Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজপথেই ফয়সালা চায় বিএনপি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তেজনা বাড়ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। যদিও বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে এখন পর্যন্ত অনড় আছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাই নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে দলটি। তাদের এই দাবি স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে না মেনে নিয়েই আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। রাজপথেই এর ফয়সালা চায় দলটি।

এজন্য সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের ছক কষছে বিএনপি। এর গতি-প্রকৃতি কি হবে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুতির কাজ চলছে। আগামী সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। তবে রাজপথে অলআউট নামার আগেই আন্দোলনের ওয়ার্মআপ সেরে ফেলতে চায় দলটি। নেতাকর্মীদের চাঙাভাব ধরে রাখতে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের মাঠে রাখা হবে।

এ লক্ষ্যে সম্প্রতি বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে রাজপথের বিরোধী দলটি। গত ৩১ জুলাই দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদলের জেলা সভাপতি নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম নিহত হন। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ করে দলটির নেতাকর্মীরা। এরই মাঝে গত ৫ আগস্ট হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মূল্য ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এসব ঘটনার প্রতিবাদে গত ১১ আগস্ট নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিগত ৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের জমায়েত হয়। যা বিএনপি নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উজ্জীবিত করে তুলেছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, সারাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, সবধরণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়া, দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। জনসাধারণের সাথে সম্পৃক্ত এসব ইস্যু নিয়েই এখন মাঠে থেকে সরকারবিরোধী জনমত সৃষ্টি এবং রাজপথের আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে চায় দলটির নেতারা। এ লক্ষ্যে আগামী ২২ আগস্ট থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। ওইদিন থেকে সারাদেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবাদ সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ করবে দলটি। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের বিভাগীয় সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ, রাজশাহী বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু, খুলনা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরিশাল বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ঢাকা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ময়মনসিংহ বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, ফরিদপুর বিভাগে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান, সিলেট বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কুমিল্লা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি কমিটির সদস্য থাকবেন বিএনপির নির্বাহী নেতা, সাবেক এমপি, সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব, যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।

এছাড়া বিগত নির্বাচনে বিএনপির এমপি প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থেকে এসব কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ধারাবাহিক এসব কর্মসূচির মধ্যেই পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান আন্দোলনের ধরন হঠাৎই পালটে যেতে পারে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই। তবে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে। এই লড়াইয়ে অবশ্যই সকলকে শরিক হতে হবে, ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, রাজপথ দখল করতে হবে।

রাজপথ দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, উনারা সমাবেশে হুংকার দিয়েছেন। বলা যেতে পারে হুমকি দিয়েছেন বিভিন্নভাবে। এটাই তাদের চরিত্র। এভাবে তারা সব সময় বিরোধী দলকে দমন করতে চায় এবং যে ধরনের ভাষা তারা ব্যবহার করেছে সেই ভাষা সম্পূর্ণ সন্ত্রাসের ভাষা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশটা কারো পৈত্রিক সম্পত্তি না। আমরা সংবিধান অনুযায়ী আমাদের যতটুক করার চেষ্টা করবো। তারা তো দেড় যুগ ধরে তো বাধাই দিচ্ছে, রাস্তায় তো দাঁড়াতে দেয়নি কোনোদিন। এখন কি কারণে হঠাৎ করে রাস্তায় দাঁড়াতে দিয়েছে, তারপরে আসল চরিত্র কি দাঁড়াবে কয়েকদিন পরেই দেখা যাবে।
সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, সংলাপের কোনো পরিবেশ বাংলাদেশে নেই। এখানে রাজনৈতিক যে সংকট তার সমাধান সম্ভব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্ত হবে, মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে, এই সরকার পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, সংসদ বাতিল না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সংলাপের প্রশ্নেই উঠবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই স্বৈরাচারি, লুটেরা, ভোট ডাকাত, ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলে দিয়েছে যে, ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। এই ফয়সালা করতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বলে দেয় আমাদের কতটা প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচিতেই বাড়ছে নেতাকর্মীর উপস্থিতি। শুধু আমরা নই, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আমাদের এক দফা দাবি জানিয়ে দিয়েছি। দাবি একটাই শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বাতিল করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দিতে হবে, এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে নেমে গেছি, দাবি আদায় না করে যাবো না।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ন্যূনতম ইস্যুতে ইতোমধ্যে সরকার বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল ঐক্যমতে পৌঁছেছে। যার প্রতিফলন রাজপথে দেখা যাচ্ছে। সকলে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। সবার মতামত নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে এগুনো হবে। এবার সরকার পতনের লক্ষ্য নিয়ে রাজপথে থাকবে বিএনপি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ