পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের রেলের দৈনদশা, দুর্ঘটনা, গতিহ্রাস, লোকসান ইত্যাদি বেড়েই চলেছে! অথচ গত এক দশকে রেলের উন্নয়নে ১.৬০ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এত ব্যয়েও বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি, বরং ক্রমাবনতিই হয়েছে। গত ২৯ জুলাই মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় এক মাইক্রো বাসের ১১ যাত্রী নিহত ও ৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে পরে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এটি ঘটেছে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে। এভাবে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে রেলওয়েতে। খবরে প্রকাশ, রেলপথে গত ৭ মাসে ১০৫২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে ১৭৮ জন নিহত ও ১১৭০ জন আহত হয়। ২০২১ সালে ২৭০টি দুর্ঘটনায় ২৫৪ জন নিহত ও ৪২ জন আহত হয়। আগের বছরগুলোতেও প্রায় একই অবস্থা। এ দুর্ঘটনার ৮৯ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রেন লাইনচ্যুতি। এর প্রধান কারণ, ত্রুটিপূর্ণ রেলপথ, ইঞ্জিন ও বগির যান্ত্রিক সমস্যা, সিগন্যালের সমস্যা, বিভিন্ন ভুল ও নিয়ম অমান্য ইত্যাদি। দুর্ঘটনার দ্বিতীয় কারণ, অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষ। এতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি-৮৫ শতাংশ। রেলের ২৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। তন্মধ্যে অবৈধ ১৩৬১টি, ৩৩টির ব্যাপারে কেউ জানে না এবং ১৪৬২টি বৈধ। বৈধের ৬৩২টিতে কোনো গেট কিপার ও সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই। আর অবৈধতে এসব থাকার প্রশ্নই আসে না। রেললাইনের উপর উড়াল পথ নির্মাণে এক যুগ ধরে আলোচনা চলছে। সওজ কিছু মহাসড়কে এটা করেছে। বাকিগুলোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে অরক্ষিতই রয়েছে! অন্যদিকে, ক্রসিংয়ে বার দেয়ার পরও তা উপেক্ষা করে অনেক মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। এতেও দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকেই রেল লাইন পার হওয়ার সময় মোবাইলে কথা বলার কারণে ট্রেনের শব্দ শুনতে না পেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। অনেকে ট্রেনের নিচে ঝঁাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। প্রতিটি দুর্ঘটনা ঘটার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কিছু কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। বাকিগুলো অপ্রকাশিতই থাকে। এ পর্যন্ত তদন্ত কমিটিগুলো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ৫টি সুপারিশ করেছে। এগুলো হচ্ছে: ট্রেনের ইঞ্জিনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত কর্মচারীদের শূন্য পদ দ্রুত পূরণ, স্টেশন ও ট্রেনের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ও স্বয়ংক্রিয় ট্রেন থামানো পদ্ধতি চালু করা। বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেছেন, দেশের সব লেভেল ক্রসিং অটোমেশন করতে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা লাগে। অটো সিগনালিংয়ের আওতায় আনা হলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো পরামর্শই গ্রহণ করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। রেলমন্ত্রী গত ১ আগস্ট বলেছেন, ‘ট্রেন কখনো কাউকে ধাক্কা দেয় না। অন্য যানবাহন এসে ট্রেনকে ধাক্কা দেয়। ট্রেনকে কেউ যদি ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়, এ দায় কি রেলের? হ্যাঁ, এটা সঠিক কথা। কিন্তু ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যখন দুর্ঘটনার শিকার হয়, তখন দায় কার? দেশের শহরের যেখানে রেললাইন আছে, সেখানে রেললাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অনেক ঝুপড়ি ঘর, দোকান ও বাজার। এতেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
উন্নত দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে প্রতি কিমি রেলপথ নির্মাণে ব্যয় অনেক বেশি। উপরন্তু কর্তৃপক্ষ উচ্চ ব্যয়ে রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নিতে যতটা উৎসাহী, ততটাই নিরুৎসাহী রেলপথ ও রেলসেতু সংস্কারে। তাই সারাদেশে ২,৯৫৬ কিমি রেললাইনের মধ্যে মানসম্পন্ন মাত্র ৭৩৯ কিমি.। রেলসেতু ঝুঁকিপূর্ণ ৪০২টি। লাইনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে লাইনে পাথর স্বল্পতা, রেল ক্লিপ ও নাট-বল্টু চুরি হওয়ায় এবং নড়বড়ে ট্র্যাক মেরামতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও যন্ত্রাংশের অভাবে। বর্তমানে রেলে ২৮৮টি ইঞ্জিন রয়েছে (মিটারগেজ ১৯৮টি ও ব্রডগেজ ৯০টি), যার ৭৮ শতাংশ ইঞ্জিনই মেয়াদোত্তীর্ণ। আগে ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিমি, বর্তমানে ৫৩ কিমি। উপরন্তু দুইশ’র বেশি স্থানে ট্রেনের গতি ১০ কিমি, যা ভ্যানগাড়ির গতির চেয়েও কম! সম্প্রতি অত্যাধুনিক ইঞ্জিন ও কোচ আনা হয়েছে ১৩০ কিমি গতিতে চলার জন্য, যদিও তার কোনটিই ৬০ কিলোমিটারের উপরে চলছে না। রেলওয়ের মোট স্টেশন সংখ্যা ৪৬৬টি। তন্মধ্যে ১৩১টি বন্ধ রয়েছে জনবলের অভাবে। সর্বশেষ রেলের জন্য ৪৭,৬৩৭ জনবল অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৪,৩৫৮। ৩৩,২৭৯টি পদ শূন্য আছে, যার ৭০ শতাংশ কারিগরি। সম্প্রতি রেলওয়েতে নতুন অত্যাধুনিক ভারী কিছু ইঞ্জিন যুক্ত করা হয়েছে। তার ভার বহনে সক্ষম নয় পূর্বাঞ্চল রেলের ৭টি সেতু। তাই এসব ইঞ্জিন ব্যবহারের জন্য সেতুগুলো সংস্কারের পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। অপরদিকে, বেশিরভাগ ট্রেনের শিডিউল রক্ষা হয় না। ট্রেনের অধিকাংশ জানালা, দরজা, সিট ইত্যাদি ভাঙ্গা এবং বাতি, পরিচ্ছন্নতা ও টয়লেটের পানি অপর্যাপ্ত! বেশিরভাগ স্টেশনের অবস্থাও তথৈবচ! টিকেট প্রাপ্তিতে ভোগান্তির অন্ত নেই! আর উৎসবের সময় টিকেট এবং ট্রেনের ভেতরে ও ছাদে-ইঞ্জিনে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে!
জাতীয় বাজেটে পরিবহন খাতে বরাদ্দের প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থ পেয়েছে রেল খাত। রেলওয়েতে গত এক দশকে সমাপ্ত হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। সর্বোপরি বর্তমানে ১,৪১,৪৪০ কোটি টাকার ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব টাকায় নতুন রেলপথ, সেতু নির্মাণ, পুরনো রেলপথ ও সেতু সংস্কার, ইঞ্জিন-কোচ সংগ্রহ ও পুনর্বাসন, সিগন্যাল ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন চলছে। তবুও রেলের জীর্ণ অবস্থা দূর হচ্ছে না। ফলে দেশের মোট যাত্রী চলাচলে রেলের ভাগ ৩০ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ ও পণ্য পরিবহনে ২৮ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে! আর যাত্রীদের মধ্যে টিকিটবিহীনদের সংখ্যাই বেশি। তাই গত এক যুগে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। কিছু দিন আগে ভাড়া দেড়গুণ বাড়ানোর পরও লোকসান চলছে! তাই পুনরায় ভাড়া বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। রেলের ব্যাপক লোকসানের জন্য টিকিটবিহীন যাত্রী ছাড়াও ব্যাপক দুর্নীতি, অপচয় ও অব্যবস্থাপনা দায়ী। আর জবাবদিহি ও দক্ষ নেতৃত্বের অভাবেই এসব হচ্ছে। ফলে দেশের রেলের মান বিশ্ব পর্যায়ে তো দূরে থাক, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও নিম্ন! ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘কোয়ালিটি অব রেল রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ সূচক-২০১৯ মতে, ১০১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬১তম, স্কোর ৩.১। এ সূচকে ভারত ২৮তম, পাকিস্তান ৪৭তম ও শ্রীলংকা ৪৮তম। গত দুই বছরেও এই অস্থানের তারতম্য হয়নি! দ্বিতীয়ত: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২,৮৫৮.৭৩ কিমি রেলপথ পেয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর বর্তমানে এর দৈর্ঘ্য ২৯৫৫.৫৩ কিমি। অর্থাৎ দীর্ঘ ৫১ বছরে দেশের রেলপথের দৈর্ঘ্য বেড়েছে মাত্র ৯৬.৮০ কিমি। ২০১০ সালে মিয়ানমারের সাথে রেল সংযোগের জন্য দোহাজারী-রামু-ঘুমদুম রুটে দ্বৈত-গেজ সিঙ্গেল-ট্র্যাক রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। দেশে কোচ ও ওয়াগন রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর এবং লোকোমোটিভের জেনারেল ওভারহলিংয়ের জন্য পার্বতীপুরে যে কারখানা আছে তা স্বাধীনতার আগেই স্থাপিত। বর্তমানে যার কার্যকারীতে শতভাগ নেই।
দেশের রেল খাতের দৈনদশার জন্য সরকারের অনেকেই বিএনপি সরকারের সময়ে রেলওয়ের বিপুল জনবলকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় করাকে দায়ী করেন। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর ১৫ বছর হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে রেলের শূন্য পদগুলো পূরণ হলো না কেন? কেন রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়ন ব্যয় করার পরও বিন্দুমাত্র উন্নতি না হয়ে অবনতি হলো?
যা’হোক, বুয়েটের অধ্যাপক সামছুল হকের অভিমত: বিগত কয়েক বছরে রেলওয়েতে বড় বড় বিনিয়োগ হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের একটা বড় ঘাটতি আছে। কোন কাজটি আগে করতে হবে, কোনটি পরে হবে তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে না। দুদক টিকিট বিক্রিতে কালোবাজারী, যাত্রীবাহী ট্রেন ইজারা দেয়া ও ট্রেনে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনসহ রেলখাতের ১০টি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে বলেছে। হাইকোর্ট ট্রেনের ছাদের উপরে যাত্রী বহন ও টিকিটের কালোবাজারী বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। রেলওয়ের বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণের জন্য সেভ দ্য রোড ৭টি ও সংসদীয় কমিটি রেলগেট অটোমেশন করার পরামর্শ দিয়েছে।
রেলমন্ত্রী গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর বলেন, দেশের সব রেললাইন পর্যায়ক্রমে ব্রডগেজ-ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। অপরদিকে, ২০১৬-৪৫ সাল মেয়াদে ৫,৫৩,৬৬২ কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে, যার আওতায় রয়েছে ৮৫৬ কিমি নতুন ডুয়েল গেজ রেল লাইন ও ১১৮১ কিমি ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ এবং ৭২৫ কিমি রেলপথ পুনর্বাসন, রেল সেতু ও লেভেল ক্রসিং গেট নির্মাণ ও বগি সংস্কার। ইতোমধ্যে সিমুলেটর, রিলিফ ট্রেন, বেশ কিছু লোকোমোটিভ ও বগি সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সংযোগের পুরনো রেল রুটগুলো চালু করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, গত দশ বছরে দেড়লাখ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় এবং পৃথক মন্ত্রণালয় করার পরও কোনো উন্নতি হয়নি কেন?
দেশে মানুষ বাড়ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবহন খাত বাড়ছে। নদীপথ দিন দিনে কমে যাচ্ছে পানি না থাকায়। সড়ক পথের ব্যয় ও দুর্ঘটনা সর্বাধিক। যানজটও ব্যাপক। তাই রেলপথই তুলণামূলকভাবে কল্যাণকর তথা ব্যয় সাশ্রয়ী ও দুর্ঘটনা কম এবং যানজট মুক্ত, পরিবেশবান্ধবও। তাই দেশের রেল খাতকে আধুনিক ও চাহিদা মাফিক সম্প্রসারণ, সব ক্রসিংকে নিরাপদ, সব শূন্য পদ দ্রুত পূরণ, দুর্নীতি, অপচয় ও অব্যবস্থাপনা দূর, বিনা টিকেটে ও ট্রেনের ছাদে যাত্রী চলাচল বন্ধ, রেল লাইনের ধার থেকে আবাস ও দোকান উচ্ছেদ এবং বেদখলে থাকা সব জমি উদ্ধার, সব দুর্ঘটনায় নিহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসা করতে হবে। মানুষেরও উচিত, রেললাইন পার হওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা। যাত্রী ট্রেনের সাথে ১-২টি করে পণ্য ওয়াগন যুক্ত করতে পারলে পণ্য পরিবহন সহজতর হবে এবং রেলের আয় বাড়বে।
চীন ও জাপানে চালু হয়েছে ঘণ্টায় ৫০০-৬০০ কিমি গতিবেগের ম্যাগলেভ ট্রেন। ফ্রান্সের এজিভি চলে ঘণ্টায় ৫৭৪ কিমি গতিতে। জাপান ও জার্মানিতে চালকবিহীন ট্রেন চালু করা হয়েছে। চীন মূল ভূখণ্ড থেকে তিব্বত পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করেছে বহু পাহাড়, পর্বত ও নদীর উপর দিয়ে। এটা ভূপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উঁচুতে। তাই এটা স্কাই ট্রেন বলে খ্যাত হয়েছে। ভারতের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন বহুদূর থেকে ট্রেনে যাতায়াত করছে নির্ধারিত সময়েই। এসব দেশের রেলের সব কিছুই আধুনিক। দুর্ঘটনাও খুব কম। লাভজনকও। রেলপথও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে অনবরত। আমাদের দেশেও একই ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া, চলতি কার্যক্রম তথা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ স্থাপন করা হচ্ছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হওয়ার জন্য। পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-যশোর রেলপথ স্থাপন করা হচ্ছে। যমুনা রেলসেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে। ঢাকায় মেট্রোরেলের নির্মাণ চলছে, যার একটি পথ আগামী ডিসেম্বরে চালু হবে। ঢাকায় পাতাল ট্রেন নির্মাণ শুরু হবে আগামী মার্চে। তা নির্ধারিত সময়ে, অর্থে ও মানে সম্পন্ন করতে হবে। উপরন্তু বিদেশি বিনিয়োগের যে প্রস্তাব পাওয়া গেছে (স্পেন সরকারের ঢাকা-কুয়াকাটা রেল লাইন নির্মাণের প্রস্তাব, স্পেনের সাতটি কোম্পানির ডিজেল ও বৈদ্যুতিক রেলপথ নির্মাণ, দ্রুতগামী প্যাসেঞ্জার কোচ তৈরিসহ রেলের বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়নের প্রস্তাব, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণে সিআরসিসি ও সিসিইসিসির প্রস্তাব, ঢাকা-চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক রেলপথ স্থাপনে যুক্তরাজ্যের আইএম পাওয়ারের প্রস্তাব), তন্মধ্যে যে প্রস্তাবগুলো দেশের জন্য কল্যাণকর, সেগুলো দ্রুত অনুমোদন করতে হবে। যমুনা সেতু-বগুড়া নতুন রেললাইন এবং টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ নতুন ডাবল রেললাইন দ্রুত নির্মাণ, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-খুলনা, দিনাজপুর-খুলনা বুলেট ট্রেন চালু, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হওয়া এবং মহাপরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে রেলের ব্যাপক কল্যাণ হবে। এসব করার জন্য দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং প্রতিটি কর্মের জবাবদিহি দরকার।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।