গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর শনিরআখড়া ও ধলপুর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চোর চক্রের মূল হোতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। মঙ্গলবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের নাম- নূর মোহাম্মদ (২৬), রবিন (২৩), সজল (১৮), মনির (২২) ও আকাশ (২২)।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার চোর চক্রটি ঢাকা মহানগর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মোটর সাইকেল চুরি করে আসছিলো। চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদ তার বন্ধু রবিনের সাথে দ্রুততম সময়ে বড়লোক হওয়ার জন্য মোটর সাইকেল চুরি করতো। এসব চোরাই মোটর সাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসাবে যুক্ত করে। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের চোরাই মোটরসাইকেল ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস গাড়ি বলে বিক্রি করতো। প্রতিটি চোরাই মোটর সাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৩ টি চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
পুলিশ জানায়৷ ডিএমপির ওয়ারী এবং গেন্ডারিয়া থানার ২টি চুরি মামলা তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, গোয়েন্দা সংবাদ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চোর চক্রকে ধরার জন্য গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার চোর চক্রটি ঢাকা মহানগর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মোটর সাইকেল চুরি করে আসছিলো।
চোর চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, সে মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করতো। আগে তার বাসা ছিল কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদ এলাকায়। একদিন হাসনাবাদ গলির ভিতর চা দোকানে গ্রেপ্তার রবিনের সাথে পরিচয় হয়। দুইজন মিলে পরিকল্পনা করে, কিভাবে দ্রুততম সময়ে বড়লোক (ধনী) হওয়া যায়।
নুর মোহাম্মদ রবিনকে বলে, তার কাছে করাত ধার দেয়ার রেদ আছে যা দিয়ে মোটর সাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সার মোটর সাইকেলের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে শারিঘাট, হাসনাবাদ, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটর সাইকেল চুরি করার উদ্দেশ্যে প্রথমে পরীক্ষামূলক চেষ্টা করে এবং মোটর সাইকেলটি স্টার্ট হয়ে গেলে তারা মোটর সাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে মোটর সাইকেল চুরি করে আসছে।
ডিবি প্রধান বলেন, চোরাই মোটর সাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসাবে যুক্ত করে। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটর সাইকেল চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহার রুট হিসেবে ব্যবহার করে। অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরাণীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকা যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করে। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের উক্ত চোরাই মোটরসাইকেল ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস গাড়ি বলে বিক্রি করে আসছিল।
গ্রেপ্তার সজলকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানায়, সে নিজেও বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের একজন ধনী বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু মেয়ের মা-বাবা তাদের মেয়ের সাথে সজলের সম্পর্ক ছিন্ন করলে সজল হতাশ হয়ে বড়লোক হওয়ার নেশায় আসামী নুর মোহাম্মদ ও রবিনদের চক্রে যোগ দেয়।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেপ্তার সজল, মনির ও আকাশদের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশে পাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। প্রতিটি চোরাই মোটর সাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। বিক্রির টাকা নূর মোহাম্মদ ৪০%, রবিন ৩০% ও অবশিষ্ট টাকা অন্যান্যরা গ্রহণ করতো।
গ্রেপ্তাররা আরও জানায়, তারা এ পর্যন্ত ৫০০ টিরও বেশি মোটর সাইকেল চুরি করেছে। তারা ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে।
বিভিন্ন থানায় গ্রেপ্তার নুর মোহাম্মদ এর বিরুদ্ধে ৪ টি মামলা, রবিন এর বিরুদ্ধে ৩ টি মামলা এবং অন্যান্য তিন জনের বিরুদ্ধে ১ টি করে মামলা আছে বলেও জানান ডিবি প্রধান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।