Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরইবি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি : সাভার কবিরপুরে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৫:২৮ পিএম | আপডেট : ৫:৩৪ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিদ্যুতের লোডশেডিং সময় যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, সে সময়ে মানুষ প্রস্তুত থাকতে পারে। সে কারণে এলাকাভিত্তিক, কখন কোন এলাকায় কত ঘণ্টা লোডশেডিং হবে, এটার একটি রুটিন তৈরি করা হয়েছে। তা বাস্তাবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নিদের্শনা দেয়া হলে সঠিক ভাবে পালন করছে না পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি)। কোথায় কখন লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে তা বলতে পারছে না আরইবির কর্মকর্তারা। শ্রীপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. ইউসুফ আলী, চেন্দ্রা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানীর শত শত অভিযোগ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড চেয়ারম্যান মোহাং সেলিম উদ্দিন কথা বলতে রাজি হননি।
চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকঠাক পাচ্ছে না। চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। কিন্তু জ্বালানি সংকটে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না এই সক্ষমতা। গ্যাস না পেয়ে চালানো হচ্ছে চড়া দামের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে শহরের মানুষ দিনরাত বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আর দিনে গড়ে চার ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে ভুগছে গ্রামের মানুষ। ঢাকা শহরের আশপাশের এলাকায়ও বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে দিনে চার-পাঁচবার। সাভারের কবিরপুরে ১২ ঘন্টায় মধ্যে ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। কেউ অভিযোগ করলেও তার কোন প্রতিকার মিলছে না। এ দিকে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-১ এর কর্মকর্তা টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন না বলে পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। বিদ্যুৎ সঞ্চালন, উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানির তথ্য এবং কয়েকটি এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যুৎ খাতে এমন পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি ভুগছেন দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহকেরা। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকঠাক পাচ্ছে না বলেই এটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ সংস্থাটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ মো. শাহজাহান কবীর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ইনকিলাবকে বলেন, আমার চাহিদা রয়েছে ৩৫৬ মেগাওয়াট আর পেয়েছি ২৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সে খানে আজ ১২টা পর্যন্ত ৯৮ মেগাওয়াট লোড, বিকালে ৯৬ মেগাওয়াট লোড হয়েছে। ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংকট।
গত ২ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন,সেপ্টেম্বর শেষে অক্টোবর এবং নভেম্বরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরো ভালো হবে। বৈশ্বিক তৈরী পরিবেশের জন্য সারা বিশ্বেই জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা বিদ্যমান। বিদ্যুৎ বিভাগ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দিকে যাচ্ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তা বাধাগ্রস্থ করেছে। আগামী মাস বা তার পরের মাসে আরো ভালো অবস্থায় যাবে।
দেশে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মোট ছয়টি কোম্পানি। ৪ কোটি ২২ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক আরইবির। দিনে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫৮ শতাংশ ব্যবহার করে তারা। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতি থাকছে ৫০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। এর ফলে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। অনুমোদিত লোডের বেশি ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। তাই গ্রাহকের উচিত, প্রয়োজনে লোডের অনুমোদন বাড়িয়ে নেওয়া। আরইবির বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির প্রতিবেদন বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ঢাকা জেলার সাভার, গাজীপুর, নেত্রকোনা, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও টাঙ্গাইল জেলায়। এসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় কম এবং জাতীয় গ্রিড থেকেও প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। একই কারণে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নাটোর, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের অনেক এলাকাতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকায় চট্টগ্রাম, বরিশালে তুলনামূলক কম হচ্ছে লোডশেডিং। তারপরও বরিশালে লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঢাকার পাশে সাভার কবিরপুর এলাকার গ্রাগক এনামুল হক ইনকিলাবকে দিনে ৭ থেকে ৮বার বিদ্যুৎ যায়। কখনো ২০ মিনিট, কখনো ১ ঘণ্টা পর আসে। আর সাভার উপজেলা সদরে সালমা বলেন, দিনে কমপক্ষে চার ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের মধ্যে থাকতে হয়। আর পল্লী বিদ্যুতের লোকেরা টাকা ছাড়া কোন কাজ করে না। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আরইবির এলাকায় সাভার ও নারায়ণগঞ্জের কারখানায় প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি। ডিজেল কিনে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের গ্রাহক কাদের আলী ইনকিলাবকে বলেন, দিনে চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুৎ যায়। কখনো ২০ মিনিট, কখনো ১ ঘণ্টা পর আসে। আর সাভারের শোভা জান্নাত বলেন, দিনে কমপক্ষে চার ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের মধ্যে থাকতে হয়।
গ্যাসের সংকট এবং তেল ও কয়লার উচ্চ দামে উৎপাদন ধরে রাখা কঠিন। সামনে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়তে পারে। এতে ঢাকাতেও হয়তো লোডশেডিং দিতে হবে। রোজার পর লোডশেডিং বাড়তে পারে। এবারের গ্রীষ্ম কষ্ট করেই কাটাতে হবে গ্রাহকদের। ৭ এপ্রিল রাতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ওই দিনও ৬৭৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরইবির এক কর্মকর্তা। আর সর্বশেষ লোডশেডিং করতে হয়েছে ৫১১ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ ৮৫৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে ৪ এপ্রিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ