পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। চলছে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময়, শুরু হয়েছে দলগুলোর নয়া মেরুকরণও। জোট ভাঙন, নতুন দল গঠনসহ পর্দার অন্তরালে চলছে নানা খেলাধুলা। তবে এসব কিছুকে পাত্তাই দিতে চায় না রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বরং নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করা, সাধারণ মানুষকে সেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা এবং সেটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হামলা, মামলা, গ্রেফতার চলছে, আগামীতেও চলবে মেনে নিয়েই রাজপথে অনড় থাকার প্রত্যয় দলটির নেতাদের।
সম্প্রতি দেশব্যাপী লোডশেডিং, পরবর্তীতে জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, সকল দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বোমুখির প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। রাজধানী, মহানগর ও জেলার পর এখন উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়েও কর্মসূচি নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছেন দলটির নেতারা। প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই বিএনপির কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ দেখে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নীতিনির্ধারণী নেতারা। এমনকি উপজেলা পর্যায়ের বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে ও সামনের দিনে নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন শীর্ষ নেতারা।
এদিকে চলমান কর্মসূচি পালনে ইতোমধ্যে অন্তত ৩০টি জেলাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিএনপির দাবি এসব ঘটনায় দলের ৭৭৫ জনের অধীক নেতাকর্মী আহত হয়েছে, কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে। তবে হামলা, মামলা, গ্রেফতার করা হলেও বিএনপি মাঠ ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ। তিনি বলেন, তৃণমূলে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে এটা বুঝতে পেরে ক্ষমতাসীনরা সহিংস হামলার পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু হামলা করে এবার নেতাকর্মীদের দমাতে পারবে না। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা রাজপথে থাকব। এদিকে জ্বালানি তেলে, পরিবহন ভাড়াসহ সকল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির চলমান উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মসূচি ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। বিএনপির অন্যতম এক শীর্ষ নেতা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চলমান কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ দেখে সন্তুষ্ট। এজন্য তিনি দেশের সকল উপজেলা-থানায় বাধ্যতামূলকভাবে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব এলাকায় বাধা দেয়া হচ্ছে, কিংবা ১৪৪ ধারা জারি করা হচ্ছে সেখানে তারিখ পরিবর্তন করে হলেও কর্মসূচি পালন করতে হবে। এমন কোন উপজেলা বা থানা থাকবে না যেখানে এই কর্মসূচি পালিত হবে না। এজন্য ৩০ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১০ সেপ্টেম্বর চলমান কর্মসূচি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরপরও যদি কোন উপজেলা-থানা কর্মসূচি পালন করতে না পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা, জেলা ও ওই আসনে বিএনপির এমপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হওয়ায় এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এটি অন্যদের জন্য সতর্কতা ও দৃষ্টান্ত হিসেবে এখন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা উপস্থাপনও করছেন।
দলটির নীতিনির্ধারণী এক নেতা বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। তৃণমূল থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন আরও বেগবান করা হবে। হামলা-মামলা কিংবা গ্রেফতার কোনো কিছুতেই রাজপথ না ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাধা আসলে আপাতত পালটা হামলা এড়িয়ে কৌশলে কর্মসূচি পালনে কেন্দ্র থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কখন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে তা সময়মতো হাইকমান্ড থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো বাধা রাজপথে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, চলমান আন্দোলনে গণ জোয়ার দেখে আওয়ামী লীগের পালস বিট বেড়ে গেছে, হাই প্রেসারে তাদের শরীর ঘামতে শুরু করেছে। হামলা, মামলা, সন্ত্রাসী তাণ্ডব করে তারা গণ জোয়ারকে স্তব্ধ করতে চায়। কিন্তু এভাবে আন্দোলন দমন করা যায় না।
তিনি বলেন, গ্রামে-গঞ্জে আন্দোলনে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জনদূর্ভোগের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হবে। আমরা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেই ঘরে ফিরবো।
সারাদেশের কর্মসূচিতে হামলার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ প্রটেকশনে হামলা চালানো হচ্ছে। শুধু হামলা নয়, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া এবং গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন আবার নতুন কৌশল হিসেবে গভীর রাতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালানো হচ্ছে। তবে এসব করে শেষ রক্ষা হবে না।
বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলমান কর্মসূচি চলাকালে গত ২২ আগস্ট থেকে যশোরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির মরহুম সদস্য তরিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। পরের দিন আবারও তার ছেলে ও দলটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের ওপর হামলা ও গাড়ী ভাংচুর করা হয়। লক্ষীপুরে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এছাড়া ফেনীর পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, পটুয়াখালীর গলাচিপা, কলাপাড়া, চট্টগ্রামের বাশখালী, নরসিংদীর বেলাবো, রায়পুরা, মনোহরদী, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বাগেরহাট সদর উপজেলা, রামপাল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, সন্দ্বীপ, নোয়াখালী সদর, সেনবাগ, চাটখিল, সোনাইমুড়ি, হাতিয়া, খাগড়াছড়ির দিঘীনালা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি, জামালপুরের বকশিগঞ্জ, মাদারগঞ্জে, কুমিল্লার দেবিদ্দার, দাউদকান্দি, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, মেহেরপুরের গাংনী, ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, টাঙ্গাইলের সখীপুর, ঘাটাইল, কালিহাতি, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ, খুলনার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, রাজশাহীর কায়িাডাঙ্গা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, গজারিয়া, ভোলার বোরহানউদ্দিন, মাগুরা সদর, কুষ্টিয়া, নাটোরের বাগাতিপাড়া, নেত্রকোণার কেন্দুয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, আখাউড়ায় বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়। এতে দলটির ৭৭৫ জনের অধীন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এবিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চাল-ডাল-তেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভোলায় আমাদের ছাত্রদল নেতা নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আমরা সারা দেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা ও জেলা পর্যায়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছি। এই প্রতিবাদ আন্দোলনে সারা দেশের জনগণের মধ্যে একটি অভূতপূর্ব সারা সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে মানুষ বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ হচ্ছে এই সরকারের বিরুদ্ধে। এতে সম্পূর্ণভাবে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী চরিত্র আরও একবার উদ্ভাসিত হয়েছে। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, এমনকি প্রবীন রাজনীতিবিদের বাড়িতেও হামলা করা হচ্ছে। আমি সব সময় বলি, আওয়ামী লীগের বডি ক্যামিস্ট্রির মধ্যেই সন্ত্রাস আছে। রাজনৈতিকভাবে তারা দেউলিয়া হয়ে বলপ্রয়োগ ছাড়া তাদের টিকে থাকার আর কোনো অবস্থা নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কিছুদিন আগে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বললেন কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে। ঠিক তার উল্টোটা তারা এখন করছেন। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। তারা কথা বলবেন একটা আর কাজ করবেন আরেকটা।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।