বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাজধানীর বড়মগবাজারে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল সুপার ইতি আফরিন সম্পাকে নিজ কক্ষে হত্যা করে মৃত্যুদেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ করেছে তার পরিবার। পরিবােরর অভিযোগ, ঘটনার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি মামলার তদন্তও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
বুধবার বরিশাল প্রেসক্লাবে পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন নিহতের বাবা আবু ছালেক মাস্টার। সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। নিহত ইতি আফরিন সম্পা বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের চাউলাকাঠি গ্রামের আবু ছালেক মাস্টারের ছোট মেয়ে। গত গত ৭ জুলাই বিকালে বড় মগবাজারে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের ষষ্ঠ তলার ৬০৩ নম্বর কক্ষ থেকে ইতির ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য নিহতের বাবা বলেন, গত বছর পহেলা সেপ্টেম্বর ইতি ঢাকার বড় মগবাজারে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী নিবাসের সুপার হিসেবে যোগ দেয়। তার চাচাতো বোন একই স্কুলে শিক্ষক পদে চাকরি করার সুবাদে দুজনেই হোস্টেলের ৬ষ্ঠ তলার ৬০৩ নম্বর কক্ষে থাকত।
গত ৬ জুলাই বিকেলে সম্পার সাথে তার পরিবারের সদস্যদের কথা হয়। রাতে ফোন করার কথা বলে ইতি ফোন কেটে দেয়। ওই রাতে আর ফোন না করায় পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার ইতির মুঠোফোনে কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করেনি। পরবর্তীতে তার রুমমেট চাচাতো বোন মাহফুজাকে ফোন দিলে সে তার ভাইয়ের বাড়িতে গেছে বলে জানায়।
নিহতের বাবা অভিযোগ করে বলেন, ইতি ফোন রিসিভ না করার কারন জানতে চাইলে মাহফুজা বলে, আপনার মেয়ে ফোন ধরে না কেন আমি কিভাবে বলবো। আপনি ঢাকায় এসে দেখেন বলে ফোন কেটে দেয়। পরবর্তীতে আমি ও আমার স্বজনরা ঢাকায় রওয়ানা হই। পথিমধ্যে আমার দুই শ্যালক এবং শ্যালকের বৌ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাকে জানায় ইতি আর নেই। আমি ঢাকায় গিয়ে দেখতে পাই ইতি ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলে আছে। ডান পা খাটের ওপরে হাঁটু ভাজ করা এবং বাম পা অনেকটা খাটের নিচে ঝুলানো। হাত দুটি ওপরের দিকে তোলা। সমস্ত বিছানা এলোমেলো এবং মেঝেতে রক্ত পড়ে আছে। তিনি বলেন, ঘটনার পরে রমনা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। পাশাপাশি এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল হলে ইতির দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করে পুলিশ। মোবাইল ফোন দুটি এক সপ্তাহ পরে ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। কিন্তু আদৌ সে ফোন দুটি ফিরিয়ে দেয়নি। ঘটনার শুরুতে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ যতটা সক্রিয় ছিল কয়েকদিন পেরিয়ে যাওয়ার সাথে তাদের কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবু ছালেক মাস্টার বলেন, ঈদের ছুটেতে সবাই যখন বাড়ি চলে গেছে ইতিও ঘটনার দুদিন আগে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। এজন্য সে ঢাকা সদরঘাটেও এসেছিল। কিন্তু কোন একজনের ফোন পেয়ে সে বরিশালে না এসে আবার হোস্টেলে ফিরে যায়। ইতি ওইদিনই বিষয়টি তাদের মুঠোফোনে জানিয়েছিল। কিন্তু কে তাকে ফোন করে নিয়েছে তা জানায়নি। এরপরেই তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের বাবা আবু ছালেক মাস্টার সহ তার পরিবারের দাবি, ইতির চাচাতো বোন মাহফুজা এবং হোস্টেলের কেয়ারটেকার হারুন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। তাই তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ইতির চাচাতো বোন আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা মাহফুজা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও সে তা রিসিভ করেনি।
এ প্রসঙ্গে, অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নারায়ন চন্দ্র সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ইতির ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাছাড়া জব্দকৃত তার মুঠোফোন দুটি নিয়ে তদন্ত করছে সিআইডি। সেখান থেকেও কোন রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্ত এবং সিআইডির রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, যেই রুমে ইতির মৃতদেহ ঝুলছিল সেই রুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। নিহতের মামা সহ অন্যান্য স্বজনরা দরজা ভেঙে মৃতদেহ দেখতে পেয়ে আমাদেরকে খবর দেয়। এ কারনে প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে ধারনা করা হচ্ছে। তারপরেও ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারন বেরিয়ে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।