ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে কবিরাজের অপচিকিৎসায় লিমা আক্তার তামান্না (১৪) নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। নিহত তামান্না স্থানীয় জাটিয়া দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো।
জানা যায়, উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের ভাসাটি গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে তামান্না দীর্ঘদিন ধরে কোমড়ে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা করছিলো। ডাক্তারি চিকিৎসায় মেয়েটি সুস্থ্য না হওয়ায় তার পরিবার জানতে পারেন আমেনা খাতুন (৫৫) নামে এক মহিলা কবিরাজের চিকিৎসা করে। যার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সুসং দুর্গাপুর। ওই মহিলা কবিরাজের মেয়ের স্বামীর বাড়ি ভাসাটি গ্রামে হওয়ায় এখানে আসা যাওয়া এবং ওই এলাকার অনেকের চিকিৎসা করতেন। এঅবস্থায় মহিলা কবিরাজের দ্বারস্থ হলে রোগী দ্রুত সুস্থ্য হবে এবং বিনিময়ে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান তিনি। তাতে তামান্নার পরিবার রাজি হলে তিনি চিকিৎসা শুরু করেন। তাবিজ-কবজ ও ঝাড়ফুকের পাশাপাশি কবিরাজের সহকারি মুখে হাত চাপা দিয়ে রাতে ধুপ, আগরবাতি, কাপড়ের শলতা, গন্ধক, চুনসহ অনেককিছু দিয়ে ধোঁয়া সৃষ্টি করে নাকে-মুখে শুকতে বলে। এমন পরিস্থিতিতে ধারণা করা হয়, এতে মেয়ের শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য জঠিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার তামান্নার অবস্থার অবনতি হলে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর অবস্থা অবনতি দেখে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে ঈশ্বরগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ নেয়ার পথে তামান্নার মৃত্যু হয়।
তামান্নার বাবা আব্দুর রশিদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার ধারণা মহিলা কবিরাজের চিকিৎসার কারণেই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমি ভুল করেছি- ঐ কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করিয়ে। তবে এ বিষয়ে আমাদের কারো উপর কোন অভিযোগ নেই।
কবিরাজকে খুজে না পেয়ে তার মেয়ে আকলিমা আক্তার বলেন, আমার মা গতকালকে আমার বাড়ি থেকে চলে গেছেন। আমার মা ভাসাটি ও আশপাশের এলাকার অনেক জঠিল রোগীর চিকিৎসা করে তাদেরকে সুস্থ্য করেছেন। নিহত তামান্নার চিকিৎসার জন্য আমার মাকে অনেক জোর করে নিয়ে যায় তার বাবা আব্দুর রশিদ। এঅবস্থায় তামান্নার মৃত্যুতে আমার মায়ের চিকিৎসার কোন সম্পর্ক নেই। তার মৃত্যুকে আমার মায়ের কোন দোষ নেই।
এ বিষয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান আকন্দ হলুদ বলেন, গ্রামের মানুষের অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কারের কারণে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ ধরণের অপচিকিৎসা বন্ধ হওয়া জরুরী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নূরুল হুদা খাঁন বলেন, বর্তমান অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কবিরাজি চিকিৎসার কথা শুনতে হবে এটা চিন্তা করাও কঠিন। এসব কুসংস্কার ও অপচিকিৎসা রুখতে গ্রাম গঞ্জের আবাল বৃদ্ধ বণিতাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ পীরজাদা শেখ মোহাম্মদ মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, এবিষয়ে কাহারো পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আপনাদের কাছ থেকে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।