পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিক্ষার্থী ও কম বয়সী ছেলেমেয়েদের মাঝে প্রতিনিয়তই বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। সামান্য কিছুতেই অভিমান করে এখন বেছে নেয়া হচ্ছে আত্মহত্যার মতো জঘণ্য এই আপরাধের পথ। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ, তরুণ-তরণী কোন বয়সেই বাদ যাচ্ছে না আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে। ব্যক্তিগত কষ্ট ও অশান্তি, অস্বচ্ছলতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেম ঘটিত সমস্যাসহ নানা কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে।
তরুণদের মাধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলছে। পরীক্ষায় ফেল, প্রেমে ব্যর্থতা, ব্রেকাপ, বাবা-মায়ের সঙ্গে বিবাদ, স্কুলে বকাঝকা, ইন্টারনেটে হয়রানি সবকিছুর সমাধান যেন তারা খুঁজতে শুরু করেছে জীবন সমাপ্তির মধ্য দিয়ে। মদ্যপায়ীদের মধ্যেও আত্মহত্যার হার বেশি। হিরোইন সেবীদের আত্মহত্যার হার সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রায় ১৪ গুণ বেশি। ইয়াবা সেবনেও আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে। জুয়াড়িদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। শৈশবকালীন যৌন নিপীড়নের শিকার তরুণ তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সাধারণ আত্মহত্যার হারের তুলনায় বেশি। দীর্ঘমেয়াদী, কষ্টদায়ক ও ব্যয়বহুল রোগের রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়।
জানতে চাইলে ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশনের (বিটিএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়শ্রী জামান ইনকিলাবকে বলেন, বেঁচে থাকার জন্য সামাজিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমানোর জন্য পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। নারীরা সবসময় পারিবারিক চাপ ও হীনমন্যতায় ভুগেন। অনিরাপত্তাহীনতায় ভোগ থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। তাদেরকে বুঝাতে হবে তুমিও তোমার মতো চলতে পারো। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা করে ফেলে। শিক্ষার্থীদের বুঝাতে হবে ফেল করলেই জীবন শেষ হয়ে যায়না। আবারও পরীক্ষা দিয়ে পাস করা যাবে। অনেক আত্মহত্যার ঘটনা প্রচার হয় না। আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে হলে সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে হেল্প লাইন করা যেতে পারে। শিক্ষকদের এবিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন। তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
মনোবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব বেশি মরার কথা চিন্তা করা, নিজের অসহায়ত্ব, কষ্ট, জীবনের উদ্দেশ্যহীনতা, অন্যর ওপর নিজেকে বোঝা মনে করা, যেমন ইচ্ছে তেমন ব্যবহার করা, অতিরিক্ত বা খুব কম ঘুমানো, সাধারণ জীবন থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, অতিরিক্ত রাগ বা প্রতিশোধের মনোভাব থাকা, খুব ঘন ঘন ও অকারণে মেজাজ বদলানোসহ নানা কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন তরুণরা। দাম্পত্য কলহের কারণে অনেক সময় স্বামী বা স্ত্রী আত্মহত্যা করে বসেন। অনেক সময় সন্তানরা বাবা-মায়ের নিত্য কলহের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে ফেলে। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনাগুলো বেশ শোনা যায়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, পরিবারের সদস্যদের সাথে যতটা সম্ভব সময় কাটানো, স্নেহ, ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় জড়িয়ে রাখতে চেষ্টা করা প্রয়োজন। পারিবারিক বন্ধন তাকে আত্মহননে নিরুৎসাহিত করে। কৈশোর ও তারুণ্যে যেন অভিমান করে আত্মহত্যা না করে সে বিষয়ে পরিবারের অন্য সদস্য ও বাবা-মা’র খেয়াল রাখতে হবে। অপরিণত বয়সে প্রেমের কুফল ও তার সম্ভাব্য ঝুঁকি ও ক্ষতির বিষয়ে এবং ক্ষেত্র বিশেষে সামাজিক অগ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে পরিবারের কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের সচেতন করতে হবে।
তবে আত্মহত্যার হার বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিমাসে গড়ে ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত এ সংখাটি দাঁড়িয়েছে ৩৬৪ জন। আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানা গেছে। ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩৬৪ জন আত্মহননের পথ বেছে নেয় যারা তাদের জীবদ্দশায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিলেন। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসা, নার্সিং প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থী রয়েছেন। ৩৬৪ জন আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ১৯৪ জনই ছিলেন স্কুলগামী শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন কলেজ শিক্ষার্থীরা যার সংখ্যা ৭৬ জন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননকারীর সংখ্যা ৫০ জন। তবে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীও ছিলেন ৪৪ জন।
আত্মহত্যাকারীদের বয়সভিত্তিক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। যা ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ২১ থেকে ২৬ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। ১৩ বছরের নিচে যাদের বয়স, তারাও এই পথ থেকে পিছপা হয়নি। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ জন আত্মহত্যা করেন। তবে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা, যার সংখ্যা ১৬০ জন। এছাড়াও সর্বনিম্ন ৭ বছরের একটি শিশুও আত্মহত্যা করেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য বিশ্লেষণে বলা হয়, বিগত আট মাসে মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ৬০ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার্থী ৪০ শতাংশ। কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে ৭৬ জন এই পথ বেছে নেয় যাদের মাঝে ৪৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ নারী। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী বিগত আট মাসে আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ৩২ দশমিক ৯৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। এমনকি মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে যা সংখ্যায় ৪৪ জন। তাদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আত্মহত্যায় স্কুলগামীরা এগিয়ে। বিদ্যালয়গামী অর্থাৎ প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। যা শতকরা ৫৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আত্মহত্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যা ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আত্মহননকারীদের মধ্যে মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন শতকরা ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
এদিকে সমীক্ষায় দেখা যায়, আত্মহত্যায় এবারেও এগিয়ে আছে নারী শিক্ষার্থীরা যা মোট আত্মহননকারীদের ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ বা ২২১ জন। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ বা ১৪৩ জন।
বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আত্মহত্যাকারীদের অবস্থান বিবেচনায় সবার শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। শতকরা ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ আত্মহত্যা করে। দেশের অপরপ্রান্তে রংপুর বিভাগে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া বরিশাল বিভাগে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অপর দিকে, সিলেট বিভাগে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন যা ৪ শতাংশ। চলতি বছরের ৮ মাসের তথ্য বলছে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। প্রেমঘটিত কারণেই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করে হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।