মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
১৯৫৩ সালের ২৯ মে বিশ্বের উচ্চতম শিখর মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক এডমন্ড হিলারি ও নেপালি শেরপা তেনজিং নোরগে। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এই সাঙ্ঘাতিক খবরটি গোটা দুনিয়ার কাছ থেকে অতি সন্তর্পণে আড়াল করে রাখা হয়েছিল পুরো পাঁচদিন ধরে - যাতে লন্ডনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেকের দিন সকালে তা ঘোষণা করা যায়!
সেই অভিযানের 'অফিশিয়াল করেসপন্ডেন্ট' ছিলেন 'দ্য টাইমসে'র সংবাদদাতা জেমস মরিস। আর ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় সেটি ছিল একটি আদ্যন্ত 'ব্রিটিশ এভারেস্ট এক্সপিডিশন'। এই অভিযানটির অন্যতম লক্ষ্যই ছিল রানির অভিষেকে তাকে একটি বিশেষ উপহার দেওয়া - আর সেটি হল এভারেস্ট বিজয়! পরে 'করোনেশন এভারেস্ট' নামে একটি বই লিখে জেমস মরিস সেই চমকপ্রদ ঘটনার বিশদ বর্ণনাও দিয়েছেন।
আর 'দ্য টাইমস' পত্রিকা পরে লিখেছিল, 'সাঙ্কেতিক শব্দ বা কোড ব্যবহার করে তৈরি আমাদের সেই 'স্কুপ' রানির অভিষেকের আনন্দে আলাদা মাত্রা যোগ করেছিল।' তেনজিং নোরগের পুত্র জামলিং তেনজিং, যিনি নিজেও একজন পর্বতারোহী ও এভারেস্ট-বিজয়ী, বলেন, "খুব গোপন রাখা হয়েছিল পুরো বিষয়টা। বলা যেতে পারে, অভিষেকের দিন এই খবরটা ছিল রানিকে এম্পায়ারের তরফে একটা দারুণ উপহার!"
এভারেস্ট অভিযানের খবর পাঠানোর জন্য সেই গ্রীষ্মে তখন শুধু জেমস মরিস নন, আরও দুজন বাঘা বাঘা সাংবাদিক তখন নেপালের খুম্বু অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। পর্বতারোহণের ইতিহাসবিদ মার্ক হরেলের কথায়, "ওই অভিযান কভার জন্য জেমস মরিসকেই যদিও সরকারিভাবে কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছিল, তা ছাড়াও দ্য ডেইলি মেইলের র্যালফ ইজার্ড ও রয়টার্সের পিটার জ্যাকসনও কিন্তু তখন ওখানেই ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলেন।" "গাইড ও মালবাহক ভাড়া করে তারাও রোজ এদিক-ওদিক হানা দিচ্ছিলেন, কোন অভিযান কতদূর এগোল বা কারা হাল ছেড়ে দিল সেই সব খবর জোগাড় করছিলেন।"
কোনও অভিযান কিছুদূর পর্যন্ত সফল বা ব্যর্থ হলে, এভারেস্ট বেস ক্যাম্প থেকে সেই খবর 'রানার' মারফত পৌঁছে দিতে হত নিচের পাহাড়ি গ্রাম নামচে বাজারে, সেখানেই ছিল নিকটতম টেলিগ্রাফ অফিস। ,টেলিগ্রাফ অফিসের অপারেটর ছিলেন ভারতীয় পুলিশে চাকরিরত জনৈক মি. তিওয়ারি। কিন্তু কোনও গোপন খবর ওভাবে পাঠানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা ছিল, সেই 'রানার' বা মি. তিওয়ারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তা যে কোনও সময় ফাঁস হয়ে যেতে পারত। আর তা ছাড়া টেলিগ্রাফে পাঠানো বার্তায় আড়ি পেতেও তা যে কেউ শুনে নিতে পারত।
ফলে জেমস মরিস ঠিক করে নিয়েছিলেন, অভিযানের খবর পাঠানোর জন্য তিনি একটি সাঙ্কেতিক বা গোপন কোড ব্যবহার করে সেই বার্তা কাঠমান্ডু হয়ে লন্ডনে পৌঁছে দেবেন। এই গোপন কোড-টা জানতেন শুধু জেমস মরিস ও কাঠমান্ডুতে দ্য টাইমসের আরেকজন সংবাদদাতা আর্থার হাচিনসন, যার ওপর দায়িত্ব ছিল খবরটা লন্ডনে পাঠানোর। পরে অবশ্য নিতান্ত অনিচ্ছায় মি তিওয়ারিকেও বিষয়টা তাদের খুলে বলতে হয়েছিল।
সাঙ্কেতিক শব্দগুলোর যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল তা ছিল রীতিমতো কৌতূহলোদ্দীপক। ঠিক হয়েছিল এডমন্ড হিলারির বদলে বলা হবে 'অ্যাডভান্সড বেস অ্যাবানডনড'। তেনজিং নোরগের বদলে ব্যবহার হবে 'অ্যাওয়েটিং ইমপ্রুভমেন্ট', অর্থাৎ যেন আবহাওয়ার উন্নতির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এরকম আরও অনেক। আর লন্ডনে টাইমস এডিটোরিয়াল টিমকেও বলা ছিল, এই কোড ব্যবহার করা হবে একমাত্র এভারেস্ট আরোহণ সম্ভব হলে, তবেই। অন্যান্য খবর তিনি পাঠাবেন সাধারণ ভাষাতেই।
ফলে হিলারি ও তেনজিং-য়ের শৃঙ্গজয়ের পরদিন বেসক্যাম্পে বসে জেমস মরিস নিজের টাইপরাইটারে যে বার্তাটা টাইপ করলেন তা ছিল এরকম : "স্নো কন্ডিশনস ব্যাড স্টপ অ্যাডভান্সড বেস অ্যাবানডনড ইয়েসটারডে স্টপ অ্যাওয়েটিং ইমপ্রুভমেন্ট অল ওয়েল" । এক নি:শ্বাসে বাক্যটা পড়লে এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে অভিযান পরিত্যক্ত হয়েছে। কিন্তু এর অন্তর্নিহিত অর্থটা ছিল : "গতকাল (২৯মে) এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে শিখরে আরোহণ করেছেন। সব দারুণ চলছে!" 'স্নো কন্ডিশনস ব্যাড' সঙ্কেতের অর্থ ছিল এভারেস্ট বিজয় সম্পন্ন হয়েছে।
এই বার্তা নিয়ে একজন রানার ছুটলেন নামচে বাজারে, তিওয়ারি নিজের রেডিওতে তা পাঠিয়ে দিলের কাঠমান্ডুতে আর্থার হাচিনসনের কাছে। সে দিন বিকেলেই তাঁর মাধ্যমে সেই বার্তা পৌঁছে গেল লন্ডনে দ্য টাইমসের দপ্তরে। পরদিন নামচে বাজারের কাছে জেমস মরিসের সঙ্গে রয়টার্সের পিটার জ্যাকসনের হঠাৎ দেখাও হয়ে যায়। মরিস এমন ভান করেন, যেন ব্রিটিশ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। এর পরের বছর এভারেস্টের পারমিট ছিল ফরাসিদের কেনা, সেদিকে ইঙ্গিত করে জেমস মরিস তাকে বলেন, "সব সময় দেখবেন ফ্রেঞ্চরাই করবে!" পিটার জ্যাকসন কিছু একটা সন্দেহ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বন্ধুকে কিছু আর বলেননি!
২ জুন সকালে লন্ডনে দ্য টাইমসের শিরোনাম হল : 'এভারেস্ট কনকার্ড : হিলারি অ্যান্ড তেনজিং রিচ দ্য সামিট'। অর্থাৎ কি না, এভারেস্ট বিজয় সম্পন্ন, হিলারি ও তেনজিং শিখরে আরোহণ করেছেন। এর ঠিক পাশেই সে ছিল সে দিন অনুষ্ঠিতব্য রানির অভিষেক অনুষ্ঠানের খবর, করোনেশনের রুট বরাবর হাজার হাজার মানুষ যে লন্ডনের রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন জানানো হয়েছিল সে কথা। জেমস মরিস সে দিন নামচে বাজার থেকে দক্ষিণে প্রায় ছ'মাইল নিচে নেমে এসেছেন।
দুধকোশী নদীর ধারে তাঁবুতে বসে রেডিওতে বিবিসি টিউন ইন করে তিনি শুনতে পেলেন, মাউন্ট এভারেস্ট অবশেষে মানুষের পদানত হয়েছে - আর অভিষেকের ঠিক আগে রানি এলিজাবেথকেও এই সুখবরটি দেওয়া হয়েছে। সংবাদপাঠক অবশ্য এটাও যোগ করেছিলেন, দ্য টাইমসের একটি ডেসপ্যাচেই প্রথম এই এভারেস্ট বিজয়ের খবরটি দেওয়া হয়েছে। অনাবিল তৃপ্তির হাসি খেলে গেল জেমস মরিসের চোখেমুখে, নিজেই পরে সে কথা লিখেছেন 'করোনেশন এভারেস্ট' বইতে।
রানির অভিষেকের ঐতিহাসিক মুহুর্তটিকে যে এই খবর আলাদা মাত্রা দিয়েছিল, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমও তা নিয়ে ছিল একমত। চার-পাঁচদিন খবরটি 'ধরে রাখা' সার্থক - এমনটাই ছিল তাদের অভিমত। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।