পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সারাদেশে ১৬৮টি চা বাগানের শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন ও কর্মবিরতি পালন করছে। এতে প্রতিদিন চা বাগানগুলোর বিপুল পরিমান ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চা-পাতা উত্তোলনের পিক মওসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বাগানের ফ্যাক্টরিগুলোতে তোলা হয়। প্রায় ১০ দিন ধরে শ্রমিকদের অব্যাহত কর্মবিরতির ফলে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার চা পাতা বাগানেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সময়মত চায়ের সবুজ পাতা ও কুঁড়ি সংগ্রহ করতে না পারলে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে কারখানাগুলোতে জমে থাকা চা পাতা প্রক্রিয়াজাত না করার ফলে এসব পাতাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। একদিকে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি অন্যদিকে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার মাঝখানে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান হওয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মূল্যস্ফীতির সাথে সঙ্গতি রেখে সাধারণ মানুষের আয় ও মজুরিবৃদ্ধির দাবির ন্যায্যতা অস্বীকার করা যায় না। চা শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা থাকলেও এই দুর্মূল্যের বাজারে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে পরিবারের সদস্যদের জীবন নির্বাহ অত্যন্ত কঠিন।
চা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমলে বৃটিশ চা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে পানীয় হিসেবে বাংলাদেশে চায়ের প্রচলন এবং চাষাবাদ শুরু হয়েছিল। ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানের মধ্য দিয়ে এ দেশে চা চাষের যাত্রা শুরু হয়ে পরবর্তী শত বছরে দেশে দেড়শতাধিক চা বাগান গড়ে উঠেছে। এক সময় দেশে উৎপাদিত চায়ের বেশিরভাগই বিদেশে রফতানি হলেও আভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে রফতানির সুযোগ কমেছে। প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান হারে দেশে কোটি কোটি কেজি চা উৎপাদন হলেও চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকেও লাখ লাখ কেজি চা আমদানি করতে হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, চায়ের উন্নত ক্লোনিং জাত নির্বাচন, চাষাবাদ, পরিচর্যা ও প্রক্রিয়াজাতকরণে আধুনিক ব্যবস্থা সংযুক্তির মধ্য দিয়ে চায়ের মান এবং উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে। দেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে ২০১৯ সালে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ ১৬৬ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করার গৌরব অর্জন করে। সে বছর চা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। এই রেকর্ড উৎপাদনের পর থেকেই কোনো কোনো মহলের বাংলাদেশের চা উৎপাদন ব্যাহত করার দূরভিসন্ধি থাকতে পারে। চা শ্রমিকদের সমস্যাকে জিইয়ে রেখে উৎপাদন ব্যাহত করা হলে নেপথ্যের সে সব কুশীলবই খুশি হবে।
বাংলাদেশের ট্রাডিশনাল অর্থকরি ফসলের মধ্যে পাটের পর চায়ের অবস্থান। পাটের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চায়ের ক্রমবর্ধমান আভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং এর আন্তজার্তিক সম্ভাবনা আমাদেরকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। চা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চা বাগানের জায়গাগুলোর সঠিক ব্যবহার এবং আধুনিক ব্যবস্থাপনায় চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হলে উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি চায়ের সুনাম ও কদর এখনো অমলিন। দেশের চা বাগানগুলোকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো গেলে এখনো কোটি কোটি কেজি চা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকদের সুসম্পর্ক নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। চা শ্রমিকরাও এ দেশের মানুষ। তাদের জীবনমান উন্নয়নে মালিকদের পাশাপাশি সরকারেরও দায় রয়েছে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি খাতে ভতুর্কি বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চা শ্রমিকদের সাথে মালিক ও শ্রম অধিদফতরের দুই দফা আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওদিকে বাগানগুলোতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চা পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কর্মবিরতির নামে শ্রমিকরা নিজেদের শ্রমে গড়ে তোলা চা বাগানের উৎপাদন নষ্ট করবেন এটা যেমন প্রত্যাশিত নয়, একইভাবে বাগান মালিকদেরও বর্তমান বাজারমূল্য ও শ্রমিকদের দাবির প্রতি একটি যৌক্তিক সমাধানে আসতে হবে। ১২০ টাকা মজুরিতে দৈনন্দিন চাহিদা পুরণ যেমন অসম্ভব, আবার বিদ্যুত সংকট, ডিজেলের মূল্যসহ পরিবহন খরচ মিটিয়ে শ্রমিকদের দাবি পুরোপুরি মেনে নেয়া কতদূর সম্ভব, সেটাও প্রশ্ন। তবে এই শিল্পের মালিকরা তুলনামূলকভাবে প্রভাবশালী। তাদের পক্ষে শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি পুরণ করা সম্ভব বলেই পর্যবেক্ষকরা মরে করেন। এ ক্ষেত্রে একটি সমাধানে আসতে শ্রমিক ও মালিকদের বাধ্য করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বাগানে কোটি কোটি টাকার পাতা নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে অবিলম্বে কর্মবিরতি প্রত্যাহার হওয়া প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।