Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বর্তমান পৃথিবীর এক-পঞ্চমাংশ মানুষ মুসলমান নামে পরিচিত হলেও খাঁটি ঈমানদার ও মুমিন লোকের সংখ্যা অনেক কম বলেই মনে হয়। কারণ, অনেক মানুষ নাম-ধাম দিয়ে ইসলাম ও ঈমানের দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা অংশীবাদিতা ও সীমা লঙ্ঘনের বেড়াজাল হতে নিজেরদের মুক্ত রাখতে পারছে না। আল কুরআনে এই দিকনিদের্শনা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘অনেক মানুষ আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলেও তারা কিন্তু অংশীবাদিদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা ইউনূস : আয়াত ১০৬)।

এই শ্রেণির লোকেরা আল্লাহ পাকের অনন্য সওগাত ‘মুহাররাম’ মাসকে মানহুম বা অশুভ বলে মনে করে এবং অতীত ইতিহাসের কোনো বিষয়কে উপলক্ষ করে ইসলামের স্বতঃসিদ্ধ ও ন্যায়নিষ্ঠ জীবনধারার মাঝে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন ও আচার-অনুষ্ঠানের সূত্রপাত ঘটায়, যা পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জীবন ও কর্মের কোথাও পরিদৃষ্ট হয় না এবং এগুলোর অনুমোদন সম্পর্কে ইসলামী আইনশাস্ত্রের কোথাও কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া না। উপরোল্লিখিত আয়াতে কারীমায় তাদের কথাই তুলে ধরা হয়েছে।

কেননা, তারা জিদ ও হঠকারিতাবশত কোনো শুভাকাক্সক্ষীর উপদেশ শ্রবণ করে না। বরং তাদের অবস্থা হলো এই যে, নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে আল্লাহ পাকের যে সকল সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে তা প্রত্যক্ষ করেও তারা উদাসীনতার বেড়াজালে নিজেদের জড়িয়ে রাখে, এমনকি আকাশ ও পৃথিবীর বুকে আল্লাহর অপার শক্তি জ্ঞান ও কুদরতের অসংখ্য নির্দেশনের প্রতিও তারা চোখ তুলে তাকায় না এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না।

অতীতের আযাব প্রাপ্ত জাতিসমূহের ধ্বংসাবশেষ দেখেও তারা সচেতন হয় না। তাই আজ আমরা সবিনয়ে তাদের আহ্বান করব, আল্লাহর পছন্দনীয় জীবনব্যবস্থা ইসলামের ওপর নতুন রঙ চড়ানো হতে নিজেকে দূরে রাখুন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাতকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করুন। আল্লাহ পাক অবশ্যই হেদায়েত ও রহমত বর্ষণ করবেন।
আল কুরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে খেতাব করে ইরশাদ করেছেন : হে প্রিয় হাবীব! আপনি তাদের বলে দিন, ‘আমার তরিকা এই যে, মানুষকে পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে আমি এবং আমার অনুসারীরা আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতে থাকব।’ (সূরা ইউসূফ : আয়াত ১০৮)।

এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, এই দাওয়াত বা আহ্বান রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চিন্তাধারার ওপর ভিত্তিশীল নয়, বরং তা আল্লাহ পাকের দেয়া পরিপূর্ণ জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার ফলশ্রুতি। এই দাওয়াত ও অভিজ্ঞানে আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তাঁর অনুসারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : এতে সাহাবায়ে কেরামদের কথা বলা হয়েছে। যারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জ্ঞানের বাহক এবং আল্লাহ পাকের সিপাহি।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন : সাহাবায়ে কেরাম এই উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গ। তাদের অন্তর পবিত্র ও জ্ঞান ও মনীষা সুগভীর। তাদের মধ্যে সাধারণ লৌকিকতার নাম-গন্ধও অবশিষ্ট নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রিয় রাসূল (সা.)-এর সংসর্গ, সঙ্গলাভ ও খেদমতের জন্য মনোনীত করেছেন। তোমরা তাদের চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য, স্বভাব ও অভ্যাস এবং তরিকা অনুসরণ করো। কেননা, তারা সহজ, সরল ইসলাম ধর্মের পথিক।

এই আয়াতে কারিমায় বিবৃত ‘রাসূল (সা.)-এর অনুসারীগণ’ বাক্যের অর্থ ব্যাপকও হতে পারে। এতে ঐ সব ব্যক্তির কথা বোঝানো হয়েছে, যারা রোজ কিয়ামত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দাওয়াতকে সকল শ্রেণির উম্মত পর্যন্ত পৌঁছানোর কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এতদপ্রসঙ্গে ইবনে যায়েদ (রহ.) বলেন : এই আয়াত থেকে এ কথাও জানা গেল যে, যে ব্যক্তি পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইত্তেবা ও অনুসরণের দাবি করে, তার অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দাওয়াতকে প্রতিষ্ঠিত করে, প্রতিটি সমাজে ও জনপদে পৌঁছে দেয়া এবং আল কুরআনের শিক্ষাকে ব্যাপকতর করা। এতে করে বিশ্বময় ইসলামী জীবনব্যবস্থার জোয়ার বইতে থাকবে। যার প্রতিশ্রুতি মহান আল্লাহ পাক প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : (ক) তিনিই সেই পরম সত্তা, যিনি স্বীয় রাসূলকে হেদায়াত এবং সত্যা দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তা সকল ভ্রান্ত দ্বীনের ওপর বিজয় অর্জন করে। যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ৩৩)।

(খ) তিনিই স্বীয় রাসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের ওপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠিাতারূপে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আল ফাতহ: আয়াত ২৮)।
(গ) তিনিই তাঁর রাসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন যাতে একে সব ধর্মের ওপর প্রবল করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা সফ : আয়াত ৯)।
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেনই। আমিন!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ