পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের রাজনীতিতে এইচ এম এরশাদের চার খলিফার অন্যতম ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। মিজানুর রহমান চৌধুরী, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ, কাজী জাফর আহমদের পর তিনিও চলে গেলেন। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কাছে তার পরিচিত ছিলেন বটবৃক্ষ হিসেবে। দেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত এবং মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন এমন শত শত নেতাকে ছায়া দিয়েছেন, রাজনীতিক হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ’৫২ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেছেন। এরপর রাজনীতির কারণে কয়েক দফায় জীবনের ২২টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। সেই বরেণ্য রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে গতকাল বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে বিএনপির নয়াপল্টস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়াম এবং গুলশানের আজাদ মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মৃত্যুতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাগপা, গণদল, এনপিপি, ডিএলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ ও দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের চীপ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৪ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি স্পষ্টভাষি রাজনীতিক হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুর খবর পেয়েই তার গুলশানের বাসায় ছুটে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্ত্রী কবি সালেহা হোসেন কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেন। পুত্র অ্যারোনটিক ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার রানা চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গেছেন। কন্যা দিনা ও তার স্বামী মেজর (অব) মোয়াজ্জেম হোসেন মৃত্যুর সময় তার পাশে ছিলেন। গতকালই ছেলে চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে থাইল্যাÐ থেকে ছুটে এসে মরহুম বাবার নামাজে জানাজায় শরীক হন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শাহ মোয়াজ্জেমের প্রথম নামাজে জানাজা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। পরে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের রুহের শান্তি কামনায় মোনাজাতে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিএনপি। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এসময় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মৃতিচারণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাধিকার আন্দোলন ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ভ‚মিকা রেখেছেন তিনি। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার সেই আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই অত্যন্ত সুবক্তা। আর তিনি মুক্তিযুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের পরে এবং আগে বিশাল ভ‚মিকা রেখেছেন। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ভারতীয় সংসদে বাংলাদেশের পক্ষে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তা ঐতিহাসিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, আজ গণতন্ত্র নেই। এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সামনে। আজ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মতো একজন সংগ্রামী নেতা আমাদের খুবই প্রয়োজন ছিল।
জানাজায় অংশ নেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, আমান উল্লাহ আমান, আবুদস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, ইশরাক হোসেন প্রমুখ। এছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (জাফর) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি প্রমুখ জানাজায় অংশ নেন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের দ্বিতীয় জানাজা বাদ জোহর মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় নামাজে জানাজা বাদ এশা ঢাকার গুলশান আজাদ মসজিদে (সেন্ট্রাল মসজিদ) অনুষ্ঠিত হয়। পরে বনানী কবরস্থানে সহধর্মিণী মরহুম কবি সালেহা হোসেনের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলার দোগাছি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫৪ সালে ঢাকার সেন্টগ্রেরিজ হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ, জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এমএ এবং এলএলবি পাশ করেন। ইতিহাসের অনেক আন্দোলন, সংগ্রামের নেতৃত্ব দানকারী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫২ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান আমলেও কারাগার ছিলো তার ঠিকানা। বন্ধুমহলে ‘জেল বার্ড’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫৮ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরের বছর থেকে পর পর ৩ বার ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলনের মহানায়ক শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন আইয়ুববিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও ১৯৬৯ সালের ১১ দফার অন্যতম রূপকার মোয়াজ্জেম স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টে টানা আড়াই ঘণ্টা বক্তৃতা করেন। নিজ হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করা সে সময়ের জাতীয় নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু সঙ্গী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখেন। ১৯৭০ ও ৭৩৭৩ সালের উভয় নির্বাচনে তিনশ’ আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৭৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বার চীফ হুইপ নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব, মন্ত্রী, সংসদ উপনেতা ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শাহ মোয়াজ্জেম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি লেখালেখি করেছেন। তার লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রস্থ ‘বলেছি বলছি বলবো’, ‘নিত্য গারাগারে’, ছাব্বির নম্বর সেল’, ‘জেল হত্যা মামলা’ পাঠক মহলে ব্যপক সাড়া ফেলেছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।