পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিরোধী দল বাধাহীনভাবে রাজপথের কর্মসূচি পালন করতে পারছে বিদেশীদের এটা বোঝানোর জন্য রাজধানী ঢাকার কর্মসূচি বাধাহীন হলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মসূচিতে হামলা
ফারুক হোসাইন
বিএনপি যেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়েছে। দলটি জনদাবি নিয়ে যখনই রাজপথে নামছে তখনই দলটির নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় এ আক্রমণ কম হলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। কোথাও আইন শৃংখলা বাহিনী নিরাপত্তা রক্ষার নামে, কোথাও পুলিশ ও ছাত্রলীগ মিলে আক্রমণ করছে। অথচ কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি মাঠের কর্মসূচিতে যেন হামলা-আক্রমণ করা না হয়। ঢাকা সফরে এসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন ‘সব দলের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচনের আগে পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে রাজপথের আন্দোলনে অতি বলপ্রয়োগ যেন না করা হয়। কিন্তু মাঠের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। রাজধানী ঢাকায় সভা সমাবেশ-র্যালি করতে পারলেও জেলা পর্যায়ে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা হচ্ছে নিয়মিত।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারণে দলটির এখনো সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয়। সমর্থক নির্ভর দলটি
২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন ও ২০১৮ সালের নির্বাচনী ক্যারিক্যাচায় ভূমিধ্বস পরাজয়ের পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে জনস্বার্থের ইস্যুতে দলটি এখন নিয়মিতই সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে ততই সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মসূচিতে বাড়ছে লোকজনের সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে মিছিল-বড় হচ্ছে সমাবেশের আকার। তবে বিএনপির এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এখন প্রায় ঘটছে হামলা, গুলি, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা। বিশেষ করে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা নিহতের প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিএনপি। উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি কর্মসূচিতেই শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারপরও গত ২২ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১০ দিনে ৩০টি স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আ.লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে আহত হয়েছেন সহস্রাধিক নেতাকর্মী। ১২টি স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর করা হয়। ১৪টি স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ঘটেছে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনাও।
আর সর্বশেষে গতকাল বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মিছিল বের করতে গেলে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন যুবদল কর্মী শাওন মাহমুদ। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। একই কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অর্ধশত এবং নেত্রকোণায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপে বিএনপির ৩৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়েও যেখানেই বিএনপি কর্মসূচি পালন করছে সেখানেই হয় পুলিশ না হয় আ.লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে শোভাযাত্রা করতে নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকার আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারের সামনে নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের শোভাযাত্রা করতে বাধা দেয়। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে, পুলিশ লাঠিপেটা করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় শহরের দুই নম্বর রেলগেট ও আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে যুবদলের এক কর্মী নিহত হন। তাঁর নাম শাওন মাহমুদ (২০)। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী ছিলেন। একই সময় আরও ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। তারা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শাওনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল) আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফরহাদ বলেন, শাওন মাহমুদকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তাঁর শরীরে গুলির চিহ্ন আছে। লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, পূর্বানুমতি ছাড়া বিএনপি নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাঁদের সরাতে চাইলে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে জানমাল রক্ষার্থে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে। কাঁদানে গ্যাসের শেল, গুলি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে চারটি মোটরসাইকেলে আগুনসহ সাত থেকে আটটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মামুন মাহমুদ বলেন, পুলিশ অতর্কিতভাবে তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠিপেটা করেছে। এরপর শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। যুবদলের গুলিবিদ্ধ কর্মী শাওন মাহমুদকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা গেছেন।
একই কর্মসূচি পালনকালে মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকারসহ তিন পুলিশ সদস্য ও দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের লাঠিপেটায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের উত্তর সেওতা এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে দিকে যাচ্ছিলেন। পথে খালপাড় এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাগ্বিতÐায় জড়ান। একপর্যায়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে। এতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হন। এরপর পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে।
নেত্রকোনায় পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে শহরের ছোটবাজার এলাকায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টার দিকে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসছিলেন। এ সময় শহরের প্রধান সড়কে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী জড়ো হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ নেতা-কর্মীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে; কিন্তু উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল করতে থাকেন। পরে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন।
এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আহত হন বিএনপির ২৫-৩০ জন নেতা-কর্মী।
নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহŸায়ক ডা. আনোয়ার বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে আমাদের ওপর হামলা চালায়। পরে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যৌথ প্রযোজনায় নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ সারাদেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপ্রিয় কর্মসূচিতে নারকীয় হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে যখন গণতন্ত্রকামী জনতা জেগে উঠেছে, ঠিক তখনই গণতন্ত্রের উত্তাল তরঙ্গকে স্থিমিত করতে আওয়ামী হায়েনা পুলিশ বাহিনী বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ সারা বাংলাদেশে হামলা চালিয়েছে।
রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের পতন নিশ্চিত যেনেই তারা এখন আবার হামলা-মামলার নতুন কৌশল বেছে নিয়েছে।
২২ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা:
গতকাল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও এর আগে জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলমান কর্মসূচিতে অন্তত ৩০ জেলায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মরহুম সদস্য তরিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীসহ বেশ কয়েকজনের বাড়িতে হামলার করা হয়। ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়িতে হামলা করা হয়েছে।
গত ৩১ আগস্ট কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৫০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে নাঙ্গলকোট আরিফুর রহমান সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ২৭ শিক্ষার্থী আহত হয়। নারায়ণগঞ্জের মÐলপাড়া এলাকায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সমাবেশের জন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হলে পুলিশ তাদের ঘিরে রাখে, কর্মসূচি পালনে বাধা দেয় এবং ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। এতে ১৫ জন আহত হন। নেত্রকোণার মদনে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে আ.লীগের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুইপক্ষের ১৮ জন আহত হন। পিরোজপুরের নেছারাবাদে বিএনপির সমাবেশের উদ্দেশ্যে ট্রলারে করে যাওয়ার পথে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ইট নিক্ষেপ করে, এতে ১৫ জন আহত হয়।
৩০ আগস্ট ফেনীর দাগনভূঞায় সমাবেশে যাওয়ার পথে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়িবহরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা-ভাঙচুর করে। এতে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। একই দিন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কেরাণীগঞ্জের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এতে নেতৃত্বে ছিলেন দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা আ.লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ। বাগেরহাটের চিতলমারীতে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের ওপর আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপির ১৬ জন আহত হন। কুমিল্লার তিতাসে আ.লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপির ১৫ জন আহত হয়। নাটোরের সিংড়ায় সমাবেশে যাওয়ার পথে পিটিয়ে যুবদল নেতার পা ভেঙে দেয়া হয়।
২৯ আগস্ট নোয়াখালীর সেনবাগে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ইউনিয়ন আ.লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এতে উভয়পক্ষের ৩১জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে। চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া মিয়াখান নগরে বিএনপি-আ.লীগ সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। ফেনীর সোনাগাজীতে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ ১০ জন আহত হন। এসময় পুলিশ অর্ধশত শটগানের গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে। মাগুরার শ্রীপুরে সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে আ.লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় ১৫ জন আহত হন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘর-দোকানপাটে ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় আ.লীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেয় বলে অভিযোগ বিএনপির।
২৮ আগস্ট আবারও যশোরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম তরিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তরিকুলের ছেলে খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়িতে হামলা চালানো হয় এবং জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
নরসিংদীর মনোহরদীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার পাশাপাশি পুলিশও গুলি ছুড়ে। এতে ২৭ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও ১১জন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর বিএনপির তালাবদ্ধ কার্যালয়ে আ.লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বিএনপির সমাবেশে আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়, এতে ১৫ জন আহত হন।
২৭ আগস্ট বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে বড় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে মাগুরা শহরে। আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী দেশি অস্ত্রশস্ত্র হাতে বিএনপির সমাবেশের দিকে আসেন এবং একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পাশের গলিতে আশ্রয় নেন এবং পরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন আহত হন। এসময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগু ধরিয়ে দেয়া হয়। বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছাত্রলীগের হামলায় বিএনপির ৩০ নেতাকর্মী আহত হন।
গত ২৬ আগস্ট দেশের ১০টি জেলায় হামলা, সংঘর্ষ ও কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটে। ৭টি স্থানে আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির ১৬৯ নেতাকর্মী আহত হন।
এদিন যশোরে এক রাতেই বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। বিএনপির অভিযোগ ২৬ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাতে রাত ১টা ৪০ মিনিটে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির মরহুম নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এরপর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান এবং জেলার যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংর্ষের সময় পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। জবাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয়পক্ষের ৪০ জন আহত হয়। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে বিএনপির মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় আহত হন ৫০ নেতাকর্মী। বাগেরহাটে বিএনপির সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে হামলা ও বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়। এতে ২৫ জন আহত হয়। নোয়াখালীর চাটখিলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিএনপির সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুর করে। এসময় ১৫ জন আহত হয়। নেত্রকোণার কেন্দুয়া পৌর শহরে বিএনপির সমাবেশে আসার পথে ৬টি স্থানে হামলায় দলটির ২৮ জন নেতাকর্মী আহত হন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে আ.লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় ৫জন আহত হয়। বগুড়ার শেরপুরে কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় যুবদলের ৬জন আহত হয়। পটুয়াখালীর গলাচিপা শহরে বিএনপি বিক্ষোভের ঘোষণা দিলে আগের রাতে দলের উপজেলা কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়।
২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ফেরার পথে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খানের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বরিশালের উজিরপরে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করলে বিএনপির ৪৫ জন আহত হন। মেহেন্দীগঞ্জে যে স্থানে সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয় সেখানে আ.লীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে সমাবেশ পÐ হয়ে যায়। এসময় আ.লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় ৫জন আহত হন। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির বন্ধ কার্যালয়ে হামলা চাূিলয়ে ভাঙচুর করা হয়।
২৪ আগস্ট বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে আ.লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এতে ৫০ জন আহত হয়। অন্যদিকে টাঙ্গাইল শহরের সমাবেশে হামলায় ৭জন আহত হন।
২২ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও জেলার সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাড়িতে হামলা করা হয়। আ.লীগ নেতা কবির পাটোয়ারীর নেতৃত্বে আ.লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ করা হয়। এতে ৫জন আহত হন। বরিশালের গৌরনদীতে হামলা করা হয়। জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ শুরুর সময় আ.লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। পরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে চলা আন্দোলন নসাৎ করার চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসী বাহিনী ও সরকারের পুলিশের পেটোয়া বাহিনীর হামলায় সারা দেশের অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন, অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, একটি কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই হত্যা করে, গুম করে, হামলা করে জনগণের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন, গণতন্ত্রকে ফিরে পাবার যে আন্দোলন সেই আন্দোলনকে কখনোই দমন করা যাবে না। জনগণের বিজয় চলছে, চলতে থাকবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।