পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মার্কিন গণতন্ত্র এখন আর রোল মডেল হিসেবে বিবেচনার যোগ্য নয়। মার্কিন গণতন্ত্রের পতন বহু আগে শুরু হলেও এর নেপথ্য নিয়ন্ত্রকরা একই সঙ্গে পশ্চিমা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এবং অধিকাংশ থিঙ্কট্যাংক ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হওয়ায় এ নিয়ে আলোচনা খুব একটা হয়নি। মার্কিন গণতন্ত্রের অধ:গামিতার নেপথ্যে কালোহাত ও ডার্কমানি বিষয়ক আলোচনা যে একেবারে হয়নি তা নয়। এই ডার্কমানির কর্পোরেট মালিকানা ও তাদের ছদ্মবেশি শাখা-প্রশাখার অন্তরালে বসে সংখ্যালঘু একটি গোষ্ঠী মার্কিন রাজনীতি, অর্থনীতি, গণতন্ত্র, ব্যাংকিং সিস্টেম এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদাররা দুইশ’ বছর আগেই মার্কিন অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে যে আশঙ্কা ও ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন, এখন তা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। তারা একটি পুঁজিবাদী নিয়ন্ত্রক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর দ্বারা মার্কিন গণতন্ত্র ও অর্থব্যবস্থার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। তারা বলেছিলেন, কোনো একদিন হয়তো মার্কিন নাগরিকরা দেখতে পাবে, তাদের পূর্ব পুরুষদের অর্জিত স্বপ্নের দেশটি হাতছাড়া হয়ে গেছে এবং তারা নিজেদের বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাস্তুহীন হয়ে পড়েছে। গত দশকের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কিন আবাসন খাত এবং পুঁজিবাজার। কোনো এক অদৃশ্য কালোহাতের ইশারায় রাতারাতি লাখ লাখ কোটিপতি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। সাম্প্রতিক করোনা মহামারিতে সেই মহামন্দার বিভীষিকাময় বাস্তবতা আবারো দেখা গেছে। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশেও কোটি কোটি মানুষ তাদের কর্মসংস্থান হারিয়ে অতি দরিদ্র হয়ে গেছে। একই সময়ে দেশের ব্যাংকগুলোতে কয়েক হাজার নতুন কোটিপতি গ্রাহকের নাম যুক্ত হওয়ার তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। একদিকে কোটি কোটি মানুষ নি:স্ব হচ্ছে, অন্যদিকে কয়েক হাজার মানুষের অ্যাকাউন্টে শত শত কোটি টাকা জমা হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিমাসে বিদেশে পাচার হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা পুঁজিবাদ প্রভাবিত অর্থব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্বব্যবস্থায় সবর্ত্র একই চিত্র দেখা যায়। যেখানে রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার উপর জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিয়ন্ত্রণ বেশি ফলপ্রসূ সেখানে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক লুণ্ঠন-দুর্বৃত্তায়ণের প্রভাব তত কম।
মাত্র দুইদিন আগে নিউইয়র্ক-ওয়াশিংটনে নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী বিমানহামলার একুশতম বার্ষিকী পালিত হল। সেই সন্ত্রাসী বিমান হামলার ঘটনার মাত্র তিরিশ মিনিটের মধ্যেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কোনো তথ্যপ্রমান ছাড়াই এ ঘটনার জন্য আলকায়েদা সন্ত্রাসী গ্রæপকে দায়ী করে পুরো মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে অন্তহীন যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আফগানিস্তান ও ইরাক দখলসহ দুই দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ন্যাটোর যুদ্ধে অন্তত ৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে এই সামরিক বাজেট খরচ করা হলেও মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো যুগ যুগ ধরে যে সম্পদ মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সঞ্চিত করেছিল, ছলেবলে নানা কৌশলে সে সব অর্থও বেহাত করা হয়েছে। সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েক-কাতার, বাহরাইন, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রথমে আলকায়েদার হুমকি, আইএস ও ইরানের জুজুর ভয় দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা চুক্তি করা হয়েছে। যৌক্তিক রাজনৈতিক বা প্রতিরক্ষা হুমকি না থাকলেও সেসব অস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদের উপরই ব্যবহার করা হচ্ছে। সিরিয়া ও ইয়েমেনের সমৃদ্ধ জনপদগুলো এখন ভুখা-নাঙ্গা মানুষের বিদ্ধস্ত জনপদে পরিনত হয়েছে। অন্তহীন যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শত শত বিলিয়ন ডলার উধাও হয়েছে এবং হতাহতের কথা না বললেও, কোটি কোটি মানুষ নি:স্ব কর্পদকশূন্য হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও। গত সোমবার ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্কিন জনগণের পারিবারিক সম্পদে রেকর্ড পতন ঘটেছে। মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক সম্পদের পরিমান ৬ লাখ ১০ হাজার ডলার কমে যাওয়ার তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার পাশাপাশি চারদশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়ে নাজেহাল মার্কিন সমাজ জীবন ও অর্থনীতি। তাদের বৈদেশিক ঋণের হার ও বাজেট ঘাটতিও সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। অন্তহীন যুদ্ধ ও একের পর এক দেশ দখল ও প্রক্সি ওয়ারের কারণে আগ্রাসী ও আক্রান্ত দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এলেও যুদ্ধবাজেটের হাজার হাজার কোটি ডলার জমা হয়েছে ওয়ার কন্ট্রাক্টর তথা মিলিটারি ইন্ডাসট্রিয়াল কমপ্লেক্সের কপোর্রেট বেনিফিশিয়ারিদের অ্যাকাউন্টে। জনগণের পকেট থেকে উধাও হয়ে যাওয়া এই বিপুল অর্থই বিশ্বের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অন্ধকারের ভেতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
গত ফেব্রæয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সমরাভিযান শুরুর পর থেকে আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনের জেলেনস্কি সরকারকে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার সামরিক বাজেট দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন। এ হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য খরচ হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ২৩ কোটি ডলার বা আড়াই হাজার কোটি টাকা। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বৃটেন, ফ্রান্সসহ ন্যাটোভুক্ত অন্যান্ন দেশও ইউক্রেনের যুদ্ধের খরচ যোগান দিচ্ছে। এই যুদ্ধে কোনো পক্ষের সরাসরি বিজয় লাভের সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। দুই দশক যুদ্ধ করেও ইরাকে, আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী কোনো রাজনৈতিক বা কৌশলগত বিজয় লাভ করতে পারেনি। পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত মার্কিন সাংবাদিক ক্রিস হেজেজ ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে সাবেক অন্তহীন যুদ্ধের আদলে একটি পার্মানেন্ট যুদ্ধের অর্থনৈতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, পেন্ডেমিক পরবর্তি ২০২৩ অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সিডিসি(সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বাজেট প্রস্তাব করেছে ১০.৬৭৫বিলিয়ন ডলার এবং (ইপিএ) এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ১১.৮৮১ বিলিয়ন ডলার। পক্ষান্তরে চলতি বছরে ইউক্রেনে সামরিক-মানবিক বাজেট বরাদ্দ এবং ইউরোপে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির বাজেট ইতিমধ্যেই ৫৩বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ৩৫ কোটি মার্কিনীর স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত সুরক্ষা বাজেটের চেয়ে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বা প্রক্সি ওয়ার বাজেট দ্বিগুনের বেশি। পুরো ন্যাটোসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সামরিক সহায়তা ও উপস্থিতি সত্বেও সেখানে ইতিমধ্যেই ইতিমধ্যেই জেলনস্কির বাহিনীকে সরাসরি পরাজয় বা নিগোসিয়েশনে যেতে বাধ্য করা থেকে বিরত রাখতেই এই বিপুল যুদ্ধব্যয় করা হচ্ছে মূলত কার স্বার্থে? এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকা থেকে ইউক্রেনে যে পরিমান অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হচ্ছে তা ১০ ভাগও যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে ব্যবহুত হচ্ছে না। ইউরোপের অন্যতম দুর্নীতিপরায়ন রাষ্ট্র ইউক্রেন থেকে এসব অস্ত্র কালোবাজারে চলে যাচ্ছে বলে মার্কিন সাংবাদিক লিন্ডসে ¯েœল তার রিপোর্টে দেখিয়েছেন। রাশিয়ার এই যুদ্ধটা এখন আর ইউক্রেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন পশ্চিমা একচ্ছত্র পুঁজিবাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাশিয়া এবং তার সহযোগিদের প্রতিকী যুদ্ধে রূপ লাভ করেছে। রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপে জ্বালানি সংকট তীব্রতর হতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বশংবদ সরকারগুলোও এখন ডলারের বিকল্প হিসেবে রাশিয়ান রুবল বা নিজস্ব মূদ্রায় রাশিয়ার সাথে জ্বালানি বিনিময়ে সম্মত হতে দেখা যাচ্ছে। সাংহাই কোঅপারেশন এবং ব্রিক্স দেশগুলোর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের উদ্যোগও লক্ষনীয় হয়ে উঠেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনস্কি একজন ইহুদি, সাবেক টিভি উপস্থাপক ও কমেডিয়ান। ইসরাইলের সাথে তার সম্পর্ক সবারই জানা। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর মস্কো-কিয়েভে দৌড়ঝাপ করতেও দেখা গেছে। একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের শুরুতে সম্ভবত এটি ছিল ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর মধ্যস্থতাকারীর ভ’মিকার অভিনয়। আর আমেরিকার সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক নতুন করে বলার কিছু নেই। ইসরাইলকে আমেরিকা চালায় নাকি ইসরাইল আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বে সে প্রশ্নও আছে। গত সপ্তাহে একটি সংবাদ বেরিয়েছিল, চীনের একটি প্রদেশের পাঠ্যপুস্তকে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে সে দেশের সংখ্যালঘু ইহুদিরা। এ নিয়ে মার্কিন ও ইসরাইলী ইহুদিদের নিন্দা ও প্রতিবাদের কথাও প্রকাশিত হয়েছে। তবে জায়নিস্ট ইহুদিরা যে আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে তা কোনো নতুন তথ্য নয়। এ সপ্তাহে আইসিএইচ অনলাইনে প্রকাশিত মার্কিন গবেষক ও মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফিলিপ জিরালডি’র নিবন্ধের শিরোনাম, ‘ইসরায়েল কনকোয়ার্স দ্য ওয়ার্ল্ড’। মার্কিন ইহুদিরা যেমন আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে একইভাবে তাদের সব রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতার নেপথ্যে থাকে ইসরাইলের স্বার্থ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতৃত্ব, গণমাধ্যম, প্রযুক্তি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক ইহুদিরা। মূলত তারাই পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই দাবির সমর্থনে ফিলিপ জিরালডি তার নিবন্ধে অনেকগুলো অকাট্য তথ্যপ্রমান তুলে ধরেছেন। একটি উদাহরণ হচ্ছে- ২০০১ সালে ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন বন্ধে অস্ত্রবিরতির আহŸান জানিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধিদলের নেতা শিমোন পেরেজ মার্কিন আহŸানে সাড়া দেয়ার কথা বললে তিনি অনেকটা রাগান্বিত স্বরে বলেছিলেন, ‘ ‘আমি খুবই স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, ইসরাইলের উপর মার্কিন চাপে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা ইহুদিরাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করি, এটা আমেরিকানরা ভাল করেই জানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দলের নির্বাচনী ব্যয়, প্রার্থী মনোনয়নসহ যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে আইপ্যাকসহ ইহুদি লবিস্ট গ্রæপ ও তাদের কর্পোরেট পার্টনার ও ছদ্মবেশি কর্মীদের মূখ্য ভ’মিকা থাকে। একইভাবে বৃটেনের টোরি বা কনজারভেটিভ, লিবারেল ডেমোক্রেট অথবা লেবার দলের প্রভাবশালী নেতারা কে কত বড় ফ্রেন্ডস অব ইসরাইল সে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতে দেখা যায়। সম্প্রতি কয়েকটি মার্কিন গণমাধ্যমে রিপাবলিকান দলের একটি গ্রæপের ফান্ডে জনৈক ব্যক্তির ১.৬ বিলিয়ন ডলার ডোনেশনের তথ্য প্রকাশিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে এ ধরণের লেনদেন বিষয়ে জনগণ কখনোই কিছু জানতে পারেনা। এখানেও পুঁজিবাদের অদৃশ্য কালোহাতই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত সৃষ্টি, অর্থ পাচার এবং বিরতিহীন যুদ্ধের দুষ্টচক্র, অস্ত্র ব্যবসা ও চোরাচালান তাদের অঢেল সম্পদের মূল ভিত্তি।
যুদ্ধ এবং বিশেষ গোষ্ঠির রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পেছনে যুগ যুগ ধরে মূখ্য ভ’মিকা পালন করে চলেছে কালোটাকা এবং পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের কভার্ড গোয়েন্দা অপারেশন্স। আধুনিক গণতন্ত্রের নিশানবরদার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়তা বা পৃষ্ঠপোষকতা করার কথা। কিন্তু গত এক শতাব্দীর ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করতেই তার ক’টনীতি ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে বেশি কাজে লাগিয়েছে। এ কারণেই মার্কিন বশংবদ হওয়া সত্তে¡ও ইসরাইল ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বার বার রহিত করা হচ্ছে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ইরানে নির্বাচিত মোসাদ্দেক সরকারের পতন থেকে গত দশকে মিশরে মোহাম্মদ মুরসি সরকারের পতনের ইতিহাস তার জ্বলন্ত উদাহরণ। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মোসাদ্দেক ক্ষমতায় এসেই অ্যাংলো-ইরানিয়ান তেল কোম্পানীকে রাষ্ট্রীয়করণ করে ইরানের তেলসম্পদকে দেশের জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন, এটাই ছিল তার বড় অপরাধ। মার্কিন সিআইএ এবং বৃটিশ এমআই-সিক্স গোয়েন্দারা কোটি কোটি ডলার খরচ করে সেখানে কৃত্রিম রাজনৈতিক সংকট এবং সামরিক ক্যু’র ইন্ধন দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটিয়ে পশ্চিমা অনুগত রেজাশাহ পাহলভিকে পুনরায় সর্বেসর্বায় পরিনত করেছিল। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জনগণের রায়ে সরকার গঠিত হওয়ার সুযোগ থাকলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বিদেশীদের মনোরঞ্জনের প্রয়োজন হয়না। এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ কিংবা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সংখ্যালঘু কর্পোরেট গোষ্ঠি কোটি কোটি ডলার খরচ করে এমন মানুষদের ক্ষমতার মসনদে বসাতে চায় যারা জনগণের স্বার্থের চেয়ে তাদের প্রেসক্রিপশনকেই বেশি মূল্য দেয়। এভাবেই অর্থনৈতিক বিশ্বমন্দার সময়ও ট্রিলিয়ন ডলারের জমজমাট অস্ত্রব্যবসার রমরমা বাণিজ্যের স্ফীতি ঘটে। কোটি কোটি মানুষকে দেউলিয়া করে দিয়ে কিছু মানুষ রাতারাতি বিলিয়নিয়র বনে যায়। এটাই ক্লেপ্টোক্রেসি ও ডার্কমানির মোজেজা।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।