Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৯ পিএম

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সরকার উৎখাতের পরপরই অং সান সু চিকে গৃহবন্দি করা হয়। এরপর সু চির মুক্তির দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ব্যাপক গণআন্দোলন চলেছে।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক জান্তাকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বিরোধিতা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিদ্রোহ। বিবিসি বার্মিজ সার্ভিসের সাংবাদিক অ তু সান বলছেন, অভ্যুত্থানের পৌনে দু'বছর পরও দেশটির নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে আসেনি। তিনি বলেছেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে মোট সাতটি অঞ্চলে--কাচিন, কাইয়া, কাইয়িন, সিন, রাখাইন এবং দেশের মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্য যেমন ম্যাগুই এবং জাগাই অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে।

এসব রাজ্যের মধ্যে সিন, কাইয়া, ম্যাগুই এবং জাগাই রাজ্য অতীতে খুব শান্তিপূর্ণ ছিল, সেখানে কোন লড়াই-সংঘাত ছিল না। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর বিরোধীদের দমন করতে ব্যাপক শক্তি ব্যবহার করছে সেনাবাহিনী। এখন মিয়ানমারের কোনো কোনো অঞ্চলে একাধিক বাহিনীর সাথে লড়তে হচ্ছে সামরিক জান্তাকে। এ সপ্তাহেই সেনাবাহিনীর জঙ্গী হেলিকপ্টার থেকে উত্তরাঞ্চলের সাগাইঙ্গ অঞ্চলের একটি স্কুলে হামলা চালানোর পর অন্তত ১১টি শিশু নিহত এবং আরও ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ।

সামরিক সরকার বলেছে, তারা স্কুলে লুকিয়ে থাকা বিদ্রোহীদের ওপর আক্রমণ করেছিল। এ মূহুর্তে চারটি রাজ্যে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত তীব্র রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে রাখাইন অন্যতম, এবং এই সহিংসতার ছোঁয়া এসে লেগেছে বাংলাদেশেও। বিবিসির সাংবাদিক অ তু সান বলেছেন, কেবল অভ্যুত্থানবিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়, এখন জান্তাবিরোধী যেকোন মত-প্রকাশ বা কর্মকাণ্ডও দমন করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে হামলা, নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং গুমের ঘটনা ঘটছে।

এছাড়াও অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি এনএলডিকে নানাভাবে চাপে রাখা হচ্ছে। দুর্নীতি এবং নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে সু চিকে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জুলাই মাসে চারজন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে লক্ষ লক্ষ মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ ও ভারতে।

এখন কেবল এনএলডি নয়, তার পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং এর মধ্যে উপজাতীয় বিভিন্ন গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই যারা সংগ্রামে শামিল হয়েছিল, তারা সবাই মিলে একটা সমান্তরাল সরকার গঠন করেছে, যা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট নামে পরিচিত। এই ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রচারণা চালাতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রকাশ্যে দেখা করেছেন আসিয়ান ও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিবিসির বার্মিজ সার্ভিসের অ তু সান বলছেন, সমান্তরাল সরকারের পাশাপাশি মিয়ানমারের তরুণ প্রজন্মের বহু মানুষ এখন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দিচ্ছে এবং সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এদের একটি বড় অংশ গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের নেতা-কর্মী, এবং সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার। অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে নতুন প্রায় ১০০টির মত সশস্ত্র গোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করেছে, এবং এদের বেশিরভাগই দুর্গম এলাকাভিত্তিক। আর গোষ্ঠীগুলো সারা দেশের গণতন্ত্রপন্থীদের সংগঠিত করে একটি বাহিনী গঠন করেছে, যার নাম দেয়া হয়েছে পিপল'স ডিফেন্স ফোর্স- পিডিএফ।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, জান্তাবিরোধী আন্দোলন বিভিন্ন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার কারণে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যাপক চাপের মুখে পড়ছে সামরিক বাহিনী। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার চাপ, যা মিয়ানমারের অর্থনীতিকে দুরবস্থায় ফেলেছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকেরা।

তবে নানাদিক থেকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা চাপে পড়লেও এখনই তাদের উৎখাত করা যাবে পরিস্থিতি এমন নয়। কিন্তু যেভাবে সহিংসতা নানা মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে, প্রাণহানি এবং অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে, তাতে এটুকু আদাজ করা যায় যে এ সংঘাত হয়তো চলবে আরো অনেকদিন। এবং তার ফলে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী সব দেশেরই আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ছে। সূত্র: বিবিসি।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ