Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আষাঢ় গেল, শ্রাবন গেল, ভাদ্রের শেষে এসে মরা পদ্মায় বাড়ছে ঘোলা পানির স্রোত

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২:৪০ পিএম

খরতাপের দাপট দেখিয়ে আষাঢ় গেল শ্রাবন গেল ভাদ্রও শেষের পথে আসেনি প্রত্যাশিত বৃষ্টি। গত তিনদিন ধরে মাঝে মধ্যেই ভারি বর্ষন জানান দিচ্ছে বর্ষা মওসুমের কথা। প্রায় তিনমাস পর ভারি বর্ষন প্রকৃতিতে এনেছে সজিবতা। কৃষকের জন্য হয়েছে খানিকটা উপকার। খাল বিল পুকুরের তলায় জমেছে কিছুটা পানি। উজান থেকে পদ্মায় নেমে আসছে বর্ষনের পানি । ফলে খানিকটা জেগে উঠছে পদ্মা। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মায় ১৬.৭২ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এক সপ্তাহ আগে ২৫ আগস্ট যা ছিল ১৫.৮৬ মিটার। গত বছরের এ সময়ে পদ্মা নদীতে পানি প্রবাহিত হয়েছিল ১৬.৯১ মিটার। পদ্মা নদীর পানি ১৮.৫০ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে তা বিপদসীমা হিসেবে ধরা হয়।
ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবের কারনে বছরের আট নয় মাস বালিচরের নীচে চাপা থাকলেও আষাঢ় শ্রাবনে ফের জেগে ওঠে। এবার একেবারে বিদায় লগ্নে ভাদ্র খানিকটা ভারী বৃষ্টি ঝরিয়েছে। সাথে ফারক্কার ওপারেও বিশেষ করে বিহার রাজ্য ও মালদায় পানির চাপ বাড়ায় ফারাক্কার কয়েকটি গেট খুলে দেয়ায় এবারের মরা পদ্মায় শুরু হয়েছে ঘোলা পানির ¯্রােত। ভারতের পানির ঢল রাজশাহীর পদ্মায় আসতে প্রায় তিনদিন সময় লাগে। ভারতের গঙ্গা ও চাঁপাইনবাগঞ্জের মহানন্দা থেকে প্রবাহিত পদ্মা নদী গোয়ালন্দ হয়ে সমুদ্রে মিশে যায়।
গতকাল পদ্মার তীরে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মায় পানি বাড়লেও উজানের সেই পানি নদীর বুকে জেগে ওঠা চরগুলো এখনো ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়নি। চরের বুকে গজানো কাশবন এখন হাটু পানিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন পদ্মায় পানি বাড়া কমা সবকিছু নির্ভর করে ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজের উপর। তারা সব নিয়ন্ত্রন করে। এপারের বর্ষন নদীর পানি বাড়ানোয় তেমন ভূমিকা নেই। রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মা ও মহানন্দার পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যা দেখা দেয়। যখন চীন ও ভারতে বেশী বৃষ্টিপাত হয় তখন পানির চাপ বাড়ে। ফারাক্কা সংলগ্ন জেলা মালদা ও বিহার রাজ্যে বন্যা দেখা দেয়। সেই বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার প্রায় সবকটি গেট খুলে দেয়া হয়। প্রবল বেগে ধেয়ে আসে পানি। ফারাক্কা চালুর পর থেকেই প্রমত্ত পদ্মার বুকে বালি জমতে জমতে নদীর তলদেশ আঠারো মিটার ভরে গেছে। ধারন ক্ষমতা হারিয়েছে। এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা নামের নদীটি বছরের দশ মাস খাল সদৃশ্য রুপ নিয়ে ক্ষীন ধারায় বয়ে চলে। ফলে বর্ষার সময় ওপারের আসা পানি ধারন না করতে পেরে দুকুল ছাপিয়ে যায়। একুটুতে দেখা দেয় বন্যা। ডোবে ফসলের ক্ষেত সাজানো সংসার। ফি বছরই এমনি হয়। এটাই পদ্মা পাড়ের মানুষের নিয়তি হয়ে দাড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ওপারের বন্যার চাপ কমাতে ফারাক্কার সবকটি গেট এক সাথে খুলে দিলে যেমন আমাদের এখানে বন্যা হয়। আবার ওপারের বন্যার পানির চাপ কমে গেলে দ্রুত ফারাক্কার পাষান গেট গুলো ফের বন্ধ করে দেয়া হয়। এসময় ক্ষতিটা আরো বেশী হয়। কারন তাড়াতাড়ি পানি নেমে যাবার কারনে ভাঙ্গনের প্রবনতা বেড়ে যায়। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মানুষ জমি বসতভিটা হারায়। এ সময়টা রাজশাহী নগরী পড়ে ভাঙ্গনের ঝুকিতে।
টি-বাঁধ থেকে সোনাইকান্দি পর্যন্ত বেশ পানি দেখা যায়। মরা পদ্মা জেগে ওঠা দেখতে সকাল বিকেল নদী তীর ভীড় বাড়ছে। বিনোদনস্পটগুলো সরগরম হচ্ছে। নদীর ঘোলা পানিতে নৌকায় করে ঘুরছে। এখনও মাছ ধরাকে পেশা হিসাবে ধরে রাখা নদী তীরের জেলেরা মাছের আসায় ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছে। কিন্তু কিছু বেলে, ঘেড়ে আর কিছু চিংড়ি ছাড়া তেমন কিছুই মিলছেনা। আর পদ্মার ইলিশ সেতো স্বপ্নের মত। পদ্মার পানি বাড়ার সাথে গোদাগাড়ি ও চারঘাট বাঘা এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজশাহী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ