২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ঋতু পরিবর্তনের কারণে এসময় চোখের রোগবালাই হয়ে থাকে। তারমধ্যে একটি হচ্ছে চোখ ওঠা। এটি আসলে একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। কনজাংটিভাইটিস বা চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা বলে। চোখ ওঠার মূল কারণ ভাইরাস এবং এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। তবে চোখ ওঠায় আক্রান্ত কারও চোখের দিকে তাকালে কারোর চোখ ওঠে না। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত চোখ কিছুদিন পর ভালো হয়ে যায় ঠিক, কিন্তু আশপাশে অনেককেই আক্রান্ত করে বা করতে পারে। তবে চোখ ওঠা রোগী মূলত সে তার নিজের জন্য সমস্যা নয়, বরং অন্যের জন্য সমস্যা। কারও চোখ ওঠা হয়তো তিন দিনে ভালো হয়ে যায়, কারোর আবার ৩ সপ্তাহ লাগতে পারে। সেটা নির্ভর করে কাকে কী ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত করেছে এবং সেই রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন তার ওপর।
চোখ উঠার সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন চুলকানি, অস্বস্তি, ব্যথা, আলোক সংবেদনশীলতা, ঘন সাদাটে বা হলদেটে নিঃসরণ ইত্যাদি। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই কনজাংটিভাইটিসের কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস। তবে অ্যালার্জি, ঠান্ডা সর্দি বা চোখ কোনো রাসায়নিক বা ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে এলেও কনজাংটিভায় প্রদাহ হয় এবং চোখ লাল দেখায়। ভাইরাসজনিত চোখ ওঠায় পাতলা বর্ণহীন পানি পড়ে বেশি। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত হলে নিঃসরণটি ঘন ও একটু হলদেটে হয়ে থাকে।
> চোখ উঠা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ:-
* চোখের চারপাশে হালকা গোলাপী বা লাল রং হতে পারে।
* চোখের পাতা ফুলে যায়।
* চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে।
* চোখ থেকে পানি পড়তে পারে।
* চোখ থেকে ঘন হলুদ অথবা সবুজাভ হলুদ রঙের ময়লা জাতীয় পদার্থ বের হতে পারে।
* সকালে ঘুম থেকে উঠার পর চোখের দুই পাতা লেগে থাকে।
* নবজাতকের চোখ উঠা একটি বিশেষ বিষয়।
* ওষুধপত্র দিলেও নবজাতকের চোখ দুই-তিনদিন লাল অথবা ফোলা থাকতে পারে।
* যদি লালাভ রং এবং ফোলা দীর্ঘসময় ধরে থাকে তখন অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
> চোখ উঠলে যা করতে হবে:-
যেসব কারণে বিশেষত এলার্জিক কোনো বস্তু, কেমিক্যালস কিংবা পরিবেশ দ্বারা চোখ উঠে সেসব বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে। আর যদি আপনার শিশুর চোখ উঠে থাকে সেক্ষেত্রেও হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং চোখের পাতাগুলো খোলা রাখতে হবে। বড় বাচ্চারা চোখে কালো চশমা পরতে পারে।
> কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন:-
* যখন আপনার চোখ থেকে ঘন হলুদ কিংবা সবুজাভ হলুদ রঙের তরল পদার্থ বের হয়।
* চোখ ব্যথা থাকলে।
* সূর্যালোকে চোখ ব্যথা করলে।
* যখন চোখে একদমই কিছু দেখতে পারে না অথবা পারলেও দেখতে সমস্যা হয়।
* যখন পরিবেশগত বিষয়ে কিংবা কোনো এলার্জিক বস্তুর জন্য চোখে অসুবিধা অনুভব করে।
* শিশুর বয়স যদি ২ মাসের কম হয়।
* চোখের পাতা যদি ফুলে উঠে কিংবা লাল হয়ে যায়।
যা করবেন না :
কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।
শিশুকে জোর করে চোখ খুলতে বলা যাবে না।
> চোখ উঠা থেকে যে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারেঃ-
কর্নিয়ায় ঘা, কর্নিয়া ছিদ্র হয়ে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
> প্রতিকার:-
* বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখ উঠা বা কনজাংটিভাইটিস পরিবারের একজনের থেকে অন্যজনের হতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সবার পৃথক কাপড়, তোয়ালে থাকতে হবে।
* পুরো হাত জীবানুমুক্ত করে পরিষ্কার করতে হবে, চোখে হাত দেয়া যাবে না।
* যেসব বিষয় শিশুর জন্য এলার্জিক তা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।
> চোখ উঠা রোগীর ঘরোয়া পরামর্শঃ-
চোখ উঠা রোগ থেকে বাঁচতে হলে কিছু পরামর্শ মেনে চলা উত্তম। পরামর্শ গুলো হল:
* এক জনের ব্যবহৃত তোয়ালে অন্যজন ব্যবহার না করা।
* আক্রান্ত চোখ স্পর্শ করলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।
* ডাক্তারের পরামর্শমত সঠিকভাবে সঠিক সময় ঔষধ নেয়া।
* ঘনঘন চোখ ঘষা থেকে বিরত থাকা ও চোখে বার বার পানির ঝাপসা না দেয়া।
* অসুস্থ চোখে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যাবে না।
* ধূলা-বালি ও সূর্যের আলো থেকে চোখ রক্ষায় কালো সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
* পুকুরের পানিতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
* চোখ উঠা ছোঁয়াচে রোগ। তাই পরিবারের অন্যান্যদের সাথে মেলামেশা কমানো উচিৎ।
* চোখের যেকোনো রোগেই অবহেলা করবেন না। কারণ সামান্য ভুলের জন্য সারাজীবন আফসোস করা লাগতে পারে।
* ঠান্ডা পানির ভাপ দেওয়া:-অ্যালার্জি প্রভাবিত জায়গাগুলোতে ঠান্ডা পানির প্রভাব দিলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। ঠান্ডা পানি কাপড় ভিজিয়ে ওই অ্যালার্জি সমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে রাখা যেতে পারে অথবা ক্যামোমিল টী-ব্যাগও ঠান্ডা ভাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
* শসা:-শসা গোল গোল করে চোখের উপর দেওয়া যেতে পারে। শসা চোখের ফোলাভাব, চুলকানি ইত্যাদি কমায়।
* গোলাপ জল:- গোলাপ জল চোখের অ্যালার্জি নিরাময়ের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি চোখের জ্বালাকে প্রশমিত করে, ঠান্ডা রাখে এবং চোখকে পরিষ্কার রাখে। এটি চোখের ড্রপ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
* গ্রীন টি:-গ্রীন টি অ্যালার্জির জন্য সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি ওষুধ । এটি চোখের প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতিতে অ্যান্টি প্রদাহজনক ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। উপরের পরামর্শগুরো কেবলই সচেতনতার জন্য। চোখের যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
> হোমিও সমাধানঃ-
যেসব মেডিসিন প্রাথমিক ভাবে ব্যবহার হয়: রাসটক্স এর লক্ষণ চোখ ব্যথা, চোখের পাতা ফোলা, আলোক সংবেদী। চোখ জ্বলে, ঘন পিঁচুটি চোখ জুড়ে থাকে। ঠান্ডায় যন্ত্রণা বাড়ে, চোখ বুজে থাকলে আরাম লাগে। যে সকল রোগে রক্তজমা ও মুখচোখ লালবর্ন হয় সেইসব রোগে বেলেডোনা ব্যবহার হয়। চোখ থেকে অনেকসময় অ্যাসিডিক কিছু বা ঝাঁঝালো কিছু নির্গমণ হয়, যার ফলে চোখে জ্বালা করে, প্রদাহ হয়, চোখ দিয়ে পানি বের হয়। এইরকম হলে ইউফ্র্যাসিয়া ব্যবহৃত হয়। যখন চোখ দিয়ে একটা হলুদ পাতলা স্রাব বের হয়, চোখে জ্বালা করে এবং চুল্কায়, চোখের পাতাগুলো মনে হয় দানা বেঁধে আছে, তখন পালসাটিলা ব্যবহার করতে হবে। তবে আরো অনেক ঔষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে, তাই ঔষধ নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
মগবাজার মিডিয়া পাড়া, ঢাকা।
ইমেইল: [email protected]
মেবাইল.০১৮২২৮৬৯৩৮৯।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।