Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশেষ এসকর্টে পণ্য পরিবহন

ট্রানজিটের দ্বিতীয় ট্রায়াল রান আজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ এমভি ট্রান্স সমুদ্রা চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে আজ মঙ্গলবার। জাহাজটি জেটিতে ভেড়ার পর দ্রুত পণ্য খালাস করা হবে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে সিলেট হয়ে সড়কপথে পণ্য চালানটি যাবে ভারতের আসামে। এই দীর্ঘ সড়কপথে দেয়া হবে বিশেষ এসকর্ট। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস হাউসসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্যেই ট্রানজিটের এ দ্বিতীয় ট্রায়াল রান হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনের দ্বিতীয় ট্রায়াল রানের অংশ হিসেবে এ জাহাজটিতে আনা হচ্ছে এক কনটেইনার রড। আজ দুপুর ১২টা নাগাদ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে জানান ম্যাঙ্গো শিপিং লাইন চট্টগ্রামের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, জাহাজটিতে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি কনটেইনারে ২৫ মেট্রিক টন রড রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে চালানটি খালাসের পর সড়কপথে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে আসামের সুতারকাটি পৌঁছানো হবে। ফিরতিপথে ওই কনটেইনারে আসাম থেকে চা পাতা বোঝাই করা হবে। কনটেইনার বোঝাই এ চা পাতা একই জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দরে যাবে।
শনিবার কলকাতা বন্দর থেকে কনটেইনারটি ম্যাঙ্গো শিপিং লাইনের এমভি ট্রান্স সমুদ্রা নামের জাহাজে তোলা হয়। এরপর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, জাহাজটি বহির্নোঙরে আসার পর দ্রুতই জেটিতে ভেড়ানোর প্রস্তুতি রয়েছে। আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে খুব কম সময়ে বন্দর থেকে ট্রানজিটের পণ্য খালাস করে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী বন্দর তার নির্ধারিত চার্জ ও ফি আদায় করবে। পণ্য চালানটি শুল্কায়ন করবে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।
কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার এইচ এম কবির বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর থেকে শুল্ককরের বিষয়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার আলোকেই শুল্ক ও চার্জ এবং ফি আদায় করা হবে। এরপর এসকর্ট দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য চালানটি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে যাবতীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তির আর্টিকেল-২ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর উভয় দেশের মধ্যে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটির আওতায় বিগত ২০২০ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ট্রায়াল রান হয়েছিল।
তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি সেঁজুতি’ চারটি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। এর মধ্যে দুটি কনটেইনারে ছিল টিএমটি স্টিল বার, যা পরে স্থলপথে ভারতের ত্রিপুরায় যায়। বাকি দুই কনটেইনারে ছিল ডাল, যা ভারতের আসামে নেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা রুটে প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রানজিট সম্পন্ন হয়। এরপর গত দুই বছরে আর কোনো ট্রায়াল রান হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সামনে রেখে সম্প্রতি আরও ট্রায়াল রানে সম্মত হয় উভয় দেশ।
পরবর্তীকালে অন্য রুট সমূহের মাধ্যমে উক্ত চুক্তির আওতায় পরীক্ষামূলক ট্রানজিট সম্পাদনের বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত ১৩তম জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমসের সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে মোংলা বন্দর-তামাবিল স্থলবন্দর, মোংলা বন্দর-বিবিরবাজার রুটে পরীক্ষামূলক ট্রানজিট পরিচালনা ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জুলাই ভারতের কলকাতা শ্যামাপ্রসাদ বন্দর থেকে রিশহাদ রায়হান নামে জাহাজে পরীক্ষামূলক ট্রানজিট চালানের কনটেইনারজাত পণ্য মোংলা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়।
৫ আগস্ট চালানটি ওই বন্দরে পৌঁছে। মোংলা বন্দর থেকে বাংলাদেশে যানবাহনে করে কনটেইনারে থাকা ১৬ মেট্রিক টন আয়রন পাইপ মোংলা-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর রুটে ভারতে নেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা চালানটিও সিলেট সীমান্ত হয়ে আসামে পৌঁছানো হবে। আবার আসাম থেকে কনটেইনারভর্তি চা পাতা একইপথে আনা হবে চট্টগ্রাম বন্দরে।
কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, ট্রানজিটের পণ্য চালান বাংলাদেশের প্রবেশ বন্দর থেকে প্রস্থান বন্দর পর্যন্ত পরিবহনকালে এক বা একাধিক এসকর্ট কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রবেশ বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা পণ্য চালানের সঙ্গে এসকর্ট কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। সেইসাথে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কর্তৃক নিযুক্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা পণ্য চালানের সাথে থাকবেন।
দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অনযায়ী ট্রানজিটকাল ধরা হয়েছে সাতদিন। অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রবেশের পর সাতদিনের মধ্যে পণ্য চালান বাংলাদেশ ত্যাগ করবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রবেশ বন্দরে কাস্টম কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হলে সময় বর্ধিত করা যেতে পারে। ট্রানজিটের পণ্য চালানে চার্জ ও ফি আদায়ের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। এতে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি প্রতি চালান ৩০ টাকা। ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি মেট্রিক টন ২০ টাকা, সিকিউরিটি চার্জ প্রতি মেট্রিক টন ১০০ টাকা, এসকর্ট চার্জ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন ৫০ টাকা।
বিবিধ প্রশাসনিক চার্জ প্রতি মেট্রিক টনে ১০০ টাকা এবং কনটেইনার স্ক্যানিং ফি প্রতি কনটেইনারে ২৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সম্প্রতি মোংলা বন্দর দিয়ে সম্পন্ন ট্রানজিট চালানে এ হারে চার্জ ও ফি আদায় করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা পণ্য চালানেরও একই হারে চার্জ ফি আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। তবে দূরত্ব অনুযায়ী এ চার্জ কিছুটা কমবেশি হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ