মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মগ সেনাদের দমন পীড়ন কোনো মতেই যেন থামছে না। সীমান্ত এলাকার ঢেকিবুনিয়া, কুমিরখালী, শিলখালী, বলিবাজার ও নাগপুরাসহ ৫টি রোহিঙ্গা গ্রামে মগ সেনারা তা-ব চালিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে প্রাণ বাঁচাতে রাতের আঁধারে পালিয়ে আসার জন্য হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা সীমান্তের কুমিরখালী পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। গত সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোররাতে প্রায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নেয়।
খবরে বলা হয়, মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের উগ্র গোষ্ঠী কর্তৃক অব্যাহত হামলার অবর্ণনীয় নির্যাতন থেকে বাঁচতে অসহায় মুসলিম নারী-শিশুসহ অসংখ্য বনী আদমের আর্তনাদ থেমে নেই। এমন কোন দিন নেই যেখানে আক্রান্ত না হয়ে থাকছে না আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানরা। গুলি করে হত্যা, নারী ধর্ষণসহ বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের জন্য সৃষ্ট সহিংসতার পর থেকে নিত্য-নৈমিত্যিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানমালের নিরাপত্তা বলতে কোন নিশ্চয়তা নেই সেখানকার মুসলমানদের। সনজিদা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম নারী। দেশটির সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে গেছে তার স্বামী শামসুল আলমকে। প্রাণভয়ে তিনি বাকি ৩ সন্তানকে নিয়ে গোপনে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। এখানে এসে আশ্রয় মিলেছে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে। প্রাণ না হারানোর শংকা কাটলেও মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে সনজিদাকে। না পাচ্ছেন খাবার, না হচ্ছে চিকিৎসা। স্বামীর জন্য ব্যাকুল সনজিদা কথা বলতে গিয়ে আবেগজনিত কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন বারবার। শুধু সনজিদা নন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অমানবিক নির্যাতনে নিজ ভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবেতর দিন যাপন করতে হচ্ছে।
কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দা মোহাম্মদ তারেক (৪৫) জানান, গত সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার ভোর সকালে প্রায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে। সে জানায়, ২টি শরণার্থী ক্যাম্পে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। সে আরো জানায়, বেশিরভাগ রোহিঙ্গা সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার সকালে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে জানা যায়, মগ সেনারা মংন্ডু নেমে ৪নং কুমিরখালী পাড়ার পূর্ব পার্শ্বে হারাইঙ্গাঘোনা, তুলাতলী, লম্বাবিল গ্রামে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়ে ২ জন রোহিঙ্গা যুবককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে ওই গ্রামের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মগ সেনা, পুলিশ ও রাখাইনরা ফের গ্রামে হামলা করতে পারে এ আশঙ্কায় ঘরবাড়ি ছেড়ে হাজারেরও অধিক নারী-পুরুষ-শিশু কুমিরখালীর সীমান্তে জড়ো হয়েছে। এপারে বিজিবি’র কঠোর নিরাপত্তার কারণে চলে আসতে না পারলেও যে কোন সময় রাতের আঁধারে চলে আসতে পারে। নাগপুরা থেকে পালিয়ে আসা আব্দুল গফুর (৪০) জানায়, গত ২ দিন ধরে মগসেনারা সীমান্তের ঢেকিবনিয়া, কুমিরখালী, শিলখালী, বলিবাজার ও নাগপুরা সহ ৫টি গ্রামে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। পুড়িয়ে দিয়েছে ধানের খামার।
এসময় মগসেনারা বাড়িতে ঢুকে যুবক ছেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর যুবতী মেয়েদের ধর্ষণ করছে। সে জানায়, সীমান্ত এলাকার পাড়াগুলোতে ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়া আগুনের লেলিহান শিখা এপারের অনেকেই দেখেছে। এসময় বয়োবৃদ্ধ মরিয়ম খাতুন (৫৫) জানায়, তার ছেলে ইমাম শরীফ (২৮) ও তার পুত্র বধু মনোয়ারা (২২) ৩ জনের সংসার তছনছ করে দিয়েছে মগসেনারা। সে জানায়, গত সোমবার রাতে ভাত খেয়ে তারা ঘুমাচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ মগসেনারা ঘরে আগুন দিলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। এসময় মগসেনারা তার ছেলে ইমাম শরীফকে ধরে নিয়ে গেছে। ছেলের বউকে নিয়ে কোন রকম পাড়া প্রতিবেশীর সাথে পালিয়ে এসেছি। এভাবে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নাগরিক তাদের হৃদয় বিদারক ঘটনা জানিয়েছেন। মিয়ানমারের গৌজবিলের রহিমুল্লাহ (২২) জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী গ্রামে এসে আগুন দেয় এবং হেলিকাপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করে। এতে কতজন হতাহত হয়েছে তা তার জানা নেই। তবে তার শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে গুলি লেগেছে বলে জানায়। বিবিসি, রয়টার্স, ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।