Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ব্ল্যাকমেইলিং-পর্ণোগ্রাফির মাধ্যমে দুই বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছে তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৫:১২ পিএম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে ব্ল্যাকমেইলিং ও পর্ণোগ্রাফির মাধ্যমে চাঁদাবাজির অভিযোগে চক্রের মূলহোতা ও ২ জন নারীসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১।

র‍্যাব বলছে, দুই নারী সদস্যের ছবি ও ভূয়া পরিচয় ব্যবহার করে মূলহোতা মামুন বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোন আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানাত। ভিকটিমরা তাদের দেয়া স্থানে আসলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অন্যান্য সদস্যরা কৌশলে উক্ত স্থানে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদেরকে জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করত। এই কৌশল অবলম্বন করে এই চক্রটি গত ২ বছরে প্রায় ৫০ এর বেশি ভিকটিমের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর ভাটারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং দক্ষিনখান এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফট্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- পর্ণোগ্রাফি ও চাঁদাবাজ চক্রের মূলহোতা মো. আল মাহমুদ ওরফে মামুন (২৬) এবং তার সহযোগী ২) মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া (২১), মো. আকরাম হোসেন @ ওরফে আকিব (২০), তানিয়া আক্তার (২৫), মো. রুবেল (৩২), মো. মহসীন (২৬) ও মো. ইমরানকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়।

এসময় অভিযুক্তদের কাছ থেকে অশ্লীল ছবি ও গোপন ভিডিও ধারণ কাজে ব্যবহৃত ১৪ টি মোবাইল ফোন ও ২ টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে একজন ভুক্তভোগী র‌্যাব-১ এর কাছে অভিযোগ করে, গত ২২ জুলাই তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া এর সাথে যোগাযোগ হয়। গত ১০ আগস্ট দুপুরে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া কৌশলে রাজধানীর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যায়। রুমের ভিতরে প্রবেশ করার পর পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রিয়া ও তার সহযোগীরা মো. আল মাহমুদ ওরফে মামুন, মো. আকরাম হোসেন ওরফে আকিব, তানিয়া আক্তার, মো. রুবেল, মো. মহসীন ও মো. ইমরান জোর করে ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে।

পরবর্তীতে ক্যামেরায় ধারণকৃত এসব অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে আটক করে মুক্তিপণ হিসাবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এরপর ভিকটিমের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ১ লাখ টাকা ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা জোর করে আদায় করে।

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফট্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে ভিকটিম ঐ সময়ের ঘটনাটি একটি স্পর্শকাতর ও বিছিন্ন ঘটনা ভেবে কোথাও কোন অভিযোগ না করে নীরব থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরে পুনরায় প্রধান অভিযুক্ত আল মাহমুদ ওরফে মামুন ভিকটিমের কাছে আরও ২ লাখ টাকা দাবী করে এবং হুমকি দেয়, দাবীকৃত অর্থ না দিলে ধারণ করা অশ্লীল ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হবে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিম নিরুপায় হয়ে এই বিষয়ে র‌্যাব-১ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহায়তা কামনা করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ চক্রের মূলহোতা আল মাহমুদ ওরফে মামুন এবং তার নারী সহযোগী তানিয়া আক্তার ও মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া। এই দুই নারী সদস্যের ছবি ও ভূয়া পরিচয় ব্যবহার করে মূলহোতা মামুন বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোন আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানাত।

তিনি আরও বলেন, ভিকটিমরা তাদের দেয়া স্থানে আসলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অন্যান্য সদস্যরা কৌশলে উক্ত স্থানে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদেরকে জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করত। এই কৌশল অবলম্বন করে এই চক্রটি গত ২ বছরে প্রায় ৫০ এর বেশি ভিকটিমের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।

গ্রেপ্তাররা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় উক্ত অর্থ ব্যায় করে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে আসছিল বলেএ জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা। আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোটি টাকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ