পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জ্বালানি ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দৈনিক এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা, একদিন শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা, অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যসময় কমিয়ে আনা ইত্যাদির কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে। স্বভাবতই আশা করা গিয়েছিল, এসব পদক্ষেপের ফলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে, সাশ্রয় হবে। বাস্তবে তা হয়নি। শহর ও গ্রামে বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। শিডিউল মতো লোডশেডিং না করে দীর্ঘ সময় ধরে এবং দিনে কয়েকবার করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে লোকদেখানো উন্নতি প্রত্যক্ষ করা গেলেও দিনে এক ঘণ্টার জায়গায় কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। অন্যান্য শহর ও গ্রামাঞ্চলের অবস্থা অতি শোচনীয় বললে কম বলা হয়। দিনে ১০-১২ ঘণ্টা এমন কি, কোথাও কোথাও ১৮-ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির যে এতটুকু উন্নতি হয়নি, এটা তারই সাক্ষ্য দেয়। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের চাহিদা সাশ্রয় কর্মসূচী নেয়ার পর আরো বেড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় কৃষি ও শিল্পে তেলের চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছে। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখা হলেও জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সরকার এখন ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপরই ভরসা করছে। বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ফের চালু হতে যাচ্ছে। তাতে লোডশেডিং কমবে কিনা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও তেলের চাহিদা ও ব্যবহার যে বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সঙ্কটের প্রেক্ষপটে জ্বালানি ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ে নেয়া পদক্ষেপগুলোর ইতিবাচক, সেটা বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সাশ্রয়পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারা এর সুফল পাচ্ছে। আমাদের দেশেই ব্যতিক্রম লক্ষ্যনীয়। উন্নতির বদলে অবনতি ঘটছে। অথচ, আমাদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, গত মাসের চেয়ে চলতি আগস্ট মাসে বিদ্যুতের অবস্থা নাকি ভালো। আসলেই কি তাই? পর্যবেক্ষক মহল মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিহীন বলে মনে করে। তাদের মতে, তিনি সত্য তথ্য দেননি। বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেয়ার মধ্যে সততার যে পরিচয় পাওয়া যায়, মন্ত্রী সেটা প্রদর্শন করতে পারেননি। একথা কারো অজানা নেই, বিদ্যুতের অভাবে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তেলের সঙ্কট ও উচ্চদামের কারণে তেলচালিত সেচযন্ত্রও চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। একই সঙ্গে সারের অভাব ও তার উচ্চমূল্য গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া। এমতাবস্থায়, আমনের আবাদ-উৎপাদন ব্যহত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের বিক্ষোভ পর্যন্ত হচ্ছে। ওদিকে শিল্পের উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রফতানিমুখী শিল্প বিশেষত গার্মেন্ট শিল্পের মালিকরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। তারা রফতানি ব্যহত বা অর্ডার বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করছে। গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদন সচল রাখতে জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় তেল উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে। এতে তেলের সংকট যেমন বাড়ছে তেমনি উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়ছে। রফতানিপণ্যের সঙ্গে অতিরিক্ত উৎপাদনব্যয় যুক্ত হয়ে মোট দাম যা দাঁড়াচ্ছে, সেই দাম ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এতে মালিকরা ক্ষতির শিকার হতে পারে, যা শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। দেশীয় বাজারের জন্য উৎপাদিত পণ্যের দামও অনুরূপভাবে বাড়ায় চাহিদা কমার আশংকা প্রবল। কারণ, বর্ধিত দামের সঙ্গে ক্রেতা-ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার রয়েছে ব্যাপক অসঙ্গতি।
এসব কথা মন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদাধিকারীদের অজানা থাকার কথা নয়। এটাও তাদের জানার কথা, এই ঠা ঠা রোদ ও দুঃসহ গরমের সময়ে বিদ্যুতের অভাবে মানুষ কী ধরনের কষ্ট ও দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পণ্যমূল্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সকালে এক দাম তো বিকেলে আরেক দাম। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বা ইচ্ছা করেই করছে না। ব্যবসায়ীদের ওপর বাজারের ভার ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। ‘ব্যবসায়ী বান্ধব’ সরকার বলেই কি? ব্যবসায়ীরা লুটে পুটে খাক, সরকারের সেটাই কি ইচ্ছে? সাধারণ মানুষের প্রতি দরদ, দায়িত্ব কোনোটাই সরকারের আছে বলে মনে হয় না। শোনা যাচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম নাকি আবারো বাড়ানো হবে। বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে। ভোজ্যতেল, চাল-ডাল, আটা-ময়দা সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। ফের জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? এই দুঃসময়ে সরকারের উচিত দরিদ্র, নিম্ন, মধ্য আয়ের মানুষের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়ানো। মন্ত্রী ও দায়িত্বশীলদের উচিত গণকল্যাণে ভূমিকা রাখা; কর্ম দিয়ে এবং সঠিক তথ্য দিয়ে। মন্ত্রীরা যখন ভুল তথ্য দেন, কিংবা অসত্যাচার করেন, তখন সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। এ ধরনের কাজ থেকে, কথা থেকে, অবাস্তব তথ্য দেয়া থেকে তারা বিরত থাকবেন, এটাই আমরা একান্তভাবে প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।