Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঞ্চয় খাতে সুদের হার কমানো যাবে না

প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবারো সঞ্চয় খাতে সুদের হার কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গতকাল একটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, সুদের হার কমাতে অর্থমন্ত্রীর একটি প্রস্তাবে রাজি হননি প্রধানমন্ত্রী। দেশের বিপুল সংখ্যক নি¤œআয়ের মানুষের ক্ষতির কথা বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তে এখনো অটল রয়েছেন বলে জানা গেছে। সরকার যতই উন্নয়নের কথা বলুক, দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কাক্সিক্ষত গতি ফিরছে না। বছরের পর বছর ধরে মন্দাভাব চলছে। অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানে স্থবিরতার পাশাপাশি বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও একপ্রকার বন্ধ্যাত্ব বিরাজ করছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগের জন্য উদ্যোগ গ্রহণে উপযুক্ত পরিবেশ, নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা না থাকায় শহুরে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ একসময় তাদের সঞ্চিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়েছিল। রাঘব-বোয়ালরা কারসাজি করে শেয়ারবাজারে ধস নামিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ায় লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়েছেন। এহেন বাস্তবতায় স্বল্প আয়ের মানুষের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগের একমাত্র নির্ভরশীল অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিম। নিরাপত্তার গ্যারান্টি থাকায় বিশেষত বয়স্ক পেনশনভোগী ও নারীরা পারিবারিক সঞ্চয়পত্র এবং মাসিক ও মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন কিংবা ব্যাংক স্কিমে জমা রাখেন। এসব বিনিয়োগের অর্থ সরকারের বাজেট ঘাটতি পূরণ ও জরুরি প্রয়োজন মেটানোর অন্যতম উৎস।
শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই ব্যাংকে সুদের হার কমেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো সঞ্চয় আমানতে সুদের হার কমালেও ঋণে সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। নির্দেশনা অনুসারে ব্যাংক ঋণের স্প্রেড (ঋণ ও আমানতে সুদের হারে বৈষম্য) কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে স্থিতিশীলতা না থাকায় ব্যাংকগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকার তারল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঋণে সুদের হার কমিয়েও বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। এহেন বাস্তবতায় সরকার সঞ্চয়ে সুদের হার কমিয়ে দিলে এর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমে এলেও বাংলাদেশের সাধারণ ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছে না। উপরন্তু গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ দফায় দফায় মূল্যস্ফীতির শিকার হচ্ছে। সাধারণ দরিদ্র মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নও সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই সঞ্চয়ে সুদের হার কমানোর যে কোনো উদ্যোগ লাখ লাখ পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ তাদের খারাপ বিনিয়োগে ঠেলে দিতে পারে।
চলতি অর্থবছরে সরকারি বাজেট ঘাটতি নিরসনে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই সরকার এই খাত থেকে ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮৮.৭০ ভাগ। নিজস্ব বিনিয়োগে পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের অর্থের অভ্যন্তরীণ উৎসের সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতের বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই সঞ্চয়পত্রের ঋণ লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ ভাগের বেশি হওয়ার বাস্তবতা থেকে বোঝা যায়, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। নি¤œআয়ের লাখ লাখ মানুষের সঞ্চিত অর্থকে বাজেট সংস্থানে কাজে লাগানো সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক মানদ-ে একটি ইতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা যায়। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গত বছর ২ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সরকারের প্রভাবশালী মহল থেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদে বক্তব্য দিয়ে এমনকি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বৃদ্ধির দাবি তুলতেও দেখা গেছে। দেশের রাঘব বোয়ালরা ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছে না। খোদ অর্থমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, প্রধান সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে প্রভাবশালীদের জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকারান্তরে হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি ও লুটপাট হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। দেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, মানুষ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। সাধারণ মানুষের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য সঞ্চয় স্কিমে সুদের হার কমানো ঠিক হবে না।

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সঞ্চয় খাতে সুদের হার কমানো যাবে না
আরও পড়ুন