গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগে থার্ড জেন্ডার মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়না হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ শোয়েব আক্তার ওরফে লাদেন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেত।(ডিএমপি) যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ভিকটিম মেঘনা ডায়না সমকামি ছিলেন। শোয়েবের সাথে ভিকটিমের দুই বছর ধরে শারিরীক সম্পর্ক ছিল। ভিকটিমের বাসায় মাঝে মধ্যে সে ফুট ফরমায়েশ করতো। এর বিনিময়ে টাকা পয়সা নিতো। দুই বছর আগে তার সাথে সখ্যতা সৃষ্টি হয় এবং উভয়ই সমকামিতায় লিপ্ত হয়। এর জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
গ্রেপ্তারের নাম হলো- শোয়েব আক্তার ওরফে লাদেন। এসময় তার কাছ থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ১টি হাঁতুড়ি ও ভিকটিমের ২টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।
গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় শেরপুর নালিতাবাড়ির সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জিয়াউল আহসান তালুকদার এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ২৭ আগস্ট বিকাল ৫টায় স্থানীয় লোকজন টহল পুলিশকে জানায় যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগের একটি বাসায় একজন লোকের গলিত লাশ আছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে টহল পুলিশ ও ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিম মাকসুদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করেন।
ডিসি জিয়াউল হাসান বলেন, উক্ত ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে তার পরিবারসহ সকলের কাছে বিষয়টি অপমৃত্যু বলে মনে হয়। বাড়ির মূল ফটকটি ভিতর থেকে বন্ধ ছিলো। ঘটনাটির তদন্তে ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে মাঠে নামেন যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) জাকির হোসেন, এসআই মুকিত হাসান।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে জানা যায় ভিকটিম মাকসুদ রহমান খান একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং উচ্চ শিক্ষিত। তিনি তার নিজ বাসায় একাই বসবাস করতেন। বাসার ভিতর সে ৪টি পোষা কুকুর পালন করতেন। তিনি সমাজের তেমন কারো সাথে মিশতেন না। কিছু তরুন বয়সী ছেলেরা তার বাসায় যাওয়া আসা করতো বলে জানা যায়। পরে ভিকটিমের রুম থেকে প্রাপ্ত আলামত ও লাইফ স্টাইল স্টাডি করে পুলিশ ধারনা করে ঘটনাটি হত্যাকান্ড, যা ১০-১২ দিন আগে সংঘটিত হয়েছে।
উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ভিকটিমের জীবন ধারনের চিত্র, ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত একজনকে সন্দেহ করে। পরে সন্দেহকৃত ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ির সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে শোয়েবকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিসি বলেন, ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনায় গ্রেপ্তার শোয়েব স্বীকার করেন, ভিকটিম মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়না সমকামি ছিলেন। তার সাথে ভিকটিমের দুই বছর ধরে শারিরীক সম্পর্ক ছিল। ভিকটিমের বাসায় মাঝে মধ্যে সে ফুট ফরমায়েশ করতো। এর বিনিময়ে টাকা পয়সা নিতো। দুই বছর আগে তার সাথে সখ্যতা সৃষ্টি হয় এবং উভয়ই সমকামিতায় লিপ্ত হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের কারণ সর্ম্পকে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, কিছু দিন আগে গ্রেপ্তার শোয়েব বিয়ে করেন। বিয়ের পরও তাদের মধ্যে সমকামিতা চলতে থাকে। কিন্তু শোয়েবের এই বিয়ে ও নতুন জীবনকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ভিকটিম। ভিকটিম শোয়েবের বিবাহিত জীবনকে ধ্বংস করতে সুযোগ খুঁজছিলেন। অন্যদিকে শোয়েবও চাইতো এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে মুক্ত জীবনে ফিরতে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৬ আগস্ট ভিকটিম মাকসুদ, শোয়েবকে তার গোলাপবাগের বাসায় ডেকে আনেন এবং অবৈধ শারিরীক সম্পর্ক করেন। একপর্যায়ে ভিকটিম মাকসুদ শোয়েবের গোপনাঙ্গ কামড়ে ধরেন। এসময় শোয়েব তাকে বাসার টেবিলে থাকা হাঁতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এর ফলে ভিকটিম রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে বিছানায় পরে থাকেন। এসময় শোয়েব দ্রুত ওই স্থান থেকে বের হয়ে বন্ধ মূল ফটক টপকে পালিয়ে যান।
গ্রেপ্তার শোয়েব ঘটনার সকল কিছু স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছেন। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় রুজুকৃত মামলায় গ্রেপ্তার শোয়েব বর্তমানে জেল হাজতে আছেন বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।