পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাসূলে আকরাম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট প্রত্যাশা রাখি, তিনি পূর্বের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন। নবী (সা.) বলেন, রমজানের পর সবচেয়ে বেশি ফযিলতের রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। (সহীহ মুসলিম) আশুরা সমগ্র উম্মতের জন্য বড় হৃদয়বিদারক ঘটনা। গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, খোদাদ্রোহীতা, পথভ্রষ্টতা ও শরীয়তবহির্ভূত গোনাহের কাজ পরিহার করা হোক পবিত্র আশুরার প্রত্যয়। নবী রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ অনুসরণে তওবা, ইস্তিগফার, জিকির আজকার, কোরআন তিলাওয়াত, রোজাসহ অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে অতিবাহিত হওয়া চাই মুসলিম মিল্লাতের অতিব গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ এই দিন। এ দিনে সাইয়্যেদিনা হযরত আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টি, ফেরাউনের কবল থেকে হযরত মুসা (আ:) ও তার অনুসারীদের মুক্তি, হযরত আইয়ুব (আ:) এর সুস্থতা এবং এই দিনে কিয়ামত সংঘঠিত হওয়াসহ অসংখ্য ঘটনাবলীর তথ্য পাওয়া যায়। এ দিনের রোজার ফযিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল (সা.) বলেন, আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট প্রত্যাশা রাখি তিনি পূর্বের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২)। খতিব বলেন, তাই আসুন! পবিত্র এই আশুরার দিনে হুসাইন রাজিয়াল্লাহু আনহুর কাল্পনিক তাযিয়া বানিয়ে, শরীর ক্ষতবিক্ষত করে, হায় হাসান, হায় হুসেন সেøাগান তুলে মিছিল করার মত সর্ব প্রকার অপসংস্কৃতি ও গোনাহের কাজ পরিহার করে এ দিনে রোজা রেখে তওবা ইস্তিগফারসহ অন্যান্য ইবাদাতের মধ্যে মশগুল থাকি। সাথে সাথে ইমাম হুসাইন রাজিয়াল্লাহু আনহুর ইসলামের জন্য আত্মত্যাগের চিন্তা করে নিজেদের ঈমান আমলকে উজ্জ্বীবিত করি। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করেন Ñআমিন।
ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টর মসজিদ আল-মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম বলেন, মুহাররম মাস ৪ টি হারাম (সম্মানিত) মাসের অন্যতম। নবী (সা.) বলেন, রমজানের পর সবচেয়ে বেশি ফযিলতের রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহররমের রোজা। (সহীহ মুসলিম) নবী (সা.) মদিনা শরীফে আগমন করে দেখলেন ইয়াহুদীরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। নবী (সা.) বললেন, এটা কি? তারা বলল, এটি একটি ভালো দিন। এই দিনে আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল হতে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) রোজা রেখেছেন। নবী (সা.) বলেন, মুসা (আ.) কে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি রোজা রেখেছেন ও রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আশুরার রোজা সম্পর্কে বহুসংখ্যক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসের আলোকে নির্জাস কথা হল, আশুরার রোজা তিনভাবে রাখা যায়। (১) ৯, ১০ ও ১১ তারিখ মোট তিন দিন রোজা পালন সর্বোত্তম। (২) ৯ ও ১০ তারিখ মোট দুই দিন রোজা পালন উত্তম। (৩) শুধু ১০ তারিখ রোজা পালন অনুত্তম।
অত্যান্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৬১ হিজরি সালে আশুরার দিন শুক্রবার ইরাকের কারবালায় কিছু মানুষের হতে নবী (সা.) প্রিয়তম দৌহিত্র হযরত হুসাইন (রা.) নির্মমভাবে শহীদ হন। আশুরা সমগ্র উম্মতের জন্য বড় হৃদয়বিদারক ঘটনা। আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে সকল প্রকার বানোয়াট রীতি নীতি ও অপসংস্কৃতি পরিহার করা খুবই জরুরি।
ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আশুরার ফযিলত হাসিল করতে হলে বেশি বেশি তওবাহ ইস্তিগফার করতে হবে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, আশুরার দিনে রোজা রাখলে আল্লাহপাক এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন। রাসূল (সা.) নিজেই আশুরার দিন আর আগের দিন রোজা রাখতেন। খতিব বলেন, আশুরার দিন তাযিয়া বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করে বিলাপ করা হারাম কাজ। উল্লেখিত দিনের ফযিলতের গুরুত্ব অনুধাবন করে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগিতে কাটাতে হবে। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের ছবি বুঝ দান করুন। আমিন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেন, মুহররম মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আশুরার দিনে আল্লাহতায়ালা তাঁর কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বানিয়ে তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তায় ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে মেরেছেন। (সহীহ বুখারী ১/৪৮১)। এ মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহীহ মুসলিম ২/৩৬৮)। এর মধ্যে আশুরার রোজার ফযিলত আরও বেশি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (সহীহ বুখারী ১/২১৮)। খতিব আরও বলেন, আশুরার দিন রোজা রাখার পাশাপাশি আমাদের বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার ও অন্যান্য নেক আমল উচিত। দ্বীনের খাতিরে হযরত হোসাইন (রা.) যে ত্যাগ-তিতিক্ষা পেশ করেছেন তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দ্বীনের জন্য যে কোনো ত্যাগ ও কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকা। এ দিনে ‘হায় হোসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা হারাম কাজ। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করেন, আমিন।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেছেন, পবিত্র কোরআনুল কারিম ও হাদিস শরিফে মুহররম মাসকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও তওবা ইস্তিগফারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। রমজানের পর মুহররম মাসের রোজা সবচেয়ে উত্তম বলে বর্ণনা করেছেন নবীজি (সা.)।
আশুরার দিনে তাযিয়া বা শোক মিছিল করার কথা কোরআন হাদিসের কোথাও নেই। অথচ আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট দু’একটি জায়গায় কয়েকশ’ লোকের মিছিলকে সারাদিন টেলিভিশন ও বেতারগুলোতে প্রচার করা হয় এবং পরের দিন পত্রিকাগুলোর মূল শিরোনাম দেয়া হয় অথচ এইদিনে লাখ লাখ মানুষ আশুরার ফযিলতের জন্য রোজা রেখেছেন তা প্রচার করা হয় না। তিনি আশুরার সঠিক ইতিহাস ও সুন্নাহর অনুসরণ এবং বিদআতকে পরিহার করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।