পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমাদের দুঃখে ইন্ডিয়া সবসময় পাশে থাকে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। ’৭৫ সালে বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে হারিয়ে আমরা দুই বোন যখন অসহায়, এই ইন্ডিয়াতেই আমরা তখন আশ্রয় পেয়েছিলাম। শুধু আমি না, আমাদের পরিবারের আরো যারা আপনজন হারিয়ে, গুলি খেয়ে আহত হয়, তারা এখানে (ভারত) এসে আশ্রয় নেয়। সবসময় আমাদের দুঃখের সময় ইন্ডিয়া আমাদের পাশে থাকে। ভারতের রাজধানী দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা একান্তে বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৭টি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে। ঢাকা এই অঞ্চলে দিল্লির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। দু’দেশের মধ্যে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং গত কয়েক বছরে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার সকালে হায়দ্রাবাদ হাউসে উপস্থিত হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এরপর ভারতীয় নেতৃবৃন্দ এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পরিচয় করিয়ে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ফটোসেশনে অংশগ্রহণের পর দুই প্রধানমন্ত্রী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। একান্ত বৈঠকের পর দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। বিকেলে দিল্লির প্রেসিডেন্ট ভবনে ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখারের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তারপর ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
দু’দেশের সরকারপ্রধানের বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। কানেকটিভিটি, বিনিয়োগ, বর্ধিত বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় সমাধান করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরসহ উভয় দেশের অমীমাংসিত সব ইস্যু শিগগিরই সমাধান হবে। সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে।
নরেন্দ্র মোদি ও ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরা সমাধান করেছি। আমি মনে করি, দুই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, দারিদ্র্য বিমোচন করা, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা; শুধু আমাদের দুই দেশ না, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব এলাকা মিলেই যেন এই এলাকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে আরো উন্নত হয়। তিনি বলেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে সমস্যা থাকতে পারে। সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। এর দৃষ্টান্ত আমরা দেখিয়েছি। যেসব সমঝোতা চুক্তি আমরা সই করেছি তা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো উন্নত করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, এখানে (নয়াদিল্লি) আসা সত্যি খুব আনন্দের বিষয়। তিন বছর পর আবার আসতে পেরেছি। ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে ছিলাম, এক্সাইলে ছিলাম। সেই স্মৃতিও মনে পড়ে। তখনও সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি। কাজেই ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক আমরা সেটাই চাই। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।
হিন্দি ও বাংলা ভাষায় কথা বলার সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের জন্যও ধন্যবাদ জানান। এর আগে প্রেসিডেন্ট ভবনে গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলোÑ সামগ্রিকভাবে আমাদের জনগণের উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনীতির উন্নয়ন। এই ইস্যুতে আমি মনে করি আমাদের ২টি দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। এতে শুধু ভারত ও বাংলাদেশের মানুষই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ উন্নত জীবন পেতে পারে। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তিনি আরো বলেন, আমি যখনই ভারতে আসি, এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের, বিশেষ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা আমরা সবসময় স্মরণ করি। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করছি। আসলে বন্ধুত্বের মাধ্যমে আপনি যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন। সুতরাং, আমরা সবসময় এটিই করি।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সীমান্ত দিয়ে ৫৪টি নদী প্রবাহিত হয়। এসব নদী উভয় দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে যুক্ত। আমরা কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের সাক্ষী হয়েছে। ঢাকা এ অঞ্চলে দিল্লির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং আমাদের শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। গত কয়েক বছরে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের কোভিড মহামারি, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।
দু’দেশের বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে দাবি করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। আমরা আইটি, মহাকাশ এবং পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিয়েও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, গত বছর আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছি। আমরা প্রথম ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপন করেছি। আগামী দিনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। তিনি আরো বলেন, আমরা বন্যা প্রশমনে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের সাথে বন্যাসংক্রান্ত রিয়েল-টাইম ডেটা শেয়ার করছি এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়েও আলোচনা করছি। এটা অপরিহার্য, কারণ আমরা একসাথে সেইসব শক্তির মোকাবেলা করি যেগুলো আমাদের প্রতিপক্ষ।
রামপালসহ ৫ প্রকল্পের উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি ৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এগুলো হচ্ছে, খুলনার রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট (৬৬০ মেগাওয়াটের ২টি) মৈত্রী সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাচালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপসা নদীর ওপর রেল সেতু, খুলনা-দর্শনা ও পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেলপথ।
ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের অধীনে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারসহ মোট ২ বিলিয়ন ডলারে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রূপসা রেলসেতুটি ৬৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার খুলনা-মোংলা বন্দর সিঙ্গেল ট্র্যাক ব্রডগেজ রেল প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি প্রথমবারের মতো মোংলা বন্দরকে খুলনার সঙ্গে রেলপথে যুক্ত করবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্য ও উত্তর অংশের সংযোগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল ও গেদে সীমান্তে সংযোগ স্থাপন করবে।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ২৫টি প্যাকেজে সড়ক নির্মাণের যন্ত্রপাতি সরবরাহেরও উদ্বোধন করেন। খুলনা-দর্শনা রেললাইন সংযোগ প্রকল্পটি বর্তমান (ব্রডগেজ দ্বিগুণ) অবকাঠামোর একটি আপগ্রেডেশন, যা গেদে-দর্শনা থেকে খুলনার বর্তমান ক্রস বর্ডার রেল সংযোগকে সংযুক্ত করবে। এর ফলে ২ দেশের মধ্যে, বিশেষ করে ঢাকার সঙ্গে মোংলা বন্দরের রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১২ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেললাইনটি বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ লাইনে রূপান্তরের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার। প্রকল্পটি দিনাজপুরের বিরল ও পশ্চিমবঙ্গের রাধিকাপুরের বিদ্যমান ক্রস বর্ডার রেলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে এবং দ্বিপাক্ষিক রেল সংযোগ বৃদ্ধি করবে।
সফরে আজকের সূচি : প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি অনুযায়ী আজ (৭ সেপ্টেম্বর) ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি. কিষাণ রেড্ডি এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। শেখ হাসিনা শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের সরাসরি বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন। ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার আগে প্রধানমন্ত্রী রাজস্থানের খাজা গরীব নওয়াজ দরগাহ শরীফ, আজমির (আজমির শরীফ দরগাহ) পরিদর্শন করবেন।
এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ সেপ্টেম্বর ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান। কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার আগে শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে সফর করার পর তিন বছর পর ভারত সফর করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।