Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩৭ জন শিক্ষার্থী প্রতি মাসে আত্মহত্যা করছে আঁচল ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ৪:৪৪ পিএম

দেশে ২০২২ সালে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতি মাসে গড়ে ৩৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন। আজ শুক্রবার ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা; সমাধান কোন পথে’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের (সমমানের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ) ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ের আছে ১০৬ জন। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে শুধু মাদরাসাগামী শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৪ জন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শিক্ষার্থীদের এ আত্মহত্যার তথ্যের মধ্য দিয়ে সচেতন সমাজের কাছে বার্তা দেয়া হচ্ছে যে শিক্ষার্থীরা ‘সাফার’ করছে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার, যেখানে বা যার কাছে শিক্ষার্থীরা তাদের কষ্টের কথাগুলো বলতে পারে। তার মতে, আত্মহত্যার আগে শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড মানসিক কষ্টে থাকে। ওই সময় কোনো শিক্ষকের কাছে কষ্টের কথা বলার সুযোগ পেলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে। এ ছাড়া মা-বাবা হিসেবে সন্তানকে সময় দেয়া এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রতিও জোর দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আত্মহত্যার তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি এর কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ জানান, দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে আত্মহত্যা-সংক্রান্ত সমীক্ষাটি করেছেন। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও গত বছর ৮৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার তথ্য পাওয়া গেছে।

আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, গত বছর আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটি অংশ (২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ) এই পথ বেছে নিয়েছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মান-অভিমানের কারণে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন অভিমানের করে। এ ছাড়া প্রেমঘটিত কারণে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আবার আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ায় ৪ জন, শিক্ষকের মাধ্যমে অপমানিত হয়ে ৬, গেম খেলতে বাধা দেয়ায় ৭, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭ জন আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া মুঠোফোন কিনে না দেয়ায় ১০ জন, মোটরসাইকেল কিনে না দেয়ায় ৬ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চকলেট, জুসসহ শিশুরা যখন যা চায়, তখনই তা কিনে দিলে শিশুরা ধৈর্য ধারণ করতে শেখে না। পরবর্তী সময় তারা কিছু চেয়ে না পেলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই ইতিবাচকভাবে সন্তান লালন-পালনের প্রতি জোর দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আত্মহত্যা মোকাবিলা করতে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বাড়ানো; সন্তানদের মানসিক বিকাশ এবং তাদের কথা সহানুভ‚তির সঙ্গে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ণে কৌশলী ও সহানুভ‚তিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; স্কুল, কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন করা; প্রেম-প্রণয় ঘটিত সম্পর্কে বা অজ্ঞাতসারে ধারণ করা গোপন ছবি, ভিডিও ইত্যাদি প্রচার তথা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ ও সাইবার অপরাধের বিষয়ে শাস্তি উল্লেখ করে বিশেষ প্রচারণাভিযানসহ ১১ দফা সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আঁচল ফাউন্ডেশনের সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা তথ্য লিখিত বক্তব্য আকারে উপস্থাপন করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংবাদ সম্মেলন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ