পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজ ১ সেপ্টেম্বর। বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে দলটি। এরই মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। দলের ওপর দেশী-বিদেশী চক্রান্ত, অব্যাহত চাপ, শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের উপর অবর্ণনীয় হামলা, মামলা, গ্রেফতার, জুলুম-নির্যাতনের কারণে সাংগঠনিক দুর্বলতা বেড়েছে মতানৈক্য। সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থতা, নির্বাচনে ভরাডুবি, নতুন-পুরোনো জোটে অসন্তোষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপরিপক্কতার কারণে বিএনপি অনেকটাই কোণঠাসা। প্রতিষ্ঠার পর বিএনপি এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এই অবস্থায় ৪৪বছর পূর্ণ করে ৪৫-এ পদার্পণ করেছে রাজপথের প্রধান এই বিরোধী দল।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণীতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৪৪ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এদেশের মানুষকে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অন্ধকার যুগ থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের আলোকোজ্জ্বল পথে নিয়ে এসে সেটিকে চিরস্থায়ী করতে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, এই ঘোর দুর্দিনে জনগণকে সংগঠিত করার কোন বিকল্প নেই। আওয়ামী দুঃশাসনের ছোবলে চারিদিকে মহা-আশঙ্কা পরিব্যাপ্ত। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে নিয়ে জনগণের ওপর স্টীমরোলার চালাচ্ছে। খুন-খারাবী, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা এখন বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা থাকতে পারে না। এই সরকার হরণের খেলায় মেতে উঠেছে। সুতরাং গণতন্ত্রকে পুণরুদ্ধার করতেই হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ্বং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে হয়রানির খড়গ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্রায় পৌনে পাঁচ বছর বন্দী জীবন-যাপন করছে। কারণ তিনিই গণতন্ত্রের প্রতীক এবং জনগণের নাগরিক ও বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে প্রধান কন্ঠস্বর। দেশের বর্তমান এই ক্রান্তিকালে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন বিএনপি মহাসচিব।
৪ বার ক্ষমতায় ও দুইবার বিরোধী দলে থাকা এই দলটি বিভিন্ন সময় নানা বাধা-বিপত্তির মুখে পড়েছে। তবে সংগঠনের বিস্তৃতি থেমে থাকেনি, বেড়েছে জনসমর্থনও। সরকারের দমন-পীড়নে নেতা-কর্মীদের ওপর মিথ্যা মামলার হিড়িক ও গ্রেফতার, নিখোঁজ বা গুম ঘটনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৭৭ সালে জুন মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগো দল) গঠন করেন। ওই দলের আহবায়ক হয়েছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। এরপর জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করে জিয়াউর রহমান ওই বছরে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জাগো দল, ন্যাপ (মশিউর রহমান যাদু মিয়া), ইউনাটেড পিপলস পার্টি (ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম-কর্নেল আকরর হোসেন), লেবার পার্টি (মতিন) ও মুসলিম লীগ (শাহ আজিজুর রহমান) নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানে নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়, যেখানে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, শাহ আজিজুর রহমান, প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এসএ বারী, ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল হালিম, জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদ-উল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) নুরুল হক, ব্যাস্টিার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত, এম সাইফুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মতিন, কর্নেল (অব.) আসম মোস্তাফিজুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, আতাউদ্দিন খান প্রমূখ নেতা ছিলেন।
১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়। দলের ১১ সদস্যের স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়।
তিন বছরেরও কম সময় পরে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এসময় গৃহবধূ ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের জানুয়ারিতে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তখন থেকে প্রায় ৯ বছর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে গৃহবধূ থেকে দেশনেত্রীতে পরিণত হন বেগম খালেদা জিয়া।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি হন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। এরপর আরও দুইবার নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তবে ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকারের শাসনামল থেকে একটানা প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলটি অংশ নিলেও ভূমিধ্বস পরাজয় হয়। এরপর থেকেই দলপুনর্গঠনের কাজে হাত দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন জেলা কমিটির সাথে সাথে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও আনছেন নতুন নেতৃত
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির কর্মসূচি:
বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে ভোর ৬ টায় দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বেলা ১২টায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর শেরেবাংলা নগরস্থ মাজারে বিএনপি’র জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ফাতেহা পাঠ ও পুস্পার্ঘ অর্পণ করবেন। বেলা ৩টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। র্যালিতে বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে ইতোমধ্যে পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে।
৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল রাজধানীর গুলিস্থানস্থ মহানগর নাট্যমঞ্চে বেলা আড়াইটায় বিএনপি’র উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি’র জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবন্দসহ দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। অনুরুপভাবে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরসহ সকল ইউনিট বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। স্থানীয় সুবিধানুযায়ী আলোচনা সভা, র্যালি ইত্যাদি কর্মসূচি পালনে তারা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। ####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।