পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইপিজেডে (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) ট্রেড ইউনিয়নের আদলে ‘শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’ গঠনের অধিকার দিয়ে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ১৬-এর খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে। মন্ত্রিসভার গত সোমবারের বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার দীর্ঘদিনের একটি দাবি ছিল। এই আইনের মাধ্যমে সেই দাবি অর্জিত হতে যাচ্ছে, সন্দেহাতীতভাবে সেটি একটি বড় ধরনের অর্জন বলেই বিবেচিত হওয়ার যোগ্য। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, শ্রম আইন অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়ন (সিবিএ) এবং ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক কল্যাণ সমিতি বা যৌথ দরকষাকষির এজেন্ট গঠন, পরিষদের মেয়াদ বা কার্যবিধির মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। তিনি আরও জানিয়েছেন, আইএলও কনভেনশনকে সম্মান দেখিয়েই এটা করা হয়েছে। তাছাড়া দেশে শ্রমিকদের জন্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা এবং শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কথা সংবিধানেই বলা আছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব উল্লেখ করেছেন, নাম ভিন্ন হলেও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে শ্রমিক প্রতিনিধিরা মজুরি, কর্মঘণ্টা, নিয়োগ ও নিয়োগের শর্ত, ধর্মঘটের অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে সরাসরি মালিকদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারবেন। জানা গেছে, খসড়া আইনে ১৬টি অধ্যায়ে ২০২টি ধারা রয়েছে। আইনে শ্রমিকদের সংগঠন করার এবং দরকষাকষির অধিকার ছাড়াও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন-অবসর সুবিধা, মৃত্যু বা দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ, বাধ্যতামূলক গ্রুপ ইনস্যুরেন্স, ভবিষ্যত তহবিল, অর্জিত ছুটি নগদায়ন, বোনাস, প্রসূতি-ছুটি ইত্যাদির কথা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। আইনে শ্রমিক ও মালিকদের প্রতিনিধি এবং নিরপেক্ষ উৎস থেকে প্রতিনিধি নিয়ে স্থায়ী মজুরি বোর্ড গঠনের কথাও বলা হয়েছে।
শ্রমিকদের সংগঠন করাসহ যুক্তিসঙ্গত বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, চাকরিগত ও অন্যান্য নিরাপত্তা ইত্যাদি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আইএলও কনভেনশন এবং আমাদের বিদ্যমান শ্রম আইনে এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, বিবরণ ও উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু ইপিজেড শ্রম আইন প্রণীত হয়েছে আইএলও কনভেনশন ও প্রচলিত শ্রম আইনের অনুসরণে, সুতরাং পৃথক আইন হলেও এনিয়ে ভিন্ন মত প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকে না। শ্রমিক নেতাদেরও কারো কারো মতে, আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী আইনটি হলে বলার কিছু নেই। এটা কারো অজানা নেই, দেশে ইপিজেডসহ বিভিন্ন স্থানে যে রফতানিমুখী শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে তার পেছনে শ্রমের সহজ প্রাপ্যতাও নিম্নমূল্য প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু সহজ ও সস্তা শ্রমই সব কিছু নয়। শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা, কর্ম পরিবেশ, নিরাপত্তা ইত্যাদিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেকে মনে করেন, শ্রমিকরা ন্যূনতম যে মজুরি পায়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তা একেবারে কম নয়। তবে এই সঙ্গে এটাও অস্বীকার করা যাবে না, শ্রমক্ষেত্র বাড়ছে, আয়-উৎপাদনও বাড়ছে। বিশেষ করে ইপিজেডগুলো অর্র্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রাখছে। এহেন পটভূমিতে ইপিজেডের শ্রমিকরা সঙ্গতকারণেই তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাশা করতে পারে। আলোচ্য ইপিজেড শ্রম আইন কার্যকর হলে, শ্রমিকরা লাভবান হবে। ওয়াকিবহাল মহলের জানা আছে। বিভিন্ন দাতা সংস্থা, দেশ ও বাংলাদেশী পণ্য আমদানীকারকরা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারসহ উন্নত কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আসছিল। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএলও’র যৌথ উদ্যোগে সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের যে দ্বিতীয় বৈঠকটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে বলা হয়, তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের নিরাপত্তার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন ও যৌথ দরকষাকষির অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। বলা বাহুল্য, এটিও নিশ্চিত হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে এটি একটি বড় বাধা বলে মনে করা হয়। আশা করা যায়, অতঃপর জিএসপি ফিরে পেতে দরকষাকষির সামর্থ্য বাড়বে।
আইন প্রণয়নই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতে পারে না। আইনের যথাযথ ও সুচারু বাস্তবায়নই আসল কথা। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই অনেক আইন আছে। আইনের লক্ষ্য কল্যাণ। যদি তা বাস্তবায়িত না হয় তাহলে কল্যাণ অধরাই থেকে যায়। কাগজে কলমে এমন বহু আইন রয়েছে যার বাস্তবায়ন নেই। আমরা ইপিজেড শ্রম আইনকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি আইন বলেই মনে করি। এধরনের একটি আইন প্রণয়নকে আমরা স্বাগত জানাই। আশাকরি, পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আইনটি দ্রুত কার্যকর করা হবে। আইন কার্যকর করাসহ আইনে বর্ণিত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে মালিক-শ্রমিক-সরকার, এই তিন পক্ষেকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
আইনের সুফল যাতে শ্রমিকরা পায় সে ব্যাপারে তিন পক্ষই সততা, স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে, এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।