Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইমরান খানের জনপ্রিয়তায় শঙ্কিত সাবেক মিত্ররা

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

রোববার রাতে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে তার বাসভবনের বাইরে শত শত সমর্থক জড়ো হয় এবং আন্দোলন করার অঙ্গীকার করে। যদিও সোমবার ইমরান খান তার মামলায় গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় আগাম জামিন নিয়েছেন, অনেকেই ধারণা করছেন যে, তাকে শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হলে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে দেশটিতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা আরও খারাপের দিকে গড়াবে।

পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা থেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া ইমরানকে খানের সমর্থকরা সতর্ক করে বলেছে যে, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে ‘লাল দাগ’ লঙ্ঘন। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাইয়েদ জুলফিকার আব্বাস বুখারি বলেন, ‘যদি এই লাল দাগ অতিক্রম করা হয়, তাহলে আমরা দেশ অবরুদ্ধ করে দিতে বাধ্য হব। তাকে গ্রেপ্তার করলে দেশব্যাপী বিদ্রোহ ঘটবে।’

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানের সেনা-সমর্থিত সরকার এবং ইমরান খানের মধ্যকার বিরোধ দেশটির রাজনীতির বিপজ্জনক অবস্থাকে উন্মোচিত করেছে, যেখানে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক সংস্থা এবং রাজনৈতিক অভিজাতরা তাদের নেকনজরের বাইরে চলে যাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী এবং বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। তবে, ইমরান সামরিক নেতাগণের অনুগতদের তালিকা থেকে বাদ পড়ার পর এবং এমনকি তাকে এবছরের শুরুতে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পরেও, নিজেকে এবং তার দলকে পাকিস্তানের রাজনীতির কেন্দ্রে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

ইমরানের এই জনপ্রিয়তা পাকিস্তানে শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার এবং সামরিক সংস্থাকে শঙ্কিত করে তুলেছে। একারণে তারা ইমরানের সমর্থকদের আটক করতে শুরু করেছে এবং ইমরানকে জব্দ করতে এখন বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে। তাকে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। রোববার ইমরান খান রাজধানী ইসলামাবাদে হাজার হাজার সমর্থকদের সমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার পর তাকে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে অভিযুক্ত করা হয়, যেখানে তিনি তার শীর্ষ সহযোগী শাহবাজ গিলের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারে জড়িত সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন বিচারকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। অভিযোগগুলি সরকার এবং ইমরানের মধ্যকার শোডাউনকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

অনেকে ইমরান সমর্থক সাংবাদিক ও সহযোগীদের হয়রানি, গ্রেপ্তার এবং ভয় দেখানোকে তার রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়ার উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষের একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা হিসাবে দেখেন। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য জনসমর্থন ইমরানের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের আশা জাগিয়েছে এবং তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে রাজনৈতিক সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। ইসলামাবাদ-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং দেশটির শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ডন-এর কলামিস্ট জাহিদ হুসেন বলেছেন, ‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করার যে কোনও পদক্ষেপ ইতিমধ্যে একটি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উস্কে দিতে পারে।’

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানের এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত হাজার হাজার সমর্থককে রাজপথে টেনে নিতে পেরেছেন, যেখানে তিনি সরাসরি বর্তমান সরকার ও সামরিক বাহিনীকে কটাক্ষ করেছেন। ইমরান এবং তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ তরুণ ও বয়স্ক প্রজন্ম এবং সামাজিক-মিডিয়া-সচেতন পাকিস্তানিদের মধ্যে একইভাবে দেশটির রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং সামরিক বাহিনীর সর্বশক্তির হস্তক্ষেপের বিষয়ে হতাশাকে তীব্র করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এটি ইমরানের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে এবং তার দাবিকে শক্তিশালী করেছে যে, সামরিক সংস্থা এপ্রিলে তার সরকারকে পতনের ষড়যন্ত্র করেছিল।

ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পাঞ্জাবের প্রাদেশিক নির্বাচনে ব্যাপকভাবে জয়লাভ করেছে, যেটি প্রায়শই পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন এবং বন্দর নগরী করাচির জন্য একটি আগাম ইঙ্গিত হিসাবে কাজ করেছে। এবং তিনি সেনাবাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের সমর্থন হারানোর পরেও র‌্যাঙ্কের মধ্যে কিছু মিত্র ধরে রেখেছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খানপন্থী বিক্ষোভে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের একটি দল অংশ নিয়েছে। সম্প্রতি ইমরানের চিফ অফ স্টাফ শাহবাজ গিল লাইভ টিভি অনুষ্ঠানে সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে তাদের নেতাদের আনুগত্য করতে অস্বীকার করার জন্য বিতর্ক করেছেন, যার ফলে অভিযোগ উঠেছিল যে, তিনি সামরিক বাহিনীতে বিদ্রোহ উসকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

ইমরানের সাধারণ সমর্থকরা বলছে যে, প্রথমে তারা তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বহিষ্কার করেছে, এবং এখন তাকে গ্রেপ্তার করতে চায়, টিভি চ্যানেলে তার বক্তৃতা নিষিদ্ধ করতে এবং তার দলের সদস্যদের হয়রানি করতে চায়। কিন্তু এই ধরনের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড দেশের জনগণকে, বিশেষ করে তরুণদের, ইমরানকে সমর্থন করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ফেলো মাদিহা আফজাল বলেন, ‘আগের মুহূর্ত থেকে এই মুহূর্তটিকে যা আলাদা করে, তা হ’ল রাজপথে ইমরানের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার পরিমাণ। এবং রাজপথের শক্তি পাকিস্তানে একটি পার্থক্য তৈরি করে এমনকি যখন এটি নির্বাচনী ভোটে রূপান্তরিত নাও হয়।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তানের

৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ