পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : বিচারকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ভূপালে অবস্থিত জুডিসিয়াল ট্রেইনিং একাডেমির আদলে বাংলাদেশের বিচারকদের জন্য সাভারে ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন হলেও আগামী বছর নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রয়েছে। আমাদের দেশেও রয়েছে তবে আকারে পরিসর খুবই ছোট। চলতি বছর কয়েক মাস আগে আমরা সরকারের কাছে জানিয়েছি। বিষয়টি এখনও সরকারের বিবেচনাধীন। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিদেশে তথা ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে বিচারিক সেবার মান বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে মামলা জটও কমবে।
বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে জুডিসিয়ারিকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার একান্ত প্রচেষ্টায় উচ্চ আদালতে অনলাইন কার্যতালিকা, অনলাইন বেইল কনফারমেশন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ (পরীক্ষামূলক চালু), অনলাইন বুলেটিন, বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন চালু করার উদ্যোগ নেয়। সর্বশেষ নয়া উদ্যোগ হলো বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপন। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিদেশে (ভারতে) প্রশিক্ষণে উদ্যোগ নেয় হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের নির্দেশনা মোতাবেক নিরলসভাবে কাজ করে। এতে করে প্রতি বছরে দশ লক্ষেরও অধিক মামলা নিষ্পত্তি করে সুশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের মামলার জট অনেকাংশ কমছে। বাড়ছে বিচার প্রার্থীদের সেবার মান। তবে সরকারিভাবে বিচারকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ খুবই কম। নেই বললেই চলে। কলেজ রোডে অবস্থিত বিচারকদের একমাত্র প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান জুডিসিয়াল এডমিনিসট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জেএটিআই)। যেখানে সারা দেশের ১৫০০ এর বেশি বিচারককে একবার প্রশিক্ষণ দেবার পর পরবর্তী প্রশিক্ষণে ব্যবস্থা করতে প্রায় ছয় বছর প্রয়োজন হয়। একই ভবনে আইন কমিশন থাকায় স্থান সংকলন হয় না। ফলে সঠিক সময়ে বিভিন্ন সেমিনারসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম করা সম্ভব হয় না। এতে করে বিচারকদের প্রশিক্ষণমূলক কোনো আয়োজন থাকে না। থাকলে খুবই অল্প। জানা যায়, বিচারকদের অবকাঠামোগত এবং লজিস্টিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পরবর্তী প্রশিক্ষণে ডাকতে ৫ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে যায়। ফলে অনেক সময়ই প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে বিচারকদের মধ্যে হতাশা লক্ষ্য করা যায়। প্রধান বিচারপতি যখন জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, বিচারকদের প্রশিক্ষণের এই দৈনদশা তখনই তিনি লক্ষ্য করেন। পরবর্তীকালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ভারত, ইউকে ও ইউএসএ সফর করে তিনি সে সব দেশের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাঁর সফরের প্রতিবেদন প্রেসিডেন্টের কাছে পেশ করার সময় তিনি কমপক্ষে ভারতের ভূপালে অবস্থিত জুডিসিয়াল ট্রেইনিং একাডেমির আদলে বাংলাদেশের বিচারকদের জন্য সাভারে একটি ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন।
এছাড়াও বিচারকদের বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য নানা কর্মসূচির উদ্যোগ নেয় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সুইজারল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডেও ট্রেইনিং-এর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ২০১৭ সাল থেকে নেদারল্যান্ডে ডিজিটালাইজড জুডিসিয়ারির যাত্রা শুরু হবে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। জানা যায়, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের অধস্তন আদালতসমূহে কর্মরত সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সম্মতি দেয়। এতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের সাথে বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমির সাথে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ধাপে ধাপে অংশগ্রহণ করবে। প্রতি বছর দশটি ব্যাচে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেক ব্যাচের প্রশিক্ষণের এর সময় হবে দুই সপ্তাহ। প্রত্যেক ব্যাচে ৩০ জন করে জুডিসিয়াল অফিসার প্রশিক্ষণে এ অংশগ্রহণ করবে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন, মানবাধিকার আইন, মেডিকো-লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স, পরিবেশ আইন, চুক্তি আইন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বলেন, ভারত কমন লভুক্ত দেশ। ভারতে প্রচলিত প্রধান প্রধান আইনগুলোর সাথে আমাদের দেশে প্রচলিত প্রধান প্রধান আইনগুলোর পার্থক্য সামান্য। আমাদের কোর্ট নজির হিসেবে প্রায়শই ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করে থাকে। তাই বিচারকদের বিভিন্ন বিষয়ে ভারতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উভয়পক্ষই লাভবান হবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।