পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুন্সীগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন ভূঁইয়া মৃত্যুবরণ করেছে। ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন তার মা লিপি আক্তার। পরিবারের অবলম্বন বড় ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। ৮ মাসের শিশু শাহাদ চেনার আগেই হারিয়ে ফেলল বাবাকে। শাওনের মায়ের আক্ষেপ, ৮ মাসের নাতিটা তার বাবাকে এখনো চিনতেই পারেনি, তার আগেই বাবাকে হারিয়ে ফেলল। এখন এই বাচ্চা শিশুকে সারাটা জীবন চলতে হবে বাবা ছাড়া। কার হাত ধরে ছেলেটা হাটতে শিখবে, কার সাথে শিখবে পথ চলা। বাচ্চা ছেলেটার ভবিষ্যৎ এখন কি হবে? তারা তো ছেলেটার হাতে-পায়ে গুলি করতে পারতো। একেবারে মাথায় গুলি করে দিল। গতকাল শুক্রবার শহীদুল ইসলাম শাওনের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের মুখে এমন আক্ষেপভরা কথা শোনা যায়।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকার মো. শোয়াব আলী ভূঁইয়ার ছেলে শাওন। দুই বছর আগে তার বিয়ে হয়, রয়েছে ৮ মাসের একটি ছেলে সন্তান। অটো চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। গত বুধবার মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সাথে বিএনপির সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয় শাওন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। গতকাল শাওনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান হারিয়ে দিশাহারা হয়ে ঘরের এক কোণে বসে কাঁদছেন শাওনের মা লিপি আক্তার। বাড়িতে দুটি ভাঙা টিনের ঘর। আরেকটির ভেতর বসে কাঁদছিলেন শাওনের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার। বাড়ির ছেলে শাওন। মিরকাদিম পৌরসভা ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী হিসেবে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তিনি।
বুধবার বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়ার আগে মাকে বলেছিলেন, ঘুরতে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে। লিপি আক্তার বলেন, আমার চার ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে শাওন সবার বড়। ছেলেটা অল্প বয়সে বিয়ে করে। সে আমাদের সংসারের হাল চালায়। গেল বুধবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিল, ঘুরতে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে। কিন্তু আমার ছেলে আর ফিরে এল না। ওরা আমার ছেলেকে ধরে মাথায় গুলি করে মেরে ফেলল।
শাওনের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ি দুই জায়গায়ই থাকতাম। ছেলে হওয়ার পর থেকে বাবার বাড়িতে ছিলাম। গত সোমবার শাওন আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল। সেদিন আসার সময় আমাকে বলেছিল, দু-এক দিন পরে আমাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাবে। এ জন্য সে বাজার-সদাই করবে। তাই এ কয়েক দিন সে খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে।’ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী সাদিয়া। এরপর আবার বলেন, ‘শাওন আমাকে ও ছেলেকে বাড়ি নিয়ে এল না। আমরা নিজেরাই এলাম। শাওন তো আর এল না। আমি শাওন হত্যার বিচার চাই।’
শাওনের ছোট ভাই সোহান ভূঁইয়া জানান, শাওন বাবার সঙ্গে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। বুধবার বিএনপির সমাবেশে গিয়েছেন তিনি। সেখানে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে মাথায় গুলি করে। এতে তাঁর ভাই তখনই জ্ঞান হারান। বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শাওনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এর পর থেকে তাঁর ভাই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলীয় নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জ শহরের অদূরে মুক্তারপুরে বুধবার বেলা তিনটার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে শাওন ভূঁইয়া ও বিএনপির সমর্থক জাহাঙ্গীর মাদবর (৩৮) গুরুতর আহত হন।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ১ হাজার ৭৬৫ জনকে আসামী করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় ২টি মামলা করা হয়। একটির বাদী পুলিশ এবং অন্যটির বাদী স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা। সংঘর্ষের পর থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোর্টে হাজির করে। এর মধ্যে একটি মামলায় ৩ নম্বর আসামী নিহত শাওন।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান- পুলিশের উপর হামলা, অস্ত্র লুটের চেষ্টা সরকারি কাজে বাঁধার জন্য একটি মামলায় পুলিশের পক্ষে এসআই মাঈনউদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করে, আরেকটি মামলার বাদী স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মালেক। আসামীদের ধরতে অভিযান চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।