Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একের পর এক হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত খুলনা বিএনপি

ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

একের পর এক হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে খুলনা বিএনপি। সভা সমাবেশ করলেই হামলা হচ্ছে। সভা আহ্বান করলে সেখানে শাসক দলের পাল্টা সভা আহ্বান করা হচ্ছে। বিগত দিনগুলোতে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে হাজিরা দিতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। কিছু মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে খুলনার রাজপথে আন্দোলন গড়ার কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে।
দলীয় একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছে, বিএনপি যেখানেই সভা সমাবেশ করছে, সেখানেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার খুলনার দিঘলিয়ার পথের বাজারে বিএনপির কর্মী সমাবেশ শেষে হামলা চালানো হয়েছে। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পথের বাজার অতিক্রম করার সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান জানান, ন্যাক্কারজনক এ হামলায় জেলা বিএনপির নেতা খায়রুল ইসলামসহ ৯ জন আহত হয়েছেন।
গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে খুলনার দৌলতপুরে বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মহানগর বিএনপির সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত বুধবার বিকেলে দৌলতপুর থানা বিএনপির উদ্যোগে দৌলতপুরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বানচাল করতে সকাল থেকেই থানা ও বিএল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও স্থানীয় যুবলীগের কতিপয় নেতাকর্মী মহড়া দিতে থাকে। কলেজ ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে জটলা তৈরি করে এবং মহড়া দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার পায়তারা চালায়। যে কোনো সময় সমাবেশস্থলে হামলা চালাবে বলেও তারা প্রচার করতে থাকে। বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে শীর্ষ নেতারা সমাবেশের কাজ শেষ করে ফিরে গেলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা ও রড নিয়ে বিএনপি অফিসে হামলা চালায়। তারা অফিসের টেবিল ও অন্তত ৩০টি চেয়ার ভেঙে ফেলে।
গত ১৮ আগস্ট নগরীর বয়রাবাজার এলাকায় ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপি কর্মীসভা আহ্বান করলে একই সময়ে একই স্থানে ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সমাবেশ আহ্বান করে। ফলে বিএনপির কর্মীসভা বানচাল হয়ে যায়। কেএমপি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ওই স্থানে কাউকেই সভা করতে দেয়নি। গত ১৭ আগস্ট রাতের দিকে নগরীর বায়তুন নুর মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীসভায় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা চালায়। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী অভিযোগ করেন, শাসক দলের ক্যাডারেরা সভামঞ্চ ও চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে। শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করে এবং হামলা থেকে নারী নেত্রীদেরও রেহাই দেয়নি। তারা ওই সময় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা চালানো হয়।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা অভিযোগ করেছেন, সভা-সমাবেশে বাধা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ। এমনকি হামলা চালিয়ে আহত এবং কর্মসূচিও পণ্ড করে দিচ্ছে। বিএনপিকে খুলনায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে দেখে আওয়ামী লীগ আতঙ্কগ্রস্ত। কোথাও পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে, আবার কখনো পুলিশ-আওয়ামী লীগ সংঘবদ্ধ হয়ে বিএনপির ওপর হামলা চালাচ্ছে। এর আগে গত ২৬ মে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ চলাকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। হামলার পর উল্টো আমাদের কয়েকশ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে বিভিন্ন সময় দলীয় কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
এদিকে, হামলার পাশাপাশি মামলায় বিপর্যস্ত খুলনা বিএনপির নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ, গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ৭০ নেতাকর্মীর নামে দায়ের হওয়া নাশকতার একটি মামলার চার্জগঠন হয়েছে আদালতে। মামলাটির অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে সরকার উচ্ছেদ, বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র ধ্বংস, নাশকতা করার উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা লোহার রড, বাঁশের লাঠি এবং ইটের টুকরো নিয়ে রওনা হয়। কেএমপির সোনাডাঙ্গা থানার এসআই রহিত কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো দেড়শ জনকে আসামি করে ওই মামলা দায়ের করেন।
দলীয় সূত্র জানায়, এ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে দায়ের হওয়া শতাধিক মামলায় নগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রতিনিয়ত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। গত ২৬ মে পুলিশের দায়ের করা একটি মামলায় আসামি সংখ্যা ৮০০। এমন অসংখ্য মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, হামলা-মামলা করে বিএনপিকে থামানো যাবে না। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। মধ্যরাতের ভোটে নির্বাচিত এই সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে শেষ মূহুর্তে মরণ কামড় দিতে চাইছে। সরকার পতনের আন্দোলনে খুলনা এবার আর কোনোভাবেই পিছপা হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ