্বাদু; কিন্তু ক্ষতির প্রভাব অনেক বেশি।
জাঙ্ক ফুড কোনগুলো : কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, চিপস, বার্গার, পিৎজা, চকলেট, মিষ্টি, প্রক্রিয়াজাত মাংস, স্ন্যাক্স, কোমল পানীয়, ডোনাট, ক্রিম জাতীয় খাবার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও সব ধরনের ফাস্ট ফুডজাতীয় খাবার।
জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর দিকসমূহ
১. যখন জাঙ্ক ফুড খুব ঘন ঘন খাওয়া হয়, তখন জাঙ্ক ফুডে পাওয়া অতিরিক্ত চর্বি, সাধারণ কার্বোহাইড্রেট এবং প্রক্রিয়াজাত চিনি স্থূলতা, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং অন্যান্য অনেক দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য অবস্থার ঝুঁকি বাড়ায়।
২. নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্কের কগনিটিভ মেমরি।
৩.চিজ বার্গার, ফিঙ্গার চিপসে থাকে অতিরিক্ত নুন বা অ্যাডেড সুগার। এগুলো বেশি খেলে তাই শরীরে লবণ ও পানির পরিমান বেড়ে ব্লাড প্রেসার ও হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।
৪. জাঙ্ক ফুডে যা একেবারেই থাকে না তা হল ফাইবার। ফলে জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে কন্সটিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
৫. শুধু শরীরের নয়, জাঙ্ক ফুড ক্ষতি করে ত্বকেরও, কার্বোহাইড্রেট, অ্যাডেড সুগার, অ্যাডেড সল্ট ব্রণ ও অ্যাকনির সমস্যা বাড়ায়।
৬. নোনতা জাঙ্ক ফুডে যেমন অ্যাডেড সল্ট থাকে, তেমনই কেক, প্যাস্ট্রির মতো খাবারে থাকে অ্যাডেড সুগার যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
৭. জাঙ্ক ফুডে থাকে প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম যা হাড়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ।
৮. অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খেলে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।
৯. এছাড়া ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা, দাঁত ক্ষয়সহ খিটখিটে মেজাজও অনেক ক্ষেত্রে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে হয়ে থাকে।
১০. জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, আইবিএস সহ দীর্ঘমেয়াদি পেটের সমস্যাও হয়ে থাকে।
এমতাবস্থায় যদি পরিমিত পরিমাণে, দৈনন্দিন, স্বাভাবিক পারিবারিক সুসম খাবার গ্রহণ করা যায় ও অলসভাবে জীবনযাপন না করে কর্মব্যস্ত, পরিশ্রমী, হাসিখুশি জীবন বেছে নেয়া যায় তবে খুব সহজে সুন্দর ও সুস্থ জীবন অতিবাহিত করা সম্ভব।
নাজিয়া আফরিন
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মকর্তা,
মানবিক সাহায্য সংস্থা, বনানী, ঢাকা।
সিনিয়র পুষ্টিবিদ (এক্স), কিংসটন হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।