Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারি বাহিনীকে সহিংসতা পরিহারের আহ্বান

রাখাইনে নতুন করে বহু লোককে ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে : কফি আনান

প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:১৫ পিএম, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমের রাখাইন রাজ্যে (পূর্বের আরাকান) স্থানীয় মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করে মিয়ানমার সফররত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান বলেছেন, সহিংসতা প্রদেশটিকে নতুন করে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং নতুন করে অনেক বাসিন্দাকে ঘর-বাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে, যা কখনোই কাম্য নয়। সরকারি বাহিনীকে সহিংসতা পরিত্যাগ করতেও আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া কথা বলেছেন নির্যাতনের শিকার মানুষজনের সঙ্গেও।
কফি আনানের নেতৃত্বাধীন ৬ জন দেশি ও ৩ জন বিদেশি সদস্যের প্রতিনিধিদল হেলিকপ্টারযোগে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের ফুটবল খেলার মাঠে অবতরণ করেন। পরে সেখান থেকে গাড়িযোগে মংডু কেয়ারিপাড়া, নাছিংপাড়া ঘুরে দেখেন। মিয়ানমার সরকারের মতে, প্রদেশটিতে সরকারি বাহিনীর অভিযানে ৮৬ জন মুসলিম নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১০ হাজার মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা অনেক বেশি। মিয়ানমারে উত্তর আরাকানের (মংডু টাউনশিপের উত্তরে) ১০/১২টি গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে মিয়ানামার সেনা-পুলিশ ও বুডিস্ট সন্ত্রাসীরা। শুধু ওই এলাকা থেকেই গুলি করে, গলা কেটে ও পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে হাজারো রোহিঙ্গা নারী শিশু পুরুষকে। শুধু তাই নয়, ওসব নারী শিশু-পুরুষকে গণকবরে মাটি চাপা দিয়ে প্রমাণ গোপন করা হয়েছে। বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। ওই গ্রামগুলোতে এখন কোনো মানুষ নেই। আছে শুধু মিয়ানমারের সেনা-পুলিশের পোড়ামাটি নীতির নিদর্শন। আগুনে দগ্ধ জনপদ পরিদর্শন করেছেন জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। তিনি দেখেছেন রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী নির্মূলে মিয়ানমারের সেনা-পুলিশ ও বুড্ডিস্ট সন্ত্রাসীরা কী পরিমাণ নিষ্ঠুর ও বর্বরতম নির্যাতন চালিয়েছে। সীমান্তে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর আরাকানে সেনা-পুলিশে পোড়ামাটি নীতির লোমহর্ষক বর্ণনা।
প্রসঙ্গত, আব্দুর রহমান ও সমিরা খাতুন ওই এলাকার হাতির পাড়া এলাকার অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের দম্পতি। তারা মিয়ানমার বাহিনীর বর্বরতম নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী। তারা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী উপর থেকে হেলিকপ্টার গানশীপ থেকে গুলি করার সাথে সাথেই ওই পাড়ার চারপাশ সেনা, পুলিশ ও বুড্ডিস্ট সন্ত্রাসীরা ঘিরে ফেলে। ঘর থেকে বের হলে গুলি করে, জবাই করে হত্যা করে নারী-পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সবাইকে। ওই সময় রোহিঙ্গা যুবতী নারীদেরকে ধরে নিয়ে তারা ইচ্ছেমত গণধর্ষণ করে। এভাবে ওই এলাকার ১০/১২টি গ্রামের সেনাপুলিশের নির্যাতনে বেঁচে যাওয়া নারী-পুরুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। উল্লেখ্য, কফি আনানের সফরকালে সিটওয়ে বিমানবন্দরের সামনে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ’ মানুষ। তাদের দাবি, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনে কোনো বিদেশির হস্তক্ষেপ চান না তারা। কফি আনান কমিশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সেটি সরাসরি দেশটির প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে দেবেন। গেল সেপ্টেম্বরেও এই কমিশন রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেছিল। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিষয়ক কমিশনের প্রধান কফি আনান গত শনিবার দুপুরে মংডু এলাকার কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে ওই এলাকায় বর্বরতার শিকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তিনি, যদিও কথা বলতে অনেক রোহিঙ্গা সেখানে জড়ো হয়েছিল। কিন্তু জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিয়ে যান সন্ত্রাসী ও বৌদ্ধ সেনা সদস্যরা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু কেয়ারিপ্রাং এলাকার কয়েকজন রোহিঙ্গা (নিরাপত্তার কারণে তাদের নাম প্রকাশ করা হলো না) জানায়, সকাল (শনিবার) থেকে তাদের এলাকায় সেনা সদস্যরা কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এর পরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা সাহস করে জড়ো হয়েছিল কফি আনানসহ কমিশনের সদস্যদের কাছে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরার জন্য। কিন্তু সেনা সদস্যরা তা বুঝতে পেরে তাদের সরিয়ে নেন। অনেককে পাশের একটি স্কুলে আটকে রাখেন তাঁরা। বিবিসি, আল-জাজিরা, সিএনএন।



 

Show all comments
  • Osman ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:৩৭ এএম says : 0
    ai request kore kono lav nai.
    Total Reply(0) Reply
  • md shahadat hossain ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:২৯ পিএম says : 0
    Ruhinga muslimder rokkha kora bissha muslim ummahr imani daitto.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ