Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেল করা শিক্ষার্থীদের খাতা জব্দ করেছে ডিআইএ

হলিক্রস স্কুলের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা : ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

ফেল করার অপমান সইতে না পেরে রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের পারপিতা ফাইহা নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বহুতল ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্কুলের নির্ধারিত শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পরায় পারপিতাসহ ৫৫ জন ছাত্রীকে ফেল করানো হয়েছে। পারপিতার আত্মহত্যা এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের পর শিক্ষা মন্ত্রনালয়ধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ) ওই শিক্ষার্থীসহ ৫৫ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা জব্দ করেছে। একইসাথে ডিআইএ’র উপপরিচালক ড. রেহানা খাতুনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার স্কুলে যায় পারপিতা। তার ফেল করা এবং এ ব্যাপারে তার বাবা-মাকে স্কুলে আসতে নির্দেশ দেয়ার বিষয়টি বান্ধবীদের সঙ্গে সে আলোচনা করে। কিন্তু কোন সমাধান মিলাতে পারে নি। বিকেল ৫ টায় দিকে স্কুল থেকে ২৯, তেজগাঁও স্টেশন রোডের নন্দন রোকেয়া অ্যাপার্টমেন্টের বাসায় ফিরে। কিন্ত বাসায় না ফিরে সে সরাসরি লিফটে ১০ তলার ছাদে চলে যায়। সেখান থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। পারপিতা হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির সি শাখার শিক্ষার্থী ছিল। চলতি বছর প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গনিতে ৩৫ জন ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ৫৫ জন শিক্ষার্থী ফেল করে। পারপিতা দুই পরীক্ষায় উচ্চতর গনিতে ফেল করে। পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পৃথকভাবে স্কুলে আসার নির্দেশ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ভিন্ন তারিখে স্কুলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে উত্তীর্ণ ও অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ফেল করার বিষয়টি পারপিতা তার বাবা মাকে বলতে পারেনি বলে তার মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। এরপরই মঙ্গলবার বিকালে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

অন্যদিকে, পারপিতার মা কামরুন নাহার অভিযোগ করেছেন, মেয়ের মৃত্যুর পর স্কুল থেকে জানানো হয়েছে পারপিতা ৩ টি বিষয়ে ফেল করেছে। তবে তার মৃত্যুর আগে তারা পারপিতার ফেল করার বিষয়টি জানতেন না।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে যে উচ্চতর গনিতে একজন শিক্ষকের বাসায় প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হত। এ বছর উচ্চতর গনিতে অর্ধেক শিক্ষার্থী ফেল করার ঘটনায় তাদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। পারপিতার সহপাঠী সুহা মার্জিয়া বলে, ৪/৫ দিন ধরে পারপিতার কথাবার্তার মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা গেছে। একবার আলাপ প্রসঙ্গে সে বলেছিল, পটাসিয়াম সায়ানাইড পেলে খেয়ে মরে যাবে।

ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ফৌজদারি আইনের বিষয়। তবে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে প্রাইভেট না পড়ায় তাকে ফেল করানো হয়। আমরা এই বিষয়টি তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এ ঘটনায় কমিটির অন্য সদস্য হচ্ছেন শিক্ষা পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন। গতকাল তদন্ত কমিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, পারপিতার শ্রেণি শিক্ষক ও অভিযুক্ত উচ্চতর গনিতের শিক্ষক শোভন রোজারিওর এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে। তদন্ত কমিটি প্রত্যেকের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছে।

তেজগাঁও রেল স্টেশন রোডের ২৯, নন্দন রোকেয়া ১০ তলা অ্যাপার্টমেন্টের ১০/ডি নম্বর ফ্ল্যাটে পারপিতা তারা বাবা মার সঙ্গে থাকত। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে পারপিতা ছিল বড়। ছোট ভাই একটি মাদ্রাসায় পড়ে। বাবা আব্দুল মাজেদ একজন ব্যবসায়ী।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতেই পারপিতার লাশ বিনা ময়নাতদন্তে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। তার লাশ নেওয়া হয় গ্রামের বাড়ি নোয়খালীর সেনবাগ উপজেলায়। বুধবার সকালে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আত্মহত্যা

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ